সিলেটের ৯৬ রান তাড়ায় কষ্টের জয় কুমিল্লার

আকাশ ঢাকা ধূসর মেঘে, চারপাশ অনেকটা ধোঁয়াটে। ভরদুপুরেই তাই জ্বলে উঠল ফ্লাডলাইট। তাতে মাঠের আঁধার কাটল বটে। কিন্তু দুই দলের ব্যাটিংয়ের আঁধার কাটাবেন কে! ২২ গজে জ্বলে উঠতে পারলেন না একজন ব্যাটসম্যানও। যেন প্রতিযোগিতা, কে কত খারাপ ব্যাটিং করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিযোগিতায় ‘হেরে’ কোনোরকমে ম্যাচ জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2022, 08:38 AM
Updated : 22 Jan 2022, 10:50 AM

বিপিএলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেট সানারাইজার্সের ৯৬ রানের পুঁজিতেই লড়াই হলো তুমুল। সহজ রান তাড়ায়ও হারের শঙ্কা জাগিয়ে পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয় স্রেফ ২ উইকেটে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরের মতোই ছিল মন্থর। বল ব্যাটে আসেনি ঠিকমতো। আবহাওয়াও খানিকটা বোলিং উপযোগী। কিন্তু কোনোমতেই তা এত কম রান হওয়ার মতো নয়। দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই মূলত ডেকে আনেন নিজেদের পতন।

সিলেট কলিন ইনগ্রামের ২০ রান ছিল দুই দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ।

নতুন বলের অফ স্পিনে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ১৬ রান করে ম্যাচের সেরা কুমিল্লার নাহিদুল ইসলাম। পাশাপাশি উইকেট কাজে লাগিয়ে দারুণ বোলিং করেন তার সতীর্থ মুস্তাফিজুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, তানভির ইসলাম, সিলেটের মোসাদ্দেক হোসেন, সোহাগ গাজীরা। তবে তাদের সাফল্যে বড় অবদান ব্যাটসম্যানদর ব্যর্থতারও।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে কুমিল্লা প্রথম ওভার থেকেই চেপে ধরে সিলেটকে। নাহিদুল ও মুস্তাফিজ আঁটসাঁট বোলিংয়ে আটকে রাখেন ব্যাটসম্যানদের। তৃতীয় ওভারে উইকেটও এনে দেন নাহিদুল। স্কয়ার কাট করার চেষ্টায় ক্রিজে পড়ে যাওয়ার আগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন এনামুল (৯ বলে ৩)।

আরেক ওপেনার ইনগ্রাম সাবধানী শুরুর পর হাত খোলার চেষ্টা করেন। তানভিরকে সুইপ করে চার মারার পর টানা দুই বলে চার-ছক্কা মারেন নাহিদুলকে। তবে বিপিএল অভিষেকে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। শহিদুল ইসলামের শর্ট বল পুল করে ক্যাচ দেন তিনি ২১ বলে ২০ করে।

সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই বাজে শটে নাহিদুলকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ মিঠুন (৭ বলে ৫)। দলকে উদ্ধার করতে পারেননি অধিনায়ক মোসাদ্দেকও (৬ বলে ৩)।

আরেক অভিজ্ঞ অলক কাপালী ১৪ বলে ৬ করে বিদায় নেন রান আউট হয়ে। বেশ কিছুক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রাখা রবি বোপারা পারেননি দলকে শেষ পর্যন্ত টানতে। অনিয়মিত স্পিনার মুমিনুল হককে পেয়ে তাকে হঠাৎ পেয়ে বসে ছক্কার নেশা। সীমানায় ফাফ দু প্লেসির হাতে ধরা পড়েন ইংলিশ অলরাউন্ডার ১৯ বলে ১৭ করে।

শেষ দিকে ঝড় তোলার সামর্থ্য আছে যার, সেই মুক্তার আলিকে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে শূন্যতেই ফেরান মুস্তাফিজ। দ্বিতীয় স্পেলে এসে রাউন্ড দা উইকেটে করা ডেলিভারি স্টাম্পের বাইরে থেকে অনেকটা ভেতরে ঢুকে উড়িয়ে দেয় বেলস।

