সবুজ উইকেটে ল্যাথাম-কনওয়ের ব্যাটে পিষ্ট বাংলাদেশের আশা

মেঘলা আকাশ, ঘাসে ভরা উইকেট। ম্যাচের আগে রস টেইলর যেমন বলেছিলেন, ‘বোলারদের জিভে জল আনা উইকেট।’ কাঙ্ক্ষিত টসও জিতলেন মুমিনুল হক। এরপর কেবল প্রয়োজন ওই সবুজের গালিচায় লাল বলে আগুনের হলকা ছড়ানো। কিন্তু মুমিনুলের পেস আক্রমণ পুরো সময়ই রইল মিইয়ে। বাংলাদেশের আশায় জল ঢেলে রানের জোয়ার বইয়ে দিল নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2022, 06:03 AM
Updated : 9 Jan 2022, 12:08 PM

সহায়ক কন্ডিশনে বাংলাদেশের ধারহীন বোলিং কাজে লাগিয়ে টম ল্যাথাম তাকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির পানে, ডেভন কনওয়ে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরির দুয়ারে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে নিউ জিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৩৪৯।

ঘরের মাঠ হ্যাগলি ওভালের দর্শকদের দিনভর মাতিয়ে ল্যাথাম দিন শেষে অপরাজিত ১৮৬ রানে।

দারুণ সব ড্রাইভ, পুল আর কাট শটের মহড়ায় নিউ জিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ২৮টি বাউন্ডারি।

অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের এটি দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে আগের ৫ টেস্টে ছিল না কোনো ফিফটিও।

কনওয়ে দিন শেষ করেন ৯৯ রানে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার স্বপ্নের মতো শুরু করা ব্যাটসম্যান এখন অপেক্ষায় পঞ্চম টেস্টে তৃতীয় সেঞ্চুরির।

দুটি জুটির রেকর্ডে নাম লেখা হয়ে গেছে ল্যাথামের। উইল ইয়াংয়ের সঙ্গে একটি, আরেকটি কনওয়ের সঙ্গে চলমান। প্রথমটি এই মাঠে প্রথম উইকেট জুটির রেকর্ড, দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় উইকেটের।

ল্যাথাম ও ইয়াংয়ের উদ্বোধনী জুটিতেই সাজানো হয় রান উৎসবের মঞ্চ। যে মাঠে প্রথম দিনে ইনিংস শুরু করার মতো কঠিন কাজ ক্রিকেট বিশ্বে কমই আছে, যেখানে প্রথম ইনিংসে সেরা উদ্বোধনী জুটি ছিল আগে স্রেফ ৩৭ রানের, সেখানেই ১৪৮ রানের দারুণ জুটি গড়েন ল্যাথাম ও ইয়াং।

দ্বিতীয় উইকেটে এই মাঠের প্রথম দুইশ রানের জুটি এসে যায় এরপর। দিনশেষে ল্যাথাম ও কনওয়ের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ২০১।

কিউইদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এমন রান প্রবাহে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের বাজে বোলিংয়ের স্রোতও। আগের টেস্টে দুর্দান্ত বোলিং করা পেস আক্রমণ এবার সহায়ক কন্ডিশনেও ভীষণ বিবর্ণ। সকালের সেশনে মেঘলা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসে ভরা উইকেটে তারা পারেনি কিউই ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে। পরের দুই সেশনে খানিকটা উন্নতি হলেও কোনো পেসারই ছিলেন না যথেষ্ট ধারাবাহিক।

আগের টেস্টের লেংথেই বল করে যান পেসাররা, যেখানে এই উইকেটে প্রয়োজন ছিল ফুল লেংথে বেশি বল করা। তিন পেসারই খাটো লেংথে ও স্টাম্পের বাইরে বল করেছেন অনেক। ফুল লেংথগুলো অনেক সময়ই হয়ে গেছে হাফ ভলি। খুব বেশি মুভমেন্টও আদায় করতে পারেননি কেউ।

দিনের একমাত্র উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তার বোলিং ফিগারও শ্রেয়তর। তবে তিন পেসারের মধ্যে মন্দের ভালো বোলিং করেন কেবল তাসকিন আহমেদ।

