ওয়্যাগনারের ছোবলে এলোমেলো বাংলাদেশ

একটি অসাধারণ ক্যাচ, একটি বাজে শট আর একটি খুনে বাউন্সার, এই তিন চোটে আহত বাংলাদেশের লড়াইয়ের চেষ্টা। আগের দিনের চেয়ে যদিও অনেকটাই গোছানো হলো ব্যাটিং, তবে প্রথম সেশনের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ল দ্বিতীয় সেশনে। নিউ জিল্যান্ডের সামনে তাই হাতছানি তিন দিনেই ম্যাচ জয়ের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 03:10 AM
Updated : 11 Jan 2022, 03:35 AM

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ১৫২। ইনিংস হার এড়াতেই প্রয়োজন এখনও আরও ২৪৩ রান।

হ্যাগলি ওভারের উইকেট এ দিন পুরোপুরিই ব্যাটিং সহায়ক। প্রথম দিনের সবুজ আর দ্বিতীয় দিনের সবুজাভ উইকেট তৃতীয় দিনে অনেকটাই সাদা চেহারার। সেই উইকেটে কিউই পেসারদের সামনে লড়াই মোটামুটি করতে পারল বাংলাদেশ। তবে কোনো ব্যাটসম্যানই পারলেন না লম্বা ইনিংস খেলতে।

প্রথম সেশনে দুই উইকেট হারানো দল দ্বিতীয় সেশনে হারায় তিন উইকেট। ওয়্যাগনার নেন ৩ উইকেট।

আউট হওয়া পাঁচ ব্যাটসমানের চারজনই ২০ ছুঁয়েছেন, কিন্তু কেউই যেতে পারেননি ৪০ পর্যন্ত। সর্বোচ্চ ৩৭ রান মুমিনুল হকের, তবে সবচেয়ে বাজে শটে বিদায়ও নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

৩৯৫ রানে পিছিয়ে থেকে মঙ্গলবার সকালে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার শুরুটা করেন ভীষণ সাবধানী। প্রথম ৮ ওভারে রান আসে ১০।

রান কম এলেও সাদমান ইসলাম শুরু থেকেই ছিলেন স্বচ্ছন্দ। টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের নতুন বলের সুইংয়ের সামাল দেন তিনি বেশ দক্ষতায়।

ইনিংসের প্রথম বলে তিনি বাউন্ডারি পান লেগ স্টাম্পে থাকা বলে। পরে অনেক বল ছেড়ে দেন স্টাম্পের বাইরে। দুটি বল নাগালে পেয়ে কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারিও মারেন।

আরেক প্রান্তে আরেক প্রান্তে মোহাম্মদ নাঈম শেখের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ওপেনার এবার ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেন। পরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে আঁকড়ে রাখেন উইকেট।

প্রথম ঘণ্টা যখন নির্বিঘ্নে পার করার পথে দুজন, তখনই বিপত্তি। কাইল জেমিসনের লেগ স্টাম্পের বাইরের যে বল ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসে, সেটিতেই শরীর থেকে দূরে ব্যাট বাড়িয়ে দেন সাদমান (৪৮ বলে ২১)। উইকেটের পেছনে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন ব্লান্ডেল।

আরেকপ্রান্তে তখন বল হাতে ওয়্যাগনার। তিনে নামা শান্তর সঙ্গে তার লড়াই জমে ওঠে দারুণ। লেগ স্লিপ, ফরোয়ার্ড শট লেগ ও সিলি পয়েন্টে ফিল্ডার নিয়ে রাউন্ড উইকেটে ব্যাটসম্যানের শরীর তাক করে শর্ট বলের সেই চেনা কৌশল নেন তিনি।

জেমিসনকে দারুণ দুটি শটে বাউন্ডারি আদায় করা শান্ত ওয়্যাগনারকে জবাব দিতে থাকেন চোখধাঁধানো কিছু শটে। হুক করে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলেই মারেন বাউন্ডারি।

পরের ওভারে আবার একই কৌশল ওয়্যাগনারের। শান্ত এবার টানা দুই বলে দুর্দান্ত টাইমিংয়ে পুল শটে মারেন দুটি চার।

রোমাঞ্চের পথে ছুটে শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চের বলিই হন শান্ত। চেনা কৌশলেই লড়াই যেতেন ওয়্যাগনার। আরেকটি শর্ট বলে পুল শট নিচে রাখতে পারেননি শান্ত, লং লেগে ক্যাচ নেন বোল্ট। শান্তর ক্যামিও থামে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ করে।

অধিনায়ক মুমিনুল হক প্রথম বলেই রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান অল্পের জন্য। এক বল পরই ক্যাচের মতো দেন শর্ট লেগে। তবে শেষ পর্যন্ত লাঞ্চের আগে আর কোনো বিপদ আসেনি বাংলাদেশের।

নাঈম এক প্রান্ত আগলে রাখেন ধৈর্য নিয়ে। প্রথম বাউন্ডারি পান তিনি ২২তম ওভারে, ৬৩ বল খেলে। পরের ২৮ বলে কোনো রানই করতে পারেননি তিনি।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য তার বিদায় আলগা শটেই। লাঞ্চের পর টিম সাউদির অনেক বাইরের বল তাড়া করেন তিনি। দ্বিতীয় স্লিপে বাঁদিকে ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে বাঁহাতে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন টম ল্যাথাম।

৯৮ বল খেলে ২৪ রানে শেষ হয় ব্যাট হাতে নাঈমের অভিষেক পর্ব।

অধিনায়ক মুমিনুল অফ স্টাম্পের বাইরে ছিলেন খুবই নড়বড়ে। বেশ কবারই অল্পের জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল, কয়েকবার বল পড়ে ফিল্ডারের একটু আশেপাশে। এই ফাঁকে কিছু রানও পেয়ে যান তিনি।

বাংলাদেশ অধিনায়কের সেই পথচলা খুব দীর্ঘ হয়নি। শর্ট বলে তাকি নাড়িয়ে দিয়ে স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ বল করেন ওয়্যাগনার। শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে প্রথম স্লিপে রস টেইলরের হাতে যায় সহজ ক্যাচ (৬৩ বলে ৩৭)।

ইয়াসির আলি চৌধুরি প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন দুই দফায়। বাউন্সারে তার ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল অল্পের জন্য ক্যাচ নিতে পারেননি ল্যাথাম। রান নেওয়ার চেষ্টায় সরাসরি থ্রো উইকেটে লাগাতে পারেননি টেইলর।

তবে প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ব্যাটসম্যান সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। ওয়্যাগনারের আরেকটি বাউন্সার সামলাতে না পেরে সহজ ক্যাচ দেন সেই ল্যাথামের হাতেই (২)।

লিটন দাস এরপর সেশনের বাকিটা কাটিয়ে দেন নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে। লিটন খেলছেন দারুণ। চা বিরতির আগের ওভারেই পরপর দুটি চার মারেন পুল শট। তিনি অপরাজিত ২৩ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর ( তৃতীয় দিন চা বিরতি পর্যন্ত):
 
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫২১/৬ (ডি.)
 
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১২৬
 
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (ফলো-অনের পর):  ৫৩ ওভারে ১৫২/৫ (সাদমান ২১, নাঈম ২৪, শান্ত ২৯, মুমিনুল ৩৭, লিটন ২৩*, ইয়াসির ২, সোহান ৬*; সাউদি ১৪-৬-৩৯-১, বোল্ট ১৩-৬-১৭-০, জেমিসন ১১-৩-৩৩-১, ওয়্যাগনার ১৫-৪-৫৮-৩)।