তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় ২৪ রানে।
জ্যামাইকায় শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয় ২৬৯ রানে। আইরিশরা রান তাড়ায় যেতে পারে ২৪৫ পর্যন্ত।
৩৩ বছর বয়সে ওয়ানডে অভিষেকে ব্রুকস খেলেন ৮৯ বলে ৯৩ রানের ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এই সংস্করণে অভিষেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস এটি।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পাওয়া ডেসমন্ড হেইন্স অভিষেকে ১৯৭৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৩৬ বলে ১৪৮ রানের অসাধারণ ইনিংস। শুধু ক্যারিবিয়ানদের সর্বোচ্চ নয়, বিশ্বরেকর্ড হয়ে সেটি টিকে আছে এখনও।
ব্রুকসের সঙ্গে ব্যাট হাতে এ দিন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে পোলার্ড করেন ৬৬ বলে ৬৯। ইনিংসের মাঝপথে নড়বড়ে হয়ে পড়া দলকে উদ্ধার করেন এই দুজন ১৩৬ বলে ১৫৫ রানের দারুণ জুটি গড়ে।
আয়ারল্যান্ড ম্যাচের আগে ধাক্কা খায় সিমি সিং ও বেন হোয়াইট কোভিড পজিটিভ হওয়ায়। একই কারণে আগে থেকেই নেই বড় ভরসা পল স্টার্লিং। টস ভাগ্যকে অবশ্য পাশে পায় তারা।
স্যাবাইনা পার্কের উইকেটে শুরুতে পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল খানিকটা। আইরিশ বোলাররা আঁটসাঁট লেংথে বল করে ডানা মেলতে দেননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের।
প্রথম ৬ ওভারে বাউন্ডারি আসে কেবল ২টি। অভিষিক্ত ওপেনার জাস্টিন গ্রিভস আউট হন ২৪ বলে ৭ রান করে।
আরেক ওপেনার শেই হোপ কিংবা তিনে নামা নিকোলাস পুরান, রানের গতি বাড়াতে পারেননি দুজনের কেউ। খুব একটা স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে না পারে ৩৪ বলে ১৩ করে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের অফ স্পিনে উইকেট ছুঁড়ে ফেরেন পুরান।
১৭ ওভার উইকেট কাটিয়ে হোপ আউট হয়ে যান ৪৪ বলে ২৯ করে। এরপর রোস্টন চেইস যখন ফিরলেন স্রেফ ১ রানে, টানা তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে রান তখন ১৯ ওভারে ৪ উইকেটে ৬২।
চারে নামা ব্রুকস তখনও উইকেটে নতুন। তার সঙ্গী হন পেলার্ড। একটু সময় নিয়ে থিতু হন দুজন। সময়ের সঙ্গে সহজ হয়ে আসে উইকেট। ব্রুকস ও পোলার্ডের ব্যাটের ধারও বাড়তে থাকে। বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিতই।
ব্রুকস ফিফটিতে পা রাখেন ৬১ বলে। ফিফটির পর এক ওভারে চোখধাঁধানো দুটি শটে ছক্কা মারেন কার্টিস ক্যাম্পারকে।
পোলার্ডের ফিফটি আসে ৫১ বলে। ওয়ানডেতে তার চতুর্দশ ফিফটি এটি, সবশেষ পাঁচ ইনিংসে তৃতীয়।
চারটি করে চার ও ছক্কায় তার ৬৬ বলে ৬৯ রানের ইনিংস থামে ক্রেইগ ইয়াংকে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে।
একটু পরই ব্রুকসের সেঞ্চুরি আশা থামান মার্ক অ্যাডায়ার। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৯ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসটি শেষ হয় সেঞ্চুরি থেকে ৭ রান দূরে।
