মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার বরিশাল টস হেরে ২০ ওভারে তোলে ১২৯ রান। ঢাকায় পা রাখার ২৪ ঘণ্টা পরই ম্যাচ খেলতে নেমে যাওয়া ক্রিস গেইল করেন দলের সর্বোচ্চ ৩৬ রান।
ঢাকার হয়ে আন্দ্রে রাসেল নেন দুই উইকেট, শুভাগত ও মাহমুদউল্লাহ একটি করে। তবে আসল কাজ তাদের তখনও বাকি।
রান তাড়ায় আলজারি জোসেফ ও বিপিএল অভিষিক্ত শফিকুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে ঢাকা ১০ রানে হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট।
সেই দলই আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় মাহমুদউল্লাহ ও শুভাগতর ব্যাটে। শুভাগত করেন ২৫ বলে ২৯ রান। দলকে জয়ের একদম কাছে নিয়ে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ৪৭ বলে ৪৭ রান করে। রাসেল অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ২৯ রান করে। ঢাকা জিতে যায় ১৫ বল বাকি রেখে।
টুর্নামেন্টের আগের ম্যাচগুলির ধারা অনুসরণ করে দিনের প্রথম ম্যাচে উইকেট এ দিনও খানিকটা মন্থর। বরিশালের দুই ওপেনার সৈকত আলি ও নাজমুল হোসেন শান্ত শুরু করেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে।
তবে ২১ রানের জুটি শেষ হয় আগ্রাসী শটেই। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শুভাগতকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ভারসাম্য হারান শান্ত। তাতে জোর হয়নি মারে, লং অফে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নঈম শেখ।
সৈকত আলি ১৩ রানে তামিম ইকবালের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও যেতে পারেনি বেশি দূর। তাকে ১৮ রানে থামান এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা হাসান মুরাদ।
পঞ্চম ওভারে যখন আন্দ্রে রাসেল এলবিডব্লিউ করে দিলেন তৌহিদ হৃদয়কে, বরিশালের রান তখন ৩ উইকেটে ২৩।
দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের কারণেই হয়তো বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদকে তখন আর বোলিং দেননি মাহমুদউল্লাহ, আরেক বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি তো বোলিংই পাননি গোটা ইনিংসে।
সাকিবকে (১৯ বলে ২৩) ফিরিয়ে ৩৭ রানের এই জুটি থামান রুবেল। কোভিড নেগেটিভ হয়ে মাঠে ফিরে নুরুল হাসান সোহান বিলিয়ে আসেন উইকেট।
রানের গতিতে কিছুটা দম দেন এরপর গেইল। মাহমুদউল্লাহর এক ওভারে দুটি চার ও একটি ছয় মারেন তিনি। চার দুটিতেই অবশ্য ক্যাচের সম্ভাবনা ছিল, কাজে লাগাতে পারেননি হাসান মুরাদ।
তবে থিতু হয়েও ইনিংসটিকে বড় করতে পারেননি গেইল। উদানার স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি শর্ট থার্ডম্যানে। তার ৩০ বলের ইনিংসে চার ৩টি, ছক্কা ২টি।
উদানা ওই ওভারে ফেরান জিয়াউর রহমানকেও। এরপর দলকে টানেন ডোয়াইন ব্রাভো। ৩ চার ও ১ ছক্কায় তার ২৬ বলে ৩৩ রানের ইনিংসেই ১৩০ রানের কাছাকাছি যেতে পারে বরিশাল।
ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই শফিকুলকে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে দৃষ্টিকটুভাবে বোল্ড হন আগের দুই ম্যাচে ফিফটি করা তামিম।
দ্বিতীয় ওভারে জোসেফের দারুণ দুটি ডেলিভারি ফেরায় মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও জহুরুল ইসলামকে। পরের ওভারে শফিকুলের ভেতরে ঢোকা ফুল লেংথ বলে বোল্ড মোহাম্মদ শাহজাদ।
বরিশাল বলা যায় তখনই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছে। তাদের মুঠো থেকে ম্যাচ আস্তে আস্তে বের করে আনেন শুভাগত ও মাহমুদউল্লাহ।
চাপ সরিয়ে ফেলার পালা শুরু শুভাগতর ব্যাটে। জোসেফের বলে দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেন শুভাগত। শফিকুলের করা পঞ্চম ওভার থেকে আসে ১৮ রান। মাহমুদউল্লাহ আরেক পাশ থেকে এক-দুই করে নিয়ে সঙ্গ দিয়ে যান।
৬২ বলে ৬৯ রানের এই জুটি ভাঙেন ডোয়াইন ব্রাভো। স্লোয়ার বল উড়িয়ে মেরে তাইজুল ইসলামের হাতে ধরা পড়েন শুভাগত।
ম্যাচের ভাগ্য তখনও বলা যায় দোদুল্যমান। সেটিই ঢাকার দিকে হেলে পড়ে পরের জুটিতে। ২৫ বলে ৫০ রান যোগ করেন রাসেল ও মাহমুদউল্লাহ।
রাসেল উইকেটে যাওয়ার পর থেকে খেলতে থাকেন স্বভাবজাত শট। অনেকটা সময় নিজেকে সংবরন করে রাখা মাহমুদউল্লাহও সুযোগ বুঝে খেলেন কিছু শট। তাতে গড়া হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।
সাকিবকে বিশাল এক ছক্কায় উড়িয়ে দুই দলের স্কোর সমান করে দেন মাহমুদউল্লাহ। পরের বলেই ঢাকা অধিনায়ককে ফিরিয়ে সাকিব পূর্ণ করেন টি-টোয়েন্টিতে ৪০০ উইকেট।
পরে সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিকতা সারেন ইসুরু উদানা। জয় সঙ্গে নিয়ে ফিরতে না পারলেও দারুণ খেলে ম্যাচের সেরা মাহমুদউল্লাহই। সঙ্গে তার প্রাপ্তি, তৃতীয় ম্যাচে প্রথম জয়ের স্বস্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল : ২০ ওভারে ১২৯/৮ (সৈকত ১৫, শান্ত ৫, সাকিব ২৩, হৃদয় ০, গেইল ৩৬, সোহান ১, ব্রাভো ৩৩*, জিয়াউর ১, জোসেফ ৪, তাইজুল ৫*;রুবেল ৩-০-৮-১, শুভাগত ৪-০-১৯-১, মুরাদ ২-০-১২-১, রাসেল ৪-০-২৭-২, উদানা ৪-০-২৯-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৩১-১)
মিনিস্টার ঢাকা: ১৭.৩ ওভারে ১৩০/৬ (তামিম ০, শাহজাদ ৫, নাঈম ৪, জহুরুল ০, মাহমুদউল্লাহ ৪৭, শুভাগত ২৯, রাসেল ৩১*, উদানা ১*; শফিকুল ৩-১-২০-২, জোসেফ ৩-০-৩৪-২, সাকিব ৩.৩-০-২১-১, ব্রাভো ৩-০-১৬-১, তাইজুল ৪-০-২৯-০, জিয়াউর ১-০-৬-০)
ফল: মিনিস্টার ঢাকা ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদউল্লাহ