মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ৫ উইকেটে জিতেছে মুশফিকুর রহিমের দল। ঢাকার ১৮৩ রান ৬ বল বাকি থাকতেই ছাপিয়ে গেছে খুলনা।
রান তাড়ায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় এক ছন্দে খেলে গেছে খুলনা। ঝড়ের শুরুটা ফ্লেচারের ব্যাটে, সেটা টেনে নিয়েছেন রনি। শেষ করেছেন থিসারা। ১৮ বলে ৬ চারে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকেন লঙ্কান এই অলরাউন্ডার। তিনে নেমে ৪২ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬১ রান করেন রনি। শুরুতে সুর বেঁধে দেওয়া ফ্লেচার রনির সমান বাউন্ডারিতে ২৩ বলে করেন ৪৫ রান।
শাহজাদের ঝড়ো ইনিংসের পরও ঢাকা শুরুতে খুব বেশি রান করতে পারেনি। দলটির সংগ্রহ ১৮০ ছাড়ায় মূলত শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। ২০ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৩৯ রান করেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এতে শেষ ১০ ওভারে ১০৬ রান তোলে তারা। শুরুতে ৮ চারে ২৭ বলে ৪২ রানের ইনিংসে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কিপার-ব্যাটসম্যান শাহজাদ। ৪২ বলে ৭ চারে তামিম করেন ৫০ রান।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শাহজাদ ও তামিমের ব্যাটে শুরুটা ভালো করে ঢাকা। অফ স্পিনার মেহেদি হাসানের করা ম্যাচের প্রথম বলে মিড অফের ফিল্ডারের ওপর দিয়ে চার মেরে শুরু করেন শাহজাদ। শুরুতে একটু অস্বস্তি ছিল তামিমের, তবে নাভিন-উল-হককে চমৎকার কাভার ড্রাইভে তিনিও রানের খাতা খোলেন চার মেরে।
মেহেদির পরের ওভারে টানা তিন চারে ডানা মেলেন শাহজাদ। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৫৬ রান তোলে ঢাকা। পঞ্চাশের পথে থাকা শাহজাদকে চমৎকার ফিল্ডিংয়ে থামান তানজিদ হাসান। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে তার সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে যান আফগান ওপেনার। ভাঙে ৬৮ রানের জুটি।
নেমেই ছক্কায় শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে অন্য প্রান্তে একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি।
থিসারা পেরেরার স্লোয়ার ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে শেষ হয় মোহাম্মদ নাঈম শেখের ইনিংস। সিঙ্গেল নিয়ে রানের খাতা খোলা আন্দ্রে রাসেল পরের বলেই মারেন ছক্কা। তবে অদ্ভূত এক রান আউটে দ্রুতই ফিরেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
শর্ট থার্ড ম্যানে পাঠিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন, বিপজ্জনক প্রান্তে ছুটছিলেন মাহমুদউল্লাহ। রনি তালুকদারের থ্রো বেলস এলোমেলো করে দেওয়ার সময় ভেতরেই ছিলেন তিনি। অন্য প্রান্তে রাসেল ছিলেন আয়েশী, ভাবতেও পারেননি, স্টাম্পে লেগে বল সোজা এসে তার প্রান্তের বেলস ফেলে দিবে! রান আউট হয়ে ফিরে যান ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
বেশিদূর যেতে পারেননি জহুরুল ইসলামও। শেষের দিকে এক ছক্কায় ৯ রান করেন শুভাগত। ২ বলে ৬ রান করেন ইসুরু উদানা। এর আগে সীমানায় তানজিদের দুর্দান্ত এক ক্যাচে শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ইনিংস।
খুলনার পেসার কামরুল নেন ৩ উইকেট, তবে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে খরুচে। ৪ ওভারে দেন ৪৫ রান।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই ভাঙে খুলনার উদ্বোধনী জুটি। তানজিদকে বোল্ড করে দেন শুভাগত। তবে সেই ধাক্কাকে পেয়ে বসতে দেয়নি খুলনা।
অফ স্পিনার শুভাগতকেই ছক্কার পর আরাফাত সানিকে দুই চার মারেন রনি তালুকদার। রুবেল হোসেনের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন ফ্লেচার। চারটি চারের সঙ্গে এক ছক্কায় ওভারে নেন ২২ রান। টানা শট খেলতে থাকা ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে থামান রাসেল। এই অলরাউন্ডারের বলে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় ফ্লেচারের প্রায় দুইশ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস। ভাঙে ৪০ বল স্থায়ী ৭২ রানের জুটি।
নিজের মতো করে খেলে যেতে থাকেন রনি। আরেক প্রান্তে টিকতে পারেননি মুশফিক। ইবাদত হোসেনের শর্ট বল লেগে ঘুরানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন কিপারের গ্লাভসে। খুলনা অধিনায়ক ৮ বলে করেন ৬।
পরে ফিরেও ভালো করতে পারেননি রুবেল। নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই বলে রনির ব্যাটে হজম করেন দুটি চার। তাকেই পরে চার মারার পর দুই রান নিয়ে ফিফটি স্পর্শ করেন রনি।
তার বিদায়ের কোনো প্রভাব পড়তে দেননি থিসারা। ক্রিজে গিয়েই চড়াও হন বোলারদের ওপর। কোনো দরকার না থাকলেও রাসেলকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং অফে শুভাগতর হাতে ধরা পড়েন ইয়াসির আলি। তবে বাকিটা অনায়াসেই সারেন থিসারা ও মেহেদি। রাসেলকে ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচ শেষ করা মেহেদি ৫ বলে করেন ১২।
প্রথম ওভারে উইকেট পেলেও আর বল হাতে পাননি শুভাগত। পেসাররা খরুচে বোলিং করলেও বল হাতে নেননি মাহমুদউল্লাহ।
দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর চমৎকার ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন রনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা: ২০ ওভারে ১৮৩/৬ (শাহজাদ ৪২ , তামিম ৫০, নাঈম ৯, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, জহুরুল ১২, শুভাগত ৯*, উদানা ৬*; মেহেদি ৪-০-২৪-০, নাভিন ৪-০-৩৮-০, কামরুল ৪-০-৪৫-৩, ফরহাদ ৪-০-৪৩-০, থিসারা ৪-০-২৭-১)
খুলনা টাইগার্স: ১৯ ওভারে ১৮৬/৫ (তানজিদ ২, ফ্লেচার ৪৫, রনি ৬১, মুশফিক ৬, ইয়াসির ১৩, থিসারা ৩৬*, মেহেদি ১২* ; আরাফাত ৪-০-২৮-০, শুভাগত ১-০-৯-১, রুবেল ৩-০-৪২-০, উদানা ৪-০-৩৭-০, রাসেল ৪-০-৪২-২, ইবাদত ৩-০-২৭-২)
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রনি তালুকদার