এরপর দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় উইকেটের পতন হয় নিয়মিত। শেষ দিকে ২ ছক্কায় ৮ বলে ১৮ করেন ওডিন স্মিথ।
আয়ারল্যান্ড রান তাড়ায় বড় ধাক্কা খায় শুরুতেই। অভিজ্ঞ উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডকে রানের দেখা পেতে দেননি নতুন বল হাতে নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন।
দ্বিতীয় উইকেটে অবশ্য ভালো জুটি গড়েন অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি ও তিনে নামা ম্যাকব্রাইন। রান রেট গতিময় না হলেও উইকেট ধরে রেখে দলকে এগিয়ে নেন দুজন। ওডিন স্মিথের বল হেলমেটে লাগার কিছুক্ষণ পর ম্যাকব্রাইন ৩৪ রানে মাঠ ছাড়ায় জুটি থামে ৬১ রানে।
এরপর আরও একটি ভালো জুটি পায় আয়ারল্যান্ড। এবার বালবার্নিকে সঙ্গ দেন হ্যারি টেক্টর। শতরানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে রাখেন দুজন।
শেষ ১৪ ওভারে আয়ারল্যান্ডের প্রয়োজন পড়ে ১০৫ রান। উইকেট তখনও বাকি ৮টি।
কিন্তু ৭১ রান করে (৯৪ বলে) বালবার্নির বিদায়ে ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়ার শুরু। পরের ওভারে টেক্টর উইকেট বিলিয়ে আসেন ৬৮ বলে ৫৩ করে স্মিথের বলে।
এরপর স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে না পেরে দ্রুত একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে আইরিশরা। ৩১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকেই একরকম ছিটকে পড়ে তারা। ম্যাকব্রাইনের কনকাশন বদলি নেমে নিল রক পারেননি কিছু করতে।
জর্জ ডকরেল কিছুক্ষণের জন্য আশা জাগালেও বিদায় নেন ২৫ বলে ৩০ করে। শেষ দিকে অ্যাডায়ার ৯ বলে ৩ ছক্কায় ২১ করে ব্যবধান কাম কিছুটা।
জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া ইনিংসের জন্য ম্যাচের সেরা শামার ব্রুকস। ওয়ানডে অভিষেকে ম্যাচ সেরা হওয়া চতুর্থ ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার তিনি। আগের তিনজন ডেসমন্ড হেইন্স, হেন্ডারসন ব্রায়ান ও ফিডেল এডওয়ার্ডস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই জয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে দুই দলের পয়েন্ট এখন পঞ্চাশ। তবে আয়ারল্যান্ড খেলে ফেলেছে ১৬ ম্যাচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১০টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৮.৫ ওভারে ২৬৯ (হোপ ২৯, গ্রিভস ৭, পুরান ১৩, ব্রুকস ৯৩, চেইস ১, পেলার্ড ৬৯, হোল্ডার ১৬, শেফার্ড ২, স্মিথ ১৮, জোসেফ ০, আকিল ৫*; লিটল ১০-১-৪৬-১, অ্যাডায়ার ৮.৫-১-৩৮-৩, ইয়াং ৯-০-৫৬-৩, ক্যাম্পার ১০-০-৪৭-১, ম্যাকব্রাইন ৮-০-৫২-২, ডকরেল ৩-০-২৩-০)।
আয়ারল্যান্ড: ৪৯.১ ওভারে ২৪৫ (পোর্টারফিল্ড ০, বালবার্নি ৭১, ম্যাকব্রাইন ৩৪ (আহত অবসর), টেক্টর ৫৩, ক্যাম্পার ৬, টাকার ৯, ডকরেল ৩০, ডেলানি ৬, রক ৫, অ্যাডায়ার ২১*, ইয়াং ০, লিটল ০; হোল্ডার ১০-১-৪৮-১, আকিল ১০-০-৩৫-১, জোসেফ ১০-০-৫৫-৩, শেফার্ড ৯-০-৫-৩, স্মিথ ৫.১-০-২৬-২, চেইস ৫-০-৩০-০)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামার ব্রুকস।