আগের টেস্টের নায়ক ইবাদত হোসেন সুযোগ সৃষ্টি করেছেন কিছু। তবে লাইন-লেংথে সবচেয়ে এলোমেলো ও সবচেয়ে খরুচেও ছিলেন তিনি।

পেসারদের ব্যর্থতায় প্রথম দিনেই ২৫ ওভার বোলিং করা হয়ে গেছে মেহেদী হাসান মিরাজের। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তেমন কোনো প্রভাব তিনি রাখতে পারেননি।

সারাদিনে বাংলাদেশের একমাত্র উইকেট নিতে পেরেছেন শরিফুল ইসলাম। ছবি: আইসিসি টুইটার।

ম্যাচের আগে বাংলাদেশ বড় ধাক্কা খায় কুঁচকির চোটের মুশফিকুর রহিমকে না পেয়ে। তার জায়গায় দলে ফেরেন কিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। চোট পেয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের ছিটকে যাওয়া নিশ্চিত ছির আগেই। তার জায়গায় টেস্ট ক্যাপ পান মোহাম্মদ নাঈম শেখ, দেশের শততম টেস্ট ক্রিকেটার তিনি।

হ্যাগলি ওভালে সব দলেরই চাওয়া থাকে টস জয়। সেই ভাগ্য পরীক্ষায় জিতে আগে বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়ক মুমিনুল হকের মুখে হাসি ফোটানোর মতো বোলিং করতে পারেননি পেসাররা।

নতুন বলে তাসকিন ও শরিফুল ৮ ওভার নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলেও উইকেটের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি। নবম ওভারে আক্রমণে আসেন ইবাদত। তার প্রথম ওভারেই দুইবার উঠে যায় আম্পায়ারের আঙুল। কিন্তু দুটিই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, দুবাই রিভিউ নিয়ে টিকে যান ল্যাথাম।

প্রথম সেশনেই একশর কাছে পৌঁছে যায় নিউ জিল্যান্ডের রান। ল্যাথামই দারুণ খেলে করে ফেলেন ৬৫।

লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই জুটি ভাঙার সুযোগ আসে। ইবাদতের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন ইয়াং। প্রথম স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে যা হতে পারত সহজ ক্যাচ, দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে সেটি ফেলে দেন লিটন দাস।

উল্টো ওভারথ্রো থেকে ওই বলে আসে ৭ রান! ইবাদতের পরের ওভারে আরেকটি ওভারথ্রো থেকে আসে ৫ রান। ২৬ রানে জীবন পেয়ে ইয়াং শেষ পর্যন্ত আউট হন ৫৪ রানে। শরিফুলকে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি পয়েন্টে।

নতুন ব্যাটসম্যান কনওয়ে উইকেটে যাওয়ার পরও দুই প্রান্তে পেসার না এনে মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন চালিয়ে যান মুমিনুল। কনওয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান মিরাজকে অনায়াস কয়েকটি শট খেলে।

ল্যাথাম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩৩ বলে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি শতরান ছুঁতে পারলেন দেড়শর কম বল খেলে।

সারদিনে কয়েক দফায় ব্যাটের কানায় লেগেছে বল। উড়ে গিয়ে ফিল্ডারের আশেপাশে পড়েছে কয়েক দফায়। তবে সত্যিকারের সুযোগ আর তৈরি হয়নি। শেষবেলায় দ্বিতীয় নতুন বলও কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।

দিনের শেষ ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে ১৪৮ বলে ৯৯ রানে অপরাজিত থেকে যান কনওয়ে। ল্যাথামের সামনে হাতছানি দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরির।

বিদায়ী টেস্টের প্রথম দিনে দীর্ঘক্ষণ প্যাড পরে বসে থেকেও মাঠে নামতে পারেননি রস টেইলর। তাতে নিশ্চয়ই তিনি হতাশ নন। তবে বাংলাদেশের জন্য দিনটা নিশ্চিতভাবেই হতাশাময়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর  :

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩৪৯/১ (ল্যাথাম ১৮৬*, ইয়াং ৫৪, কনওয়ে ৯৯*; তাসকিন ২২-৫-৬৮-০, শরিফুল ১৮-৬-৫০-১, ইবাদত ২১-১-১১৪-০, মিরাজ ২৫-১-৯৫-০, শান্ত ৪-০-১৫-০)