স্টাম্প মাইক কাণ্ডে শাস্তি ‘হচ্ছে না’ কোহলিদের

কেপ টাউন টেস্টের স্টাম্প মাইক কাণ্ডে শাস্তি না পেয়েই পার পাচ্ছেন বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, লোকেশ রাহুলরা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগই আনা হয়নি!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2022, 05:07 AM
Updated : 15 Jan 2022, 07:59 AM

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, বিতর্কিত ওই ঘটনা নিয়ে ভারতের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন আইসিসির ম্যাচ অফিসিয়ালরা। কিন্তু আচরণবিধি ভাঙার কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না তোলায় কোনো শাস্তি বা অফিসিয়াল ব্যবস্থার সুযোগ নেই। ম্যাচে মাঠের দুই আম্পায়ার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মারাইস ইরাসমাস ও এড্রিয়ান হোল্ডস্টক, ম্যাচ রেফারি জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি পাইক্রফট।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোহলি নিজে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি মাঠে তাদের বিতর্কিত কাণ্ড নিয়ে।

“মাঠে যা ঘটেছে, আমরা তা বুঝেছি এবং মাঠের ভেতরের সবকিছু বিস্তারিত বাইরের লোকেরা জানে না। কাজেই, আমরা সীমা ছাড়িয়েছিলাম, এমন কিছু বলা ও ন্যায্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করা আমার জন্য ঠিক হবে না।”

“আমরা যদি তেতে গিয়ে তখন তিনটি উইকেট তুলে নিতাম, তাহলে হয়তো ম্যাচের মোড় ঘুড়ে যেত সেখানে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুরো টেস্ট ম্যাচেই আমরা যথেষ্ট লম্বা সময় ধরে চাপ ধরে রাখতে পারিনি এবং এজন্যই হেরেছি। ওই একটি মুহূর্তকে খুব চমৎকার মনে হতে পারে এবং বিতর্ক তৈরি করার জন্য দারুণ। কিন্তু আমি সেই বিতর্ক দেখতে একটুও আগ্রহী নই। ওটা একটা মুহূর্ত ছিল, যা চলে গেছে এবং আমরা ম্যাচে মনোযোগ দিয়ে উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করেছি।”

কেপ টাউন টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় ২১তম ওভারে একটি রিভিউয়ের সূত্রে জন্ম নেয় আলোচিত সেই ঘটনার। অশ্বিনের বলে ডিন এলগারকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল লাইনে পিচ করে এলগারের হাঁটুতে ছোবল দেয়। তখনও পর্যন্ত আউট বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বল ট্র্যাকিংয়ের শেষ ধাপে দেখা যায়, বলটি চলে যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে। এলগার টিকে যান।

আম্পায়ার ইরাসমাস তখনই অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মাথা নেড়ে বলেন, “এটা তো অসম্ভব।” তার এই কথা ধরা পড়ে স্টাম্প মাইকে।

বিরাট কোহলি ও ভারতের অন্যান্য ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায়ও ফুটে ওঠে অবিশ্বাস। সেটা তারা কণ্ঠেও প্রকাশ করতে পিছপা হননি।

সহ-অধিনায়ক লোকেশ রাহুল বলে ওঠেন, “১১ জনের বিপক্ষে যেন খেলছে গোটা দেশ।” অশ্বিন আরও কাঠগড়ায় তোলেন ব্রডকাস্টার সুপারস্পোর্টকে, “জয়ের জন্য অন্য কোনো ভালো পথ বের করো, সুপারস্পোর্ট!”

স্টাম্প মাইকে তারা এসব ইচ্ছে করেই শোনান। তবে কোহলি ছাড়িয়ে যায় সবকিছুর সীমানা। ভারতীয় অধিনায়ক স্টাম্প মাইকের কাছে মুখ নিয়েই বলেন, “তোমাদের দলের দিকে মনোযোগ দাও বল উজ্জ্বল করার সময়। শুধু প্রতিপক্ষের দিকে খেয়াল রাখলে চলবে না। সবসময় শুধু লোকজনকে ধরার চেষ্টা!”

কোহলির এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট হতে পারে ২০১৮ সালের সেই আলোচিত কেপ টাউন টেস্ট, যেটিতে সুপারস্পোর্টের ক্যামেরায় ধরা পড়ে অস্ট্রেলিয়ানদের বল টেম্পারিং। যেটির সূত্র ধরে পরে নিষিদ্ধ হন স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফট।

ডিআরএস নিয়ে অসন্তুষ্টির অনেক ঘটনা আছে বটে। তবে মাঠেই এরকম ক্ষুব্ধ প্রকাশ বিরল।

বল ট্র্যাকিং প্রযুক্তি সরবরাহ করে হক-আই নামে একটি সংস্থা, যারা স্বতন্ত্র। ক্রিকেট বিশ্বজুড়েই তাদের স্বীকৃত প্রযুক্তি চলে, এই সিরিজেও সেটাই।

ব্যাটসম্যানের হাঁটুর নিচে লাগা বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত, এটা বিস্ময়কর বটে। তবে সাধারণ চোখে মনে হওয়া কোনো কিছু রিভিউয়ে নাটকীয়ভাবে ভুল প্রমাণিত হওয়ার অনেক নজির আছে। ব্রডকাস্টার সুপারস্পোর্ট টুইটারে একটি গ্র্যাফিক্সে দেখায়, কেপ টাউনের উইকেটের বাড়তি বাউন্সের কারণেই বলটি স্টাম্পের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল।

ওই ঘটনার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভারতেরই সাবেকদের অনেকে বলেন, কোহলিদের এমন আচরণ মেনে নেওয়ার মতো নয়।