ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে টম ল্যাথামের একার যা রান, বাংলাদেশ গোটা দল মিলে করতে পারল তার ঠিক অর্ধেক।
ল্যাথামের ২৫২ রানের অসাধারণ ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৬ উইকেটে ৫২১ রানে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট স্রেফ ১২৬ রানেই।
বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই দ্বিতীয় দিনের খেলাও শেষ। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ম্যাচের শেষ দুই দিনে আছে বৃষ্টির শঙ্কা। তৃতীয় দিনে তাই ফলো অন না করানোর কারণ নেই কিউইদের। সেক্ষেত্রে ইনিংস পরাজয় এড়াতেই বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে করতে হবে ৩৯৫ রান।
হ্যাগলি ওভালে সোমবার নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ঘোষণার পর ব্যাটিংয়ে নেমেই বোল্ট-সাউদির সামনে অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ১১ রানেই হারায় তারা প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানকে!
এরপর ইয়াসির ও সোহান লড়াই করে চেষ্টা করেন দলের মান বাঁচানোর। তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ইয়াসির ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে ৭ চারে ৯৫ বলে করেন ৫৫। ফেরার ম্যাচে ৬ চারে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন কিপার-ব্যাটসম্যান সোহান।
দুই জন ছাড়া দুই অঙ্কে যেতে পারেননি কেউই। বিশের বেশি বল খেলতে পারেন আর কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ।
৪৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের সফলতম বোলার বোল্ট। ক্যারিয়ারে নবম ৫ উইকেটের পথে বাঁহাতি পেসার স্পর্শ করেন তিনশ উইকেটের সীমানা। তার দেশের হয়ে যে কীর্তি আছে আর কেবল তিনজন বোলারের।
সেই তিনজনের একজন, টিম সাউদি ৩ উইকেট নেন ২৮ রানে। ৩২ রানে জেমিসনের শিকার দুই উইকেট।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চোখ রেখেই কিনা, দ্রুতগতিতে রান তুলে নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি। সেই রান পাহাড়ের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো।
দ্বিতীয় ওভার থেকেই শুরু ধসের। বোল্ট ফিরিয়ে দেন সাদমান ইসলামকে। বলটি ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসেই, কিন্তু বাঁহাতি ওপেনার তুলে দেন স্লিপে ল্যাথামের হাতে।
এরপর জোড়া ছোবল দেন সাউদি। অভিষেকে বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শূন্য রানে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তার মতো রানের খাতা খুলতে পারেননি অধিনায়ক মুমিনুল হকও।
আরেক প্রান্তে বোল্টই কেন থেমে থাকবেন! দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তিনি বিদায় করে দেন নাজমুল হোসেন শান্তকে।
১১ রানে ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে তখন টালমাটাল বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাস এরপর খানিকটা প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়ে চা বিরতিতে যান ইয়াসিরকে সঙ্গে নিয়ে।
বিরতির পর প্রথম ওভারে আবার বড় ধাক্কা। বোল্টের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে দিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন লিটন।
সেখান থেকেই ইয়াসির ও সোহানের জুটি। বাংলাদেশের ইনিংসের যা একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি।
পুরনো বলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এই জুটি ভাঙেন সাউদি। শেষ মুহূর্তে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বলে সোহান এলবিডব্লিউ হন ৪১ রানে। জুটি শেষ হয় ৬০ রানে।
৫ বছর আগে টেস্ট অভিষেকে এই মাঠেই ৪৭ করে বোল্টের বলে আউট হয়েছিলেন সোহান।
এরপর আর তেমন কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। মিরাজকে বোল্ড করে বোল্ট দেখা পান ৩০০ উইকেটের। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় জেমিসনকে উড়িয়ে মেরে উইল ইয়াংয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন তাসকিন।
প্রতিকূল আবহেও সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে চলা ইয়াসির ফিফটি স্পর্শ করেন ৮৫ বলে। পরে দ্রুত রানের চেষ্টায় তিনিও উইকেট দিয়ে ফেরেন জেমিসনকে।
শরিফুলকে বোল্ড করে বোল্ট শেষ করে দেন ইনিংস। স্রেফ ৩ ঘণ্টায় গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনের খেলারও সমাপ্তি সেখানেই।
সকালে নিউ জিল্যান্ড দিন শুরু করে ১ উইকেটে ৩৪৯ রান নিয়ে। ৯৯ রানে অপরাজিত ডেভন কনওয়ে দিনের প্রথম বলেই বাউন্ডারিতে পা রাখেন শতরানে।
তাকে অবশ্য ১০৯ রানেই থামায় মিরাজের অসাধারণ সরাসরি থ্রো। তবে ল্যাথামকে দ্রুত থামানো যায়নি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আড়াইশ পেরিয়ে তিনি আউট হন ২৫২ রানে।
৩৭৩ বলে ৩৪ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসটি এই মাঠের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ২৬৪ অবশ্য ছাড়াতে পারেননি একটুর জন্য।
দর্শকদের তুমুল করতালি এবং বাংলাদেশ দলের গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে ক্রিজে যাওয়া রস টেইলর আউট হন ২৮ রানে। সময়ের দাবি মিটিয়ে ৬০ বলে অপরাজিত ৫৭ করেন কিপার-ব্যাটসম্যান টম ব্লান্ডেল।
যে আশায় দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করে দেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক, পরে তা পুরোপুরিই পূর্ণ করেন তার বোলাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন শেষে ৩৪৯/১) ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৬ ডিক্লে. (ল্যাথাম ২৫২, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্লান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*; তাসকিন ৩২.৫-৫-১১৭-০, শরিফুল ২৮-৯-৭৯-২, ইবাদত ৩০-৩-১৪৩-২, মিরাজ ৩১-২-১২৫-০, শান্ত ৪-০-১৫-০, মুমিনুল ৩-০-৩৪-১)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪১.২ ওভারে ১২৬ (সাদমান ৭, নাঈম ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ০, লিটন ৮, ইয়াসির ৫৫, সোহান ৪১, মিরাজ ৫, তাসকিন ২, শরিফুল ২, ইবাদত ০*; সাউদি ১২-৪-২৮-৩, বোল্ট ১৩.৩-৩-৪৩-৫, জেমিসন ৯-৩-৩২-২, ওয়্যাগনার ৭-১-২৩-০)