বিপিএলের ফেরা
কোভিড মহামারির কারণে লম্বা বিরতির পর এবার হতে যাচ্ছে বিপিএলের অষ্টম আসর। সবশেষ হয়েছিল ২০১৯-২০ আসর, যেটির ফাইনাল হয় ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি। ওই বছরই ডিসেম্বরে শুধু দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছিল বিসিবি। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ প্রথমবারের মতো হয় টি-টোয়েন্টি সংস্করণে।
আনুষ্ঠানিক নাম
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আয়োজনের অংশ হিসেবে টুর্নামেন্টের নাম বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২। টুর্নামেন্টের মূল স্পন্সর বিবিএস কেবলস, সহ-স্পন্সর ওয়ালটন।
টুর্নামেন্টের দল
আগের বেশ কবারের মতো এবারও ধারাবাহিকতা নেই দলের। ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতিতে অবশ্য এবার ফিরেছে টুর্নামেন্ট। এবারের আসরের ৬ দল- মিনিস্টার ঢাকা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ফরচুন বরিশাল, খুলনা টাইগার্স, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও সিলেট সানরাইজার্স।
ক্রিকেটার বাছাই
প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগে সর্বোচ্চ তিনজন বিদেশি ও একজন স্থানীয় ক্রিকেটার দলে নেওয়ার সুযোগ ছিল প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির। প্লেয়ার্স ড্রাফট অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ ডিসেম্বর। ড্রাফট শেষে জায়গা ফাঁকা ছিল প্রতিটি দলে। ড্রাফটের পরও তাই দল পেয়েছেন ক্রিকেটারদের অনেকে।
৬ অধিনায়ক
কোনো নতুন অধিনায়ক নেই এবারের বিপিএলে। সাকিব আল হাসান প্রথমবারের মতো খেলবেন বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজিতে, দলের অধিনায়কও তিনি। প্রথমবারের মতো ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলবেন মাহমুদউল্লাহ, দলের নেতৃত্বেও থাকছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। পুরনো দল খুলনা টাইগার্সের ভার আবার থাকছে মুশফিকুর রহিমের কাঁধে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দায়িত্বে তাদের ২০১৯ আসরের শিরোপাজয়ী অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
দ্বিতীয়বারের মতো সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজির অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। আগে রাজশাহী কিংসের অধিনায়কত্ব করা মেহেদী হাসান মিরাজ এবার পেয়েছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের দায়িত্ব।
বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রথমবার এই টুর্নামেন্টে খেলবেন অধিনায়কত্ব ছাড়া।
কোচ যারা
এবারের আসরে তিনটি দলের কোচ দেশি, তিনটি বিদেশি। দেশের কোচদের মধ্যে বিপিএলে সফলতম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবারও আছেন কুমিল্লার দায়িত্বে। আগের আসরগুলোয় ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ হিসেবে কাজ করা খালেদ মাহমুদ এবার কোচ বরিশালের। ঢাকার দায়িত্বে থাকছেন দেশের আরেক পরিচিত কোচ ও সাবেক পেসার মিজানুর রহমান বাবুল।
বিপিএলে দ্বিতীয়বার কোচিং করাতে এসেছেন ল্যান্স ক্লুজনার। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার কোচিং করাচ্ছেন খুলনাকে। চট্টগ্রাম ফিরিয়ে এনেছে তাদের পুরনো কোচ পল নিক্সনকে। প্রথমবারের মতো বড় কোনো আসরে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা হচ্ছে মারভিন ডিলনের। সাবেক ক্যারিবিয়ান পেসার পালন করছেন সিলেটের কোচের দায়িত্ব।
ভেন্যু
বিপিএলে নতুন কোনো ভেন্যু যোগ হয়নি এবারও। খেলা হবে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম ও সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। চট্টগ্রামে ম্যাচ ডে স্রেফ চারটি, সিলেটে মোটে ৩টি। আর সব খেলা মিরপুরে।
খেলার সময়
প্রাথমিক পর্বে প্রতিটি ম্যাচ ডে-তে খেলা দুটি করে। শুক্রবারে দিনের প্রথম ম্যাচ শুরু দেড়টায়, দ্বিতীয় ম্যাচ সাড়ে ৬টায়। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় প্রথম ম্যাচ শুরু দুপুর সাড়ে ১২টায়, পরেরটি বিকেল সাড়ে ৫টায়।
শুরুর লড়াই
উদ্বোধনী দিনে শুক্রবার প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স মুখোমুখি হবে ফরচুন বরিশালের, দ্বিতীয় ম্যাচে মিনিস্টার ঢাকার প্রতিপক্ষ খুলনা টাইগার্স।
প্লে অফ ও ফাইনাল
টুর্নামেন্টের এলিমিনেটর ও প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচ হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ১৬ ফেব্রুয়ারি। ফাইনাল ১৮ ফেব্রুয়ারি।
টিভি সম্প্রচার
দেশের দুই টিভি চ্যানেল টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে সব ম্যাচ।
নেই ডিআরএস
এবারের টুর্নামেন্টে থাকছে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা। কোভিড মহামারির কারণে রাখা যায়নি ডিসিশান রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক জানান, কোভিডের সময় ভ্রমণ জটিলতায় টেকনিশিয়ানরা আসতে রাজী না হওয়ায় ডিআরএসের ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা।
দর্শক
দেশের মাঠে সবশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজে দর্শক প্রবেশের অনুমতি থাকলেও এবার থাকছে না। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকায় সতর্কতা হিসেবে শূন্য গ্যালারির সামনে হবে টুর্নামেন্ট।
জৈব-সুরক্ষা বলয়
কোভিড মহামারীর সময় অন্যান্য আসরগুলির মতো এই টুর্নামেন্টও হবে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে। ক্রিকেটার, অফিসিয়ালরা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অন্যরা থাকবেন সুরক্ষা-বলয়ে। তবে আগের মতো অতটা কঠোর বলয় এবার থাকছে না। বিসিবি প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরি জানান, বাংলাদেশের বাস্তবতা মাথায় রেখে গত বছরের টোকিও অলিম্পিকসের আলোকে কোভিড গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে এই টুর্নামেন্টের জন্য।
উল্লেখযোগ্য বিদেশি তারকা
টি-টোয়েন্টির মহাতারকা আন্দ্রে রাসেল খেলবেন ঢাকা দলে। আরেক ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার ও টি-টোয়েন্টির সফলতম বোলার ডোয়াইন ব্রাভো আছেন বরিশালে। একই দলের জার্সি গায়ে নামবেন রহস্য স্পিনার মুজিব উর রহমান।
প্রথমবারের মতো বিপিএলে এসেছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি। কুমিল্লায় তিনি সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন সুনিল নারাইন ও মইন আলিকে।
পরিক্ষীত পারফরমার থিসারা পেরেরা খেলবেন খুলনার হয়ে, সিলেট দলে আছেন লেন্ডল সিমন্স, রবি বোপারা, কলিন ইনগ্রাম ও কেসরিক উইলিয়ামস।
একাদশে বিদেশি
একাদশে বিদেশি ক্রিকেটারদের সংখ্যা নিয়ে বিপিএলে বিতর্ক হয়েছে আগে অনেক। সর্বোচ্চ ৫ জন বিদেশি ক্রিকেটার খেলাতে পারার নিয়মও ছিল, তাতে সুযোগ কমে গিয়েছিল দেশের ক্রিকেটারদের। এবার একাদশে রাখা যাবে সর্বোচ্চ ৩ জন বিদেশি।
প্রাইজমানি
টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ১ কোটি টাকা, রানার্স আপ দলের পুরস্কার ৫০ লাখ টাকা।