মধ্যাঞ্চলের শিরোপা জয়ে ফাইনালেও নায়ক মোসাদ্দেক

দ্রুত একটি সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ হলো লক্ষ্য। কিন্তু দুই ব্যাটসম্যানের কোনো ভাবান্তর নেই। হয়তো বুঝতেই পারেননি, জিতে গেছে দল! বুঝতে তারা পারলেন, যখন বাইরে থেকে ছুটে আসতে দেখলেন সতীর্থদের। ফিফটি করে অপরাজিত থাকা আল আমিন ত্বরিত জয়ের স্মারক একটি স্টাম্প বগলদাবা করে ফেললেন। আরেক প্রান্তে মোসাদ্দেক হোসেনও নিতে পারলেন একটি স্টাম্প। বাকি স্টাম্পগুলো নিতে অন্যদের সে কী কাড়াকাড়ি!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2022, 12:35 PM
Updated : 15 Jan 2022, 12:35 PM

ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন উদযাপন বলে দিচ্ছে, সাফল্যের মূল্য তাদের কাছে কতটা। তা অবশ্য হওয়ারই কথা, জোড়া চ্যাম্পিয়ন বলে কথা! বিসিএলের বড় দৈর্ঘ্যের আসরের পর প্রথমবার আয়োজিত একদিনের ম্যাচের আসরেও ট্রফি জিতে নিল ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল। শিরোপা জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মোসাদ্দেক।

ফাইনাল অবশ্য মনে রাখার মতো হলো না। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে না জমল ম্যাচ, না হলো রোমাঞ্চকর ক্রিকেট। ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তির ম্যাচে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলকে ৬ উইকেট হারাল মধ্যাঞ্চল।

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার দক্ষিণাঞ্চল অলআউট হয় ১৬৩ রানে। রান তাড়ায় মধ্যাঞ্চল ভালো শুরুর পর দ্রুত ৪ উইকেট হারালেও পরে আর উইকেট হারায়নি একটিও। আল আমিন ও মোসাদ্দেকের জুটি দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় ৪৫ বল বাকি রেখে।

বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে অপরাজিত ৩৩ রান করে ম্যাচের সেরা মোসাদ্দেক। ফাইনালে ওঠার পথে মধ্যাঞ্চলের দুই জয়েও ম্যাচ সেরা ছিলেন তিনিই।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণাঞ্চলের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। পিনাক ঘোষ ও এনামুল হক উদ্বোধনী জুটিতে তোলেন ৫১ রান।

এনামুলকে (৩৪ বলে ২০) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাজমুল ইসলাম অপু। এই বাঁহাতি স্পিনার পরে ফিরিয়ে দেন তৌহিদ হৃদয়কে। দুই দলের আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হওয়া হৃদয় এবার শূন্য রানে ক্যাচ দেন স্লিপে।

এই দুই উইকেটের মাঝে আউট হয়ে যান দারুণ খেলতে থাকা পিনাকও (৪৭ বলে ৩৫)। সৌম্য সরকারকে ডাউন দা উইকেট খেলার চেষ্টায় বল লাগে তার ব্যাটের কানায়, উইকেটের সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ মিঠুন।

এরপর মোসাদ্দেক নেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। দক্ষিণাঞ্চল অধিনায়ক জাকির হাসান বোল্ড হন ক্রস ব্যাটে স্লগের মতো করার চেষ্টায়। বলটি ছিল না শর্ট, ছিল না ফুল লেংথও। দীর্ঘক্ষণ এক প্রান্ত আগলে রাখা অমিত হাসানও (৬৬ বলে ২৯) বোল্ড হন ক্রস ব্যাটে খেলার চেষ্টায়। তার ক্ষেত্রে বলটি অবশ্য শর্টই ছিল, তবে নিচু হয়ে যায় অনেকটাই।

