তিন দিনেই ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুত থামিয়ে দিলেন মার্ক উড। ইংল্যান্ডের সামনে লক্ষ্যটা রইল তিনশর কম, বাকি ছিল প্রায় আড়াই দিন। কিন্তু আরও একবার ব্যাটিং ধসে পড়ে ওই রানই তাদের জন্য হয়ে উঠল পাহাড়সম। স্বাগতিকদের আগুনে বোলিংয়ে জো রুটের দল গুঁড়িয়ে গেল একশ পার হতেই।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2022, 11:12 AM
Updated : 16 Jan 2022, 01:06 PM

হোবার্টে প্রথমবারের মতো আয়োজিত অ্যাশেজের ম্যাচটি স্রেফ তিন দিনেই ১৪৬ রানে জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। দিন-রাতের টেস্টে ২৭১ রানের লক্ষ্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা গুটিয়ে দিল কেবল ১২৪ রানে।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় টানা তিনটি সিরিজে কোনো ম্যাচ জিতল না ইংল্যান্ড। দারুণ এক সিরিজ জয় দিয়ে অধিনায়কত্বের শুরু হলো প্যাট কামিন্সের।

দিনের শুরুটা অবশ্য ইংলিশদের জন্য ছিল স্বস্তির। ৩ উইকেটে ৩৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়াকে ১৫৫ রানেই গুটিয়ে দেয় তারা। তাদের কোনো ব্যাটসম্যানকেই ছুঁতে দেয়নি পঞ্চাশ।

দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিয়ে ৩৭ রানে ৬ উইকেট নেন উড। টেস্ট তো বটেই, প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেই যা তার সেরা বোলিং। আগের সেরা ৪৬ রান দিয়ে ৬টি। স্টুয়ার্ট ব্রডের শিকার তিন উইকেট।

রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হলেও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়তে সময় নেয়নি খুব একটা। সিরিজ জুড়ে বাজে ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তারা গুটিয়ে যায় ৩৮.৫ ওভার খেলেই।

প্যাট কামিন্স, স্কট বোল্যান্ড, ক্যামেরন গ্রিনের প্রাপ্তি তিনটি করে উইকেট। রোববারও উইকেটে ছিল পেসারদের জন্য সহায়তা। দ্বিতীয় দিনের মতো দুই দলের মিলিয়ে এদিনও পড়ে ১৭ উইকেট।

এদিন শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। দিনের চতুর্থ ওভারে নাইটওয়াচম্যান বোল্যান্ডকে কট বিহাইন্ড করে ফেরত পাঠান উড। কয়েক ওভার পর প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেডও এই পেসারের শিকার। তার লেগ সাইডের শর্ট বলে কিপারের গ্লাভসে হেড ধরা পড়েন দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই।

নিজের পরের ওভারে উড তুলে নেন সবচেয়ে বড় উইকেটটি। তার শর্ট বল হুক শট খেলে লং লেগে দাভিদ মালানের হাতে সহজ ক্যাচ দেন ২৭ রান করা স্টিভেন স্মিথ।

দ্রুত ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অ্যালেক্স কেয়ারি ও গ্রিন। তাদের ব্যাটে বাড়তে থাকে অস্ট্রেলিয়ার রান। কিন্তু জুটির রান ফিফটি ছোঁয়ার আগে ২৩ রান করা গ্রিনকে এলবিডব্লিউ করে দেন ব্রড।

মিচেল স্টার্ককে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন উড। দারুণ ব্যাটিংয়ে কেয়ারি এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। কিন্তু তাকে ৪৯ রানে কট বিহাইন্ড করে দেন ব্রড। কামিন্সের স্টাম্প এলোমেলো করে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ করে দেন উড।

লক্ষ্য তাড়ায় জ্যাক ক্রলি ও ররি বার্নস আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান দ্রুত বাড়াতে থাকেন। ইংল্যান্ডের ৬৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন গ্রিন। ছেড়ে দিবেন নাকি খেলবেন, এমন দ্বিধায় থাকা বার্নসের ব্যাটের কানা নিয়ে বল আঘাত হানে স্টাম্পে।

এরপর আর দাঁড়াতেই পারেনি ইংল্যান্ড। দাভিদ মালানের জন্য একের পর এক বল সুইং করিয়ে ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন গ্রিন। তার ঠিক ওইরকমই একটি বল ব্যাটের ভেতরের কানা নিয়ে ভেঙে দেয় মালানের স্টাম্প।

এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার পরের ওভারেই ফিরিয়ে দেন ক্রলিকে। গ্রিনের অফ স্টাম্পের ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা ক্রলি।

দুর্দান্ত এক স্পেলে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পথ করে দেন গ্রিন। এই ইনিংসে ৬ ওভারের ওই স্পেলই করেন তিনি; এক মেডেন, ২১ রান দিয়ে নেন তিন টপঅর্ডারের উইকেট।

স্টার্কের শর্ট বল পুল শট করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন বেন স্টোকস। ক্রিজে পড়ে একেবারে নিচু হয়ে যাওয়া বোল্যান্ডের বলে বোল্ড হয়ে যান রুট।

এরপর কেবল আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন বাকি ব্যাটসম্যানরা। ৫৬ রানের মধ্যে ১০ উইকেট হারায় তারা।

প্রথম ইনিংসে দলের বিপদে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দেওয়া হেড জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করে সিরিজ সেরার পুরস্কারও ওঠে বাঁহাতি এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যানের হাতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩০৩

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৮৮

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৩৭/৩) ৫৬.৩ ওভারে ১৫৫ (স্মিথ ২৭, বোল্যান্ড ৮, হেড ৮, গ্রিন ২৩, কেয়ারি ৪৯, স্টার্ক ১, কামিন্স ১৩, লায়ন ৪*; ব্রড ১৮-২-৫১-৩, ওকস ১১-৩-৪০-১, রবিনসন ১১-৪-২৩-০, উড ১৬.৩-২-৩৭-৬)

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭১) ৩৮.৫ ওভারে ১২৪ (বার্নস ২৬, ক্রলি ৩৬, মালান ১০, রুট ১১, স্টোকস ৫, পোপ ৫, বিলিংস ১, ওকস ৫, উড ১১, রবিনসন ০, ব্রড ১*; স্টার্ক ৮-০-৩০-১, কামিন্স ১২.৫-৩-৪২-৩, বোল্যান্ড ১২-৫-১৮-২, গ্রিন ৬-১-২১-৩)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১৪৬ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রাভিস হেড

ম্যান অব দা সিরিজ: ট্রাভিস হেড