খাওয়াজার জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের সামনে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ

প্রায় আড়াই বছর পর দলে ফিরেই সেঞ্চুরি। উসমান খাওয়াজার ক্ষুধা মিটল না তাতে। পরের ইনিংসেও উপহার দিলেন ঝকঝকে আরেকটি শতক। সিডনি টেস্টে তার জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ দিল অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2022, 08:57 AM
Updated : 8 Jan 2022, 11:35 AM

অ্যাশেজে চতুর্থ টেস্টের চতুর্থ দিন ইংলিশদের ২৯৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৬ উইকেটে ২৬৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। ৩৮৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩০ রানে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা।

শেষ দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন আরও ৩৫৮ রান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হোয়াইটওয়াশ করার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়ার চাই ১০ উইকেট।

ইংল্যান্ডের জন্য কাজটি বেশ কঠিন। কারণ নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই তাদের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লিডসে ২০১৯ সালে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় তাদের সর্বোচ্চ।

অস্ট্রেলিয়ার বিশাল এই সংগ্রহ এনে দেওয়ার নায়ক খাওয়াজা প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রান করার পর এবার ২ ছক্কা ও ১০ চারে করেন অপরাজিত ১০১ রান। সিডনি ক্রিকেট মাঠে ডগ ওয়াল্টার্স ও রিকি পন্টিংয়ের পর টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়লেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

২০১৯ সালের অগাস্টের পর জাতীয় দলে ফিরে আরও কিছু অর্জন ধরা দিয়েছে প্রথমবারের মতো টেস্টে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা খাওয়াজার হাতে। অ্যাশেজ টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা নবম ক্রিকেটার তিনি। পাঁচ নম্বর বা এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি করা টেস্ট ইতিহাসের দশম ব্যাটসম্যান এখন খাওয়াজা।

অবদান রেখেছেন ক্যামেরন গ্রিনও। রানের খোঁজে থাকা এই অলরাউন্ডার সিরিজে প্রথমবার পেলেন পঞ্চাশের ছোঁয়া। খাওয়াজার সঙ্গে ১৭৯ রানের জুটিতে তিনি করেন ৭৪।

৭ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে খেলতে নামা ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস এদিন টেকেনি ১০ ওভারও। দলের খাতায় যোগ করতে পারে কেবল আর ৩৬ রান।

ন্যাথান লায়নকে স্লগ-সুইপ করে মিড-অনে ধরা পড়েন জ্যাক লিচ। ১০৩ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা জনি বেয়ারস্টোকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান স্কট বোল্যান্ড। নিজের নামের পাশের আর মাত্র ১০ রান যোগ করতে পারেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। বোল্যান্ডের বলে অ্যালেক্স কেয়ারির গ্লাভসে স্টুয়ার্ট ব্রড ধরা পড়লে শেষ হয় সফরকারীদের ইনিংস।

১২২ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতে চাপে রাখে ইংল্যান্ড। মার্ক উড দ্রুত ফিরিয়ে দেন ডেভিড ওয়ার্নাকে। এই পেসারের ১৪৬ কিলোমিটার গতির বল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারের ব্যাটের কানা নিয়ে জমা পড়ে বদলি হিসেবে কিপিং করতে নামা অলি পোপের হাতে।

শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন মার্কাস হ্যারিস ও মার্নাস লাবুশেন। তাদের ৪০ রানের জুটি ভাঙে লিচের বলে হ্যারিস কট বিহাইন্ড হলে। লাঞ্চ বিরতির পর প্রথম ওভারেই লাবুশেনকে ফিরিয়ে দেন উড।

উডকে ছক্কায় ওড়ানো স্টিভেন স্মিথের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন লিচ। ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করেন খাওয়াজা ও গ্রিন।

অসমান বাউন্সের উইকেটে এদিন ব্যাটিং করা সহজ ছিল না। শুরুতে দেখেশুনে খেলতে থাকেন খাওয়াজা ও গ্রিন। দুইজনে কাটিয়ে দেন দ্বিতীয় সেশন।

৩৫ রান নিয়ে তৃতীয় সেশন শুরু করা খাওয়াজা রানের গতিতে দম দেন। ৮৬ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া এই ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১৩১ বলে। চা-বিরতির পর ৬৪ বলে ৬৬ রান করেন তিনি।

গ্রিন ফিফটি তুলে নেন ৯৬ বলে। পরে তিনি যেতে পারেননি বেশিদূর। লিচের বলে স্লগ সুইপ করে আকাশে তুলে দিয়ে ফেরেন ৭ চার ও এক ছক্কায় ৭৪ রান করে। পরের বলেই ইংলিশ স্পিনার ফিরিয়ে দেন অ্যালেক্স কেয়ারিকে।

এরপর অস্ট্রেলিয়া ঘোষণা করে দেয় ইনিংস। ১৩৮ বলে ১০১ রান করে অপরাজিত থেকে মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন খাওয়াজা।

বিশাল লক্ষ্য তাড়ার চ্যালেঞ্জে নেমে জ্যাক ক্রলি ও হাসিব হামিদ কাটিয়ে দেন শেষ বেলার ১১ ওভার। ক্রলি ২২ ও হামিদ ৮ রানে খেলছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪১৬/৮ ডিক্লে.

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৮/৭) ৭৯.১ ওভারে ২৯৪ (বেয়ারস্টো ১১৩, লিচ ১০, ব্রড ১৫, অ্যান্ডারসন ৪*; কামিন্স ২০-৬-৬৮-২, স্টার্ক ১৬-২-৫৬-১, বোল্যান্ড ১৪.১-৬-৩৬-৪, গ্রিন ৯-৪-২৪-১, লায়ন ১৭-০-৮৮-২, লাবুশেন ৩-০-৭-০)

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ৬৮.৫ ওভারে ২৬৫/৬ ডিক্লে. (হ্যারিস ২৭, ওয়ার্নার ৩, লাবুশেন ২৯, স্মিথ ২৩, খাওয়াজা ১০১*, গ্রিন ৭৪, কেয়ারি ০; অ্যান্ডারসন ১২-১-৩৪-০, ব্রড ১১-৩-৩১-০, উড ১৫-০-৬৫-২, লিচ ২১.৫-১-৮৪-৪, রুট ৭-০-৩৫-০, মালান ২-০-১৩-০)

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৮৮) ১১ ওভারে ৩০/০ (ক্রলি ২২*, হামিদ ৮*; স্টার্ক ৪-০-১০-০, কামিন্স ৪-০-১৫-০, বোল্যান্ড ৩-১-৫-০)