এরপর রান যা করতে পারেন কেবল নাহিদুল ইসলাম। দ্রুত রান তুলতে পারতেন যে দুজন, সেই মেহেদি হাসান ও ফরহাদ রেজাকে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ।

৪৮ বলে ৩১ করে নাহিদুল ফিরতি ক্যাচ দেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে। এই বাঁহাতি পেসারের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন নাসুম আহমেদ। যদিও কটবিহাইন্ডের সেই আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার, তবে মাঠ ছাড়েন নাসুম নিজেই।

মধ্যাঞ্চলের ৫ বোলার নেন ২টি করে উইকেট।

রান তাড়ায় সৌম্য সরকার ও মিজানুর রহমান দারুণ শুরু এনে দেন মধ্যাঞ্চলকে। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে ১২ ওভারে ৬৫ রানের জুটি গড়েন দুজন। নতুন বলে দক্ষিণাঞ্চলকে উইকেট এনে দিতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান।

তবে নাসুম আক্রমণে আসতেই বদলে যায় ম্যাচের চেহারা। এই বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন সৌম্য (২৫ বলে ২১)।

পরের ওভারেই মেহেদির অফ স্পিনে স্লিপে ধরা পড়েন তিনে নামা আব্দুল মজিদ। নাসুম এরপর দারুণ দুটি ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন মিজানুর রহমান (৫৩ বলে ৩৯) ও মিঠুনকে (১৭ বলে ৪)। দুটিই ছিল আর্ম বল, পিচ করে সোজা হয়ে লাগে প্যাডে। দুই ব্যাটসম্যানই ভুল লাইনে খেলে এলবিডব্লিউ হন।

চতুর্থ ওভারে তখন নাসুমের শিকার ২ রানে ৩ উইকেট। ৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে মধ্যাঞ্চলের স্কোর ৪ উইকেটে ৭৬।

এরপর মোসাদ্দেক ও আল আমিনের জুটি ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দেন পরিস্থিতি। নাসুমকে তারা সাবধানে খেলে পার করেন, একটু একটু করে গড়েন জুটি। আল আমিন পরে নাসুমের বলেও খেলেন দারুণ কয়েকটি শট। ৮৮ রানের অবিচ্ছিন্ন এই জুটিই শেষ পর্যন্ত দলকে নিয়ে যায় জয়ের ঠিকানায়।

কঠিন উইকেটে দারুণ খেলে ৬৯ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন আল আমিন। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ৮৫ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক।

টুর্নামেন্টে ৭৪ গড়ে ১৪৮ রান করে এবং ওভারপ্রতি স্রেফ ৩.৩০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরাও মোসাদ্দেক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল: ৪৮.৫ ওভারে ১৬৩ (পিনাক ৩৫, এনামুল ২০, অমিত ২৯, হৃদয় ০, জাকির ১৪, নাহিদুল ৩১, মেহেদি ২, ফরহাদ ৭, নাসুম ৫, কামরুল রাব্বি ১২, মুস্তাফিজ ৩*; রবিউল ৫-২-১৬-০, মোসাদ্দেক ১০-০-৪৫-২, নাজমুল অপু ১০-০-২৮-২, সৌম্য ৬.৫-০-১৯-২, মুরাদ ১০-০-২৯-২, মৃত্যুঞ্জয় ৭-১-২৬-২)।

ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল : ৪২.৩ ওভারে ১৬৪/৪ (মিজানুর ৩৯, সৌম্য ২১, মজিদ ১, মিঠুন ৪, মোসাদ্দেক ৩৩*, আল আমিন ৫৩*; মুস্তাফিজ ৮-১-৩২-০, নাহিদুল ৬-০-৩৮-০, মেহেদি ১০-০-৩২-১, নাসুম ১০-১-৩২-৩, কামরুল রাব্বি ৫-০-১৭-০, ফরহাদ ৩.৩-০-১২-০)।

ফল: ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ফাইনাল: মোসাদ্দেক হোসেন

ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: মোসাদ্দেক হোসেন