তামিমের ‘সমস্যা’ জানতে কথা বলবেন খালেদ মাহমুদ

তামিম ইকবালের অনুরোধ মেনে তাকে ফেরাতে জোর করবেন না বলে জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। তবে এই অধ্যায়ের এখানেই শেষ দেখছেন না খালেদ মাহমুদ। তিনি এখনও অবকাশ দেখছেন আলোচনার। তামিমের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করবেন বিসিবির এই পরিচালক ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 02:12 PM
Updated : 23 Jan 2022, 02:12 PM

বিসিবি সভাপতি শনিবার বিপিএলের খেলা শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, তামিম আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে চান না। ফেরার জন্য জোর না করতেও তামিম অনুরোধ করেছেন বলে জানান বিসির প্রধান।

গত ১ সেপ্টেম্বর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর জাতীয় দলে তামিমের টি-টোয়েন্টি ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা এরকম ছিলই। বিসিবি সভাপতির বক্তব্যের পর তা নতুন মাত্রা পায়।

মিরপুরে রোববার বিপিএল দল ফরচুন বরিশালের অনুশীলনে ফাঁকে সংবাদ সম্মেলনে এই দলের কোচ ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বললেন, তার কাছে বিস্ময় হয়ে এসেছে তামিমের সিদ্ধান্ত।

“একটু তো অবাকই আমি। নিউ জিল্যান্ড যাওয়ার আগেও আমি তামিমের সঙ্গে কথা বলেছিলাম যে, ‘কেন খেলবি না বা কারণ কী।’ তখন আসলে এত কথা হয়নি। আমি বলেছিলাম, ‘আমাকে ফিরে আসতে দে, তারপর কথা বলব।’ এত তাড়াতাড়ি… তামিমের সঙ্গে আমার কথাও হয়নি, তার আগেই পাপন ভাই (নাজমুল হাসান) দেখলাম কালকে বলে দিয়েছেন।”

“এটা তো প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার অবশ্যই। ওর মতো আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটার কেউ তৈরি আছে, তা না। তার পরও, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে যদি না চায়, তাকে তো জোর করা যাবে না। আমাদের সামনে এগোতেই হবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট তো বসে থাকবে না।”

তবে সামনে তাকানোর কথা বললেও খানিকটা পেছনে ঘুরেও চান খালেদ মাহমুদ। সময়-সুযোগ করে কথা বলতে চান তিনি তামিমের সঙ্গে। এখানে টেনে আনলেন তিনি সাকিব আল হাসানের প্রসঙ্গও।

“অবশ্যই (তামিমের সঙ্গে কথা বলব)… এটা তো আমার দায়িত্বই। আমি তো চাইব, বাংলাদেশের সেরা দলটা তিন ফরম্যাটেই খেলুক। সাকিব খেলছে না বা তামিম খেলছে না, এটা তো আমাদের জন্য… আমি জানি, খেলার শেষের দিকেই চলে আসছে ওরা সবাই। হয়তোবা আর ২-৩ বছর খেলবে। আমি আগামী একটা বছরে খুব মনোযোগ দিতে চাই, যেহেতু বাংলাদেশের অনেক খেলা আছে এই বছর।”

“সাকিবের সঙ্গেও এর মধ্যে কথা বলেছি আমি যে, কেননা এই বছর আমরা পুরো ক্রিকেট খেলি। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অনেক পয়েন্ট আছে, ওয়ানডের পয়েন্ট আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওদের হাত ধরে আমরা একটা পজিশনে আসছি, এর থেকে কেন ভালো হব না! তামিমের সঙ্গে কালকে খেলা আছে (বিপিএলে)। খেলা শেষে পারলে একবার কথা বলব যে, আসলে ওর সমস্যাটা কোথায়।”

খালেদ মাহমুদ কথায় ইঙ্গিত, দলে বিভেদের রেখা জেগে উঠেছে। সেই রেখা মুছে ফেলতে কাজ করতে চান তিনি।

“মনোমালিন্যের ব্যাপার যেটা আছে, আমার কাজ হচ্ছে, যেসব ছোটখাটো সমস্যা আছে দলের মধ‍্যে, সেগুলো সমাধান করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এগুলো হবেই, ইগোর ব্যাপার থাকে, অনেক সময় হয়ে যায়। অনেক সময় ব্যাখ্যায় ছোটখাটো ভুল হয়। সেটাকে ঠিক করার চেষ্টা করব।”

“শুনেছি অনেক কথাই। তবে আমি বুঝতে পারছি, একটা দূরত্ব আছে কোথাও না কোথাও। সেই দূরত্ব ঠিক করা দায়িত্বই আমার। যেটা বললাম, আমরা এই বছরটা খেলতে চাই আমাদের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে। ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।”

সেরা দল নিয়ে খেলার চাওয়া পূরণে বড় সংশয়টা অবশ্য দলের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেটারকে নিয়েই। সম্প্রতি নিউ জিল্যান্ড সফরে টেস্ট খেলতে যাননি সাকিব, গত বছর শ্রীলঙ্কা সফরেও যাননি টেস্ট সিরিজ খেলতে। ২০১৭ সালে তাকে পাওয়া যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। এই বছর বাংলাদেশের সফর আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ডে। দেশের মাঠে খেলা তো আছেই।

সাকিব এর মধ্যেই নাম লিখিয়েছেন আইপিএলের নিলামে। দল পেলে ভারতের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে তিনি আবার অংশ নিতে চাইতে পারেন। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে যাওয়ার তাড়না তো আছেই। সব মিলিয়ে সাকিবকে কতটা পাওয়া যাবে, এটি বড় প্রশ্ন।

খালেদ মাহমুদের চোখে সম্ভাব্য একটি সমাধান আছে। কম গুরুত্বপূর্ণ সফর বা সিরিজে সাকিবকে বিরতি দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি।

“সাকিবের ব্যাপারটি যদি আমরা ওইভাবে চিন্তা করি, সে কিন্তু আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট খেলে। বায়ো-বাবল ফ্যাক্টর ওর জন্য অনেক বেশি হয়। সাকিব তিন ফরম্যাটে খেলুক, এটা আমরা সবাই চাই। তার পরও, ওর সঙ্গে যদি বসি ও একটু কথা বলি যে আমাদের যে সফরগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ কিংবা ওয়ানডে লিগের পয়েন্ট নেই, সেগুলোতে যদি বিরতি দেই, তাহলে সমস্যা নেই। মূল ম্যাচগুলোতে খেলা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

“সাকিবের সঙ্গে আমাদের বসতে হবে। কোনো সময়ই ও বলেনি যে খেলবে না। ‘এই সিরিজটা খেলব না’ বা ‘এই ম‍্যাচটা খেলব না’, এরকম বলেছে। আমার মনে হয়, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব আছে। সেটা যদি আমরা ঠিক করে ফেলি, আমার ধারণা আমরা সাকিবকে তিন সংস্করণেই পাব।”