কলিন ইনগ্রামের ২০ রানই সিলেটের সর্বোচ্চ। ছবি: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

পরের দিকের সোহাগ কিছুক্ষণ উইকেটে থেকে ১৯ বলে ১২ রান করেন। দাঁড়াতে পারেননি আর তেমন কেউ। সিলেট তাই না পেরেছে ১০০ ছুঁতে, না খেলতে পেরেছে পুরো ২০ ওভার।

কুমিল্লার রান তাড়ার শুরুতে ছিল ব্যাটিং নিয়ে আশার ইঙ্গিত। ইনিংসের প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদকে ছক্কায় ওড়ান ক্যামেরন দেলপোর্ট। তবে ওই আভাস রূপ পায়নি বাস্তবতার।

বিপিএল অভিষেকে ফাফ দু প্লেসির প্রাপ্তি কেবল ২ রান। পিচ করে খানিকটা থমকে যাওয়া বলে তিনি ফিরতি ক্যাচ দেন সোহাগকে। দেলপোর্ট রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট উপহার দেন সোহাগকে।

দুই অভিজ্ঞ মুমিনুল ও ইমরুল কায়েসের শুরুটা ছিল দারুণ। উইকেটে যাওয়ার পরপরই সোহাগকে চার মারেন মুমিনুল, একটু পরে মারেন ছক্কা। ইমরুলও উইকেটে গিয়ে তিন বলের মধ্যে চার-ছক্কা মেরে দেন সোহাগকে।

এই দুজনকেই ফেরান সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক। মুমিনুল (১০ বলে ১৫) আউট হন তেঁড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টায়, ইমরুল (৪ বলে ১০) বিদায় নেন শর্ট কাভারে রবি বোপারার দারুণ ক্যাচে।

এরপর বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু যখন দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন আরিফুল হককে, সিলেটের সম্ভাবনা জেড়ে ওঠে ভালোভাবেই। কুমিল্লার রান তখন একাদশ ওভারে ৫ উইকেটে ৫৫।

ছোট রানের ম্যাচে এরপর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে নাহিদুলের ১৬ ও আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাতের ১৮ রানের ইনিংস। নাজমুল অপু যদিও চেষ্টা করে যান সিলেটকে ম্যাচে জিইয়ে রাখার। নাহিদুল ও শহিদুলকে ফেরার নিজের পরপর দুই ওভারে। তবে শেষ পর্যন্ত স্বল্প ওই পুঁজি যথেষ্ট হয়নি জয়ের জন্য।

শেষদিকে কেসরিক উইলিয়ামসের টানা দুটি ওয়াইড ডেলিভারিতে দুই উইকেটে জিতে যায় কুমিল্লা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সানরাইজার্স: ১৯.১ ওভারে ৯৬ (এনামুল ৩, ইনগ্রাম ২০, মিঠুন ৫, বোপারা ১৭, মোসাদ্দেক ৩, অলক ৬, সোহাগ ১২, মুক্তার ০, উইলিয়ামস ৯, তাসকিন ২, নাজমুল অপু ০*; নাহিদুল ৪-০-২০-২, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, তানভির ৪-১-১০-১, শহিদুল ৩.১-০-১৫-২, মুমিনুল ২-০-১৪-১, আরিফুল ১-০-১১-০, করিম ১-০-৭-১)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.৪ ওভারে ৯৭/৮ (দেলপোর্ট ১৬, দু প্লেসি ২, মুমিনুল ১৫, ইমরুল ১০, নাহিদুল ১৬, আরিফুল ৪, করিম ১৮, অঙ্কন ৯*, শহিদুল ১, তানভির ৩*; তাসকিন ৪-০-১৯-১, সোহাগ ৪-০-৩০-২, মোসাদ্দেক ৪-০-১০-২, উইলিয়ামস ১.৪-০-১২-০, নাজমুল অপু ৪-০-১৭-৩, অলক ১-০-৯-০)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ২ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাহিদুল ইসলাম।