অবিশ্বাস্য শেষের রোমাঞ্চের পর উইন্ডিজের ১ রানের হার

‘গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ত্রিকেট’-অতি ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া একটি কথা। তবু কখনও কখনও এটির চেয়ে উপযুক্ত কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিন! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি যেমন। রোমারিও শেফার্ড ও আকিল হোসেন যখন জুটি বাঁধলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন ম্যাচ থেকেই ছিটকে গেছে প্রায়। নবম উইকেটে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে অসাধারণ জুটি গড়ে দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গেলেন দুজন। কিন্তু পারলেন না অল্পের জন্য।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2022, 04:48 AM
Updated : 24 Jan 2022, 04:48 AM

সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় স্রেফ ১ রানে। ৫ ম্যাচ সিরিজে এখন ১-১ সমতা।

প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং ব্যর্থতা পেছনে ফেলে বারবাডোজে রোববার ২০ ওভারে ১৭১ রান তোলে ইংল্যান্ড। রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস একসময় ছিল ধ্বংসস্তুপ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষের ঝড় ও শেষ বলের ছক্কার পর শেষ পর্যন্ত তারা থমকে দাঁড়ায় ১ রান পেছনে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১ রানের ব্যবধানে ১৯তম জয় এটি, ইংল্যান্ডের মাত্র দ্বিতীয়।

সাতে নামা শেফার্ড ও দশে নামা আকিল যখন উইকেটে একসঙ্গে হন, জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখন লাগে ২৯ বলে ৭৪ রান। যাদের মূল কাজ বোলিং, তারাই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোড়।

শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২৮ রানের। ইংলিশ পেসার সাকিব মাহমুদ প্রথম বলটি করেন ওয়াইড, পরেরটিতে দেননি রান। এরপর আকিলের ব্যাটে টানা দুটি চার। পরের বল আবার ওয়াইড। শেষ তিন বলে আকিল চোখধাঁধানো সব শটে মারেন টানা তিন ছক্কা।

এই সময়টায় আরেকটি ওয়াইড বা নো হলেও বদলে যেত চিত্র। কিন্তু তা আর হয়নি। শেষ ৩ বলে ছক্কা মেরেও আকিল ম্যাচ শেষে হতাশায় নুইয়ে পড়েন ক্রিজে।

নবম উইকেটে তারা গড়েন ২৯ বলে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।

অবিশ্বাস্যভাবে এটিও নবম জুটির বিশ্বরেকর্ড নয়। আইসিসি সব সহযোগী দল টি-টোয়েন্টি মর্যাদা পাওয়ার পর বিচিত্র সব রেকর্ড হচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে। নবম জুটিতে যেমন শতরানের জুটিও আছে! গত জুলাইয়ে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে বেলজিয়াম ১৪ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর ১৩২ রানের জুটি গড়েন সাবের জাখিল ও সাকলাইন আলি।

শেফার্ড ও আকিলের জুটি জায়গা করে নিয়েছে রেকর্ডের দুইয়ে।

কেনসিংটন ওভালে টানা দ্বিতীয় টস জিসে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান কাইরন পোলার্ড। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই বোলিং নায়ক শেলডন কটরেল ও জেসন হোল্ডার এ দিনও খারাপ বোলিং করেননি। তবে নতুন বলে উইকেট এনে দিতে পারেননি দুজন।

কিছুটা সাবধানী শুরু করে দুই ইংলিশ ওপেনার টম ব্যান্টন ও জেসন রয় ৫ ওভারে তোলেন ৩২ রান। ষষ্ঠ ওভারে ব্যান্টনকে (২২ বলে ২৫) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। ওই ওভারেই বাঁহাতি স্পিনার বিদায় করে দেন তিনে নামা জেমস ভিন্সকেও।

তৃতীয় উইকেটে রয় ও মইন আলির দারুণ জুটি পাল্টা আক্রমণ করে ইংল্যান্ড। তৃতীয় উইকেটে ৩৮ বলে ৬১ রান যোগ করেন দুজন।

