‘স্পেশাল কিছুর’ আশায় বাংলাদেশ, ‘নার্ভাস’ নিউ জিল্যান্ড

বিশেষ কোনো অর্জন আর প্রাপ্তি বিশ্বাস জোগায় নতুন ইতিহাস গড়ার। দীর্ঘদিনের বন্ধ আগল খুলতে পারলে তা খুলে দেয় নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। বাংলাদেশের সামনে এখন তেমন কিছুরই হাতছানি। নিউ জিল্যান্ডে প্রথমবার টেস্ট জয়ের পর লক্ষ্য এবার সিরিজ জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2022, 03:41 PM
Updated : 8 Jan 2022, 04:06 PM

দ্বিতীয় টেস্টের আগে এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ড, দুই দলের জন্যই যা নতুন অভিজ্ঞতা। সিরিজ জয়ের অভিযানে নামছে বাংলাদেশ আর সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে নিউ জিল্যান্ড, এমন কিছু হয়নি আগে কখনও!

ক্রাইস্টচার্চে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টটি শুরু রোববার বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায়। বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যে ম্যাচকে বলছেন, বাংলাদেশের স্পেশাল কিছু অর্জনের ম্যাচ।

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের অভাবনীয় জয়ে দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে জিততে পারলে তো বটেই, ড্র করতে পারলেও দেশের মাটিতে কিউইদের আরেকটি গর্বের ধারায় ছেদ টানতে পারবেন মুমিনুলরা।

নিজেদের আঙিনায় সবশেষ ৮ টেস্ট সিরিজই জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। এবার জয়ের সুযোগ আর নেই, তবে ক্রাইস্টচার্চে জিততে পারলে অপরাজেয় যাত্রা অন্তত অব্যাহত থাকবে। নিজেদের দেশে নিউ জিল্যান্ড সবশেষ হেরেছে ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এশিয়ার কোনো দেশ এখানে সবশেষ সিরিজ জিতেছে সেই ২০১১ সালে, সেবার ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল মিসবাহ-উল-হকের পাকিস্তান।

দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ ডমিঙ্গো বললেন, শুধু বিশ্ব ক্রিকেটে সাড়া জাগানোই নয়, নিজেদের দেশের জন্যও দারুণ কিছুর নজির রাখতে মুখিয়ে আছে এই দল।

“এই দলটা তরুণ। অভিজ্ঞ কয়েকজন আসেনি, যারা নিউ জিল্যান্ডে আগে অনেক খেলেছে। দলটা দারুণ উজ্জীবিত। প্রাণশক্তিতে ভরপুর। এই তরুণরা বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে চায়। তারা খুবই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা এমন কিছু করতে চায়, আগের কোনো বাংলাদেশ দল যা করতে পারেনি, নিউ জিল্যান্ডে সিরিজ জয়।”

“অর্ধেক পথ পেরিয়েছে তারা। কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে স্পেশাল কিছু অর্জনের জন্য ওরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেকটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে তুলতে পারে।”

প্রথম টেস্টের আলোচিত বিষয়গুলোর একটি ছিল উইকেট। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া থাকলেও খুব বেশি ছিল না তা। উইকেটের আর্দ্রতাও দ্রুত শুকিয়ে ব্যাটিং উপযোগী হয়ে পড়ে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের উইকেট নিশ্চিতভাবেই হতে যাচ্ছে অনেক সবুজ। বাউন্স তো এখানে সবসময়ই থাকে।

তবে আগের টেস্টে দারুণ জয়ে উজ্জীবিত দল তাতে ভড়কে যাচ্ছে না বলেই জানালেন ডমিঙ্গো। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলামদের পারফরম্যান্স যা ছিল, তাতে সবুজ উইকেটেও কিউইদের চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস পাচ্ছেন কোচ।

“তাওরাঙ্গার (প্রথম টেস্টের ভেন্যু) চেয়ে এখানে হয়তো উইকেটে ফাস্ট বোলারদের সহায়তা বেশি থাকবে। তবে সেটা আমাদেরও ভালোভাবে খেলায় রাখবে। কারণ আমাদেরও এই মুহূর্তে দারুণ কিছু ফাস্ট বোলার আছে। খুবই মানসম্পন্ন তিনজন ফাস্ট বোলার আছে, যারা দারুণ আত্মবিশ্বাসী ও এটা জানে যে, উইকেটে সহায়তা থাকলে তারা ধস নামাতে পারে।”

প্রথম দিনে উইকেট দারুণ পেস সহায়ক থাকে বলে টস এখানে ম্যাচের ফলে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কোচ।

“টস এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমার কোনো সংশয়ই নেই যে টস জিতলে নিউ জিল্যান্ড বোলিং করবে। আমরাও টস জিতলে বোলিংই করব। কাজেই টস খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে।”

নিজেদের আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি ডমিঙ্গো বাংলাদেশের সম্ভাবনা দেখছেন প্রতিপক্ষের বাস্তবতা ভাবনায় রেখেও। সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে থাকা টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা চাপে থাকবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কোচ।

“ওরা মানসম্পন্ন দল, অবশ্যই এই হার ওদেরকে ব্যথিত করেছে। তবে দ্বিতীয় টেস্টের সময় কিছুটা নার্ভাসও থাকবে তারা। কিছুটা বিরতির পর ওরা টেস্ট খেলেছে, হেরে গেছে। এরপর গুছিয়ে নেওয়ার সময় খুব বেশি পায়নি। দলে হয়তো দু-একটি পরিবর্তন আনতে চাইবে।”

“এই ম্যাচ খেলার সময় তারা জানবে যে, সবসময় নিজেদের পারফরম্যান্সের চূড়ায় থাকতে হবে সিরিজ জিতে সমতা ফেরাতে হলে। সেটা আমাদের পক্ষে কাজ করতে পারে। ওরা সম্ভবত চাপে থাকবে। ওরা আশা করেনি যে বাংলাদেশের কাছে হেরে যাবে। তাই চাপে থাকবেই।”