বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ওয়ানডে সংস্করণের টুর্নামেন্ট ইন্ডিপেন্ডন্স কাপে প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলের জয় ৫ উইকেটে। ২২১ রানের লক্ষ্য তারা পেরিয়ে যায় ৮ বল বাকি রেখে।
দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়েছে প্রথম দুই ম্যাচে জেতা মধ্যাঞ্চলেরও। তিন ম্যাচে দুটি করে জয়ে দুই দলেরই সমান ৪ পয়েন্ট। বিদায় নিয়েছে একটি করে জয় পাওয়া ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ও বিসিবি উত্তরাঞ্চল।
আগের ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজের প্রাপ্তি এবার ৪টি। বাঁহাতি পেসার ১০ ওভারে রান দেন যদিও ৬৩।
তার বোলিং ভাগ করা যায় তিন ভাগে। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ২ মেডেনে ১৩ রানে নেন ২ উইকেট। দ্বিতীয় স্পেলে ৪ ওভারে আরও ২ উইকেট নেন ১৬ রান দিয়ে। তবে শেষ ২ ওভারে খরচ করেন ৩৪ রান! এই দুই ওভারে তাকে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান আরেক পেসার আবু হায়দার।
৯ নম্বরে নেমে আবু হায়দার মাত্র ২৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় অপরাজিত ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন, যা মধ্যাঞ্চলের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার প্রথম ফিফটি। আব্দুল মজিদের ৪৬ ও প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের নায়ক মোসাদ্দেক হোসেনের ৪৪ ছাড়া আর কেউ ভালো করতে পারেননি।
মুস্তাফিজ ছাড়া বল হাতে দক্ষিণাঞ্চলের আলো ছড়ান মেহেদি হাসান। অফ স্পিনে ১০ ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। পরে রান তাড়ায় ৭৮ বলে ৩ চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংসে দলটির জয় নিয়ে ফেরেন হৃদয়।
মধ্যাঞ্চলের হয়ে এই ম্যাচে খেলেননি সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করায় এই অলরাউন্ডার সেদিনই সিলেট থেকে ফেরেন ঢাকায়।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে বোলিং নিয়ে মুস্তাফিজের হাত ধরে দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পায় দক্ষিণাঞ্চল। রাউন্ড দা উইকেটে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন ডানহাতি মিজানুর রহমান। উইকেট মেডেন দিয়ে মুস্তাফিজ শুরু করেন ওভার।
তিনে নেমে তাইবুর রহমান ২৩ রান করে বিদায় নেন কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে ক্যাচ দিয়ে। এরপরই মধ্যাঞ্চল ইনিংসের সেরা ৬৪ রানের জুটি পায় মজিদ ও মোসাদ্দেকের ব্যাটে। মজিদের ৯৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস থামান মেহেদি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে মোসাদ্দেককে এলবিডব্লিউ করেন মুস্তাফিজ। ৫৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংসটি সাজান মধ্যাঞ্চল অধিনায়ক। মুস্তাফিজ পরে আরেকটি দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন জাকের আলিকেও।
একটা পর্যায়ে ১৭২ রানে ৮ উইকেট হারানো মধ্যাঞ্চল দুইশ পার করতে পারে মূলত আবু হায়দারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে। মুস্তাফিজের শেষ তিন বলে ছক্কা-চার-ছক্কায় তিনি ফিফটি পূর্ণ করেন ২৭ বলে।
রান তাড়ায় ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণাঞ্চলকে ভালো সূচনা এনে দেন পিনাক ও এনামুল হক বিজয়। ৩৯ বলে ২৪ রান করে এনামুলকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মোসাদ্দেক।
তিনে নেমে দুই অঙ্কে যেতে পারেননি মাইশুকুর রহমান। পিনাক বিদায় নেন ফিফটির পরপরই। দুই জনই বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের শিকার।
চতুর্থ উইকেটে ৮০ রানের জুটিতে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন হৃদয় ও জাকির হাসান। জাকির ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়ে থামেন ৪০ রানে, ৪৯ বলের ইনিংসে চার ৪টি। ১৫ বলে ২২ রান করেন নাহিদুল।
মেহেদিকে নিয়ে বাকিটা সারেন হৃদয়। আসরে তিন ম্যাচে দুটি ফিফটি করলেন তিনি। ম্যাচের সেরাও ২১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
একই মাঠে আগামী শনিবার শিরোপা লড়াইয়ে নামবে দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মধ্যাঞ্চল: ৫০ ওভারে ২২০/৮ (মিজানুর ০, সৌম্য ৫, মজিদ ৪৬, তাইবুর ২৩, মোসাদ্দেক ৪৪, আল আমিন ২৫, জাকের ৪, মৃত্যুঞ্জয় ৯, আবু হায়দার ৫৪*, নাজমুল ২*; মুস্তাফিজ ১০-২-৬৩-৪, নাহিদুল ১০-১-২৯-০, ফরহাদ ৫-০-১৯-০, কামরুল রাব্বি ৫-০-৩১-১, নাসুম ১০-১-৪৯-০, মেহেদি ১০-১-২৬-৩)
দক্ষিণাঞ্চল: ৪৮.৪ ওভারে ২২৫/৫ (পিনাক ৫৪, এনামুল ২৪, মাইশুকুর ৭, হৃদয় ৬৫*, জাকির ৪০, নাহিদুল ২২, মেহেদি ৫*; মোসাদ্দেক ১০-০-৩৩-১, আবু হায়দার ৩-০-২৩-০, সৌম্য ৬.৪-০-৪২-১, মুরাদ ১০-০-২৯-২, মৃত্যুঞ্জয় ৮-০-৪৩-১, নাজমুল ১০-০-৪৬-০, আল আমিন ১-০-৭-০)
ফল: দক্ষিণাঞ্চল ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তৌহিদ হৃদয়।