পান্তের অসাধারণ সেঞ্চুরির পর শেষের রোমাঞ্চের অপেক্ষা

আগের টেস্টে বাজে শট খেলে আউট হওয়ায় রিশাভ পান্তের সমালোচনা হয়েছিল অনেক। তবে অধিনায়ক আস্থার হাত রেখেছিলেন তার কাঁধে। পরের ম্যাচেই ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যান দেখালেন তার সামর্থ্য। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে, মানসম্পন্ন পেস আক্রমণের বিপক্ষে, চাপের মধ্যে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে দলকে এনে দিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার দারুণ শুরুর পর শেষ বেলায় ডিন এলগারের বিদায়ে জমে উঠল লড়াই।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 05:28 PM
Updated : 13 Jan 2022, 05:34 PM

কেপ টাউনে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে জয়ের সম্ভাবনায় অনেকটা এগিয়ে অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বৃহস্পতিবার স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০১ রান। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা কিগান পিটারসেন খেলছেন ৪৮ রানে। তাদের প্রয়োজন আর ১১১ রান।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার সিরিজ জিততে ভারতের চাই ৮ উইকেট।

কেপ টাউনে ২০০ বা এর বেশি রান তাড়া করে জয় আছে কেবল তিনটি। ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষেই ২১১ ও ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ২০০২ সালে তাদের বিপক্ষে ৩৩১ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।

ভারতকে দুইশ ছাড়ানো পুঁজি এনে দেওয়ার কারিগর পান্ত ছয় নম্বরে নেমে ১৩৯ বলে খেলেন অপরাজিত ১০০ রানের চমৎকার ইনিংস। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় গড়া ইনিংসটি। ক্যারিয়ারের প্রথম চার সেঞ্চুরির তিনটিই তিনি করলেন দেশের বাইরে- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকায়।

বড় অবদান আছে বিরাট কোহলিরও। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে তিনি ২৯ রান করেন ১৪৩ বল খেলে। দিনের শুরুতে দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে পান্ত ও কোহলি গড়েন ৯৪ রানের জুটি। ৪ উইকেটে ৫৮ রানের বিপর্যয় থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত অলআউট হয় ১৯৮ রানে।

দলীয় রান দুইশর নিচে এমন ইনিংসে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ভারতীয় ব্যাটসম্যান এখন পান্ত। দুইশর নিচে অলআউট হওয়া দলে ছয় বা এর নিচে নেমে সেঞ্চুরি করা টেস্ট ইতিহাসেরই একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি।

নিউল্যান্ডসে তৃতীয় দিনেও উইকেট থেকে সহায়তা পেয়েছেন পেসাররা। ব্যাটিং সহজ ছিল না মোটেও। ২ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের শুরুটা ভারতের জন্য হয় দুঃস্বপ্নের মতো। দিনের প্রথম দুই ওভারেই তারা হারায় ২ উইকেট।

মার্কো ইয়ানসেনের করা দিনের দ্বিতীয় বলে পিটারসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারা। লেগ স্লিপে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে বল মুঠোবন্দি করেন পিটারসেন।

পাঁচে নেমে রাবাদার দারুণ ডেলিভারিতে স্লিপে ধরা পড়েন অজিঙ্কা রাহানে। আম্পায়ার যদিও শুরুতে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে সফল হয় স্বাগতিকরা। তখন লিড কেবল ৭১ রানের।

এরপরই শুরু কোহলি ও পান্তের লড়াই। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও একের পর এক বল ছেড়ে, ডিফেন্স করে ভারত অধিনায়ক দেখান ধৈর্য। রান বাড়ানোর কাজটা করেন পান্ত।

লাঞ্চ বিরতির আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পান্ত প্রথম পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ৫৮ বলে। বিরতির পর টানা দুই ছক্কায় ওড়ান স্পিনার কেশভ মহারাজকে।

পরের ওভারেই কোহলির বিদায় ভাঙে ১৭৯ বল স্থায়ী ৯৪ রানের জুটি। লুঙ্গি এনগিডির অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে এইডেন মারক্রামের দারুণ ক্যাচে ফেরেন তিনি।

এরপর এক প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে আউট হয়ে ফেরেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, শার্দুল ঠাকুর, উমেশ যাদব। পান্ত এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। মোহাম্মদ শামি যখন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন, তখনও তিন অঙ্ক ছুঁতে পান্তের চাই ৬ রান।

রাবাদাকে চার মেরে তিনি এগিয়ে যান মাইলফলকের দিকে। পরে ইয়ানসেনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৩৩ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। বুমরাহকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেওয়া ইয়ানসেনের প্রাপ্তি ৪টি।

দুই ইনিংসেই ভারতের সবাই আউট হলেন ক্যাচ দিয়ে। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ম্যাচে কোনো দল ২০ উইকেটের সবগুলো হারাল ক্যাচ দিয়ে।     

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা দলীয় ২৩ রানে হারায় মারক্রামকে। শামির আগের বলে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার পরের বলেই স্লিপে ধরা পড়েন তিনি ১৬ রান করে।

এরপর এলগার ও পিটারসেন এগিয়ে নেন দলকে। অফ স্পিনার অশ্বিনের বলে ২২ রানে এলগারকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত।

জমে ওঠা জুটিতে দিন শেষের পথেই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু বুমরাহর লেগ সাইডের বাইরের বলে ফ্লিক করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন এলগার। আম্পায়ার অবশ্য শুরুতে আউট দেননি, কোহলি নেন রিভিউ। আলট্রা এজে ব্যাটে বলের স্পর্শের প্রমাণ মেলে।   

৯৬ বলে ৩০ রান করা এলগারের বিদায়ে ভাঙে ৭৮ রানের জুটি। দিনের খেলাও শেষ হয় সেখানেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ২২৩

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২১০

ভারত ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৫৭/২) ৬৭.৩ ওভারে ১৯৮ (পুজারা ৯, কোহলি ২৯, পান্ত ১০০*, অশ্বিন ৭, শার্দুল ৫, উমেশ ০, শামি ০, বুমরাহ ২; রাবাদা ১৭-৫-৫৩-৩, অলিভিয়ের ১০-১-৩৮-০, ইয়ানসেন ১৯.৩-৬-৩৬-৪, এনগিডি ১৪-৫-২১-৩, মহারাজ ৭-১-৩৩-০)

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২১২) ২৯.৪ ওভারে ১০১/২ (মারক্রাম ১৬, এলগার ৩০, পিটারসেন ৪৮*; বুমরাহ ৯.৪-৩-২৯-১, শামি ৭-০-২২-১, উমেশ ২-০-৫-০, শার্দুল ৫-১-১৭-০, অশ্বিন ৬-১-২২-০)