রয়ের রান এক পর্যায়ে ছিল ২৩ বলে ১৭। এরপর অ্যালেনের এক ওভারে তিন চার ও দুই ছক্কায় নেন তিনি ২৪ রান।

৩১ বলে ৪৫ রান করা রয়সকে ফিরিয়ে এই জুট ভাঙেন শেফার্ড। কাইরন পোলার্ডকে ছক্কা মারার পরের বলে আউট হয়ে যান মইন আলিও (২৪ বলে ৩১)।

এরপর স্যাম বিলিংস ও ওয়েন মর্গ্যানরা ব্যর্থ আবারও। শেষ দিকে আগের ম্যাচের মতো আবারও ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন পেসার ক্রিস জর্ডান। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২৭। ইংল্যান্ড তাতে পার হতে পারে ১৭০।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ রান তাড়ায় ধুঁকতে থাকে শুরু থেকেই। সিরিজর প্রথম ম্যাচে ফিফটি করা ব্র্যান্ডন কিংকে এবার ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বিদায় করেন রিস টপলি। তৃতীয় ওভারে টপলি নিজের বলে দুর্দান্ড ফিল্ডিংয়ে রান আউট করে দেন শেই হোপকে।

অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা মইন আলি। ছবি: ইংল্যান্ড ক্রিকেট।

নিকোলাস পুরান ও ড্যারেন ব্রাভো তৃতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে জিইয়ে রাখেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আসা। তবে এরপরই নামে বড় ধস।

পুরানকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মইন। লেগ স্পিনার আদিল রশিদ নিজের পরপর দুই ওভারে ফেরান পোলার্ড ও ব্রাভোকে। মইন এরপ নিজের বলে ক্যাচ নিয়ে ফেরান জেসন হোল্ডারকে।

১৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস তখন ধ্বংসস্তুপ।

একটু পর অ্যালেনও যখন আউট হলেন একটি ছক্কা মেরেই, ক্যারিবিয়ানদের পরাজয় মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার।

সেখান থেকেই শেফার্ড ও আকিলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং প্রদর্শনী। শেষ ৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ৬১ রান, জর্ডানের এক ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন দুই ব্যাটসম্যান। ওই ওভার থেকে আসে ২৩ রান, পরের ওভারে টপলি দেন ৮।

এরপর শেষ ওভারের সেই রোমাঞ্চ। হ্যাটট্রিক ছক্কার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হতাশা একটুর জন্য না পারার।

৫ ছক্কায় ২৮ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন শেফার্ড, ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১৬ বলে ৪৪ আকিল। দুজনেরই যা ক্যারিয়ার সেরা।

৩১ রানের সঙ্গে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা ইংলিশ অলরাউন্ডার মইন আলি। তবে শেষটায় রয়ে যায় শেফার্ড ও আকিলের অভাবনীয় ব্যাটিংয়ের রেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭১/৮ (রয় ৪৫, ব্যান্টন ২৫, ভিন্স ৪, মইন ৩১, বিলিংস ৫, মর্গ্যান ১৩, জর্ডান ২৭, ডসন ৪, রশিদ ২*, সাকিব ৭*; কটরেল ৩-০-২৩-১, হোল্ডার ৪-০-২৫-২, আকিল ৩-০-১৫-১, অ্যালেন ৪-০-৫০-২, পোলার্ড ৪-০-৩২-১ শেফার্ড ২-০-২৬-১)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৭০/৮ (কিং ০, হোপ ২, পুরান ২৪, ব্রাভো ২৩, পোলার্ড ১, হোল্ডার ১, শেফার্ড ৪৪*, স্মিথ ৭, অ্যালেন ১২, আকিল ৪৪*; টপলি ৪-০-১৮-১, সাকিব ৪-০-৪৫-০, জর্ডান ৩-০-৩৯-০, রশিদ ৪-১-২৪-২, মইন ৪-০-২৪-৩, ডসন ১-০-১৩-০)।

ফল: ইংল্যান্ড ১ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মইন আলি।