অ্যাশেজের সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিন ৭ উইকেটে ২৫৮ রান করেছে জো রুটের দল। ৮ উইকেটে ৪১৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে তারা এখনও পিছিয়ে ১৫৮ রানে।
বিনা উইকেটে ১৩ রান নিয়ে শুক্রবার খেলতে নামা ইংল্যান্ড বিপদে পড়ে যায় শুরুতেই। সেখান থেকে দলকে পথে ফেরান বেয়ারস্টো ও স্টোকস। পঞ্চম উইকেটে দুইজনে গড়েন ১২৮ রানের জুটি।
স্টোকস ৬৬ রান করে ফিরে গেলেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বেয়ারস্টো। ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ১০৩ রান করে আছেন অপরাজিত। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের শতক ছিল তার। অ্যাশেজে এটি বেয়ারস্টোর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, দুটিই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।
তৃতীয় সকালেও বৃষ্টির বাধায় সময়মতো শুরু হয়নি খেলা। প্রথম সেশনে তাই খেলা হয় কেবল ১৬.৫ ওভার। এই সময়েই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ইংলিশরা।
আগের দিন স্টার্কের নো বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া জ্যাক ক্রলি এদিন জীবন পান। প্যাট কামিন্সের বলে তার ক্যাচ এবার লেগ স্লিপে ধরতে পারেননি মার্কাস হ্যারিস। ইংলিশ ওপেনারের স্টাম্প কয়েক ওভার পর এলোমেলো করে দেন স্কট বোল্যান্ড। মেলবোর্ন টেস্টে রেকর্ড গড়া বোলিং করা এই পেসার পরে শূন্য রানে ফেরত পাঠান ইংলিশ অধিনায়ক রুটকে। টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ‘ডাক’ পেলেন রুট দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারেই দাভিদ মালানকে ফেরান ক্যামেরন গ্রিন।
বোল্যান্ড ও গ্রিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে রানই করতে পারছিল না ইংল্যান্ড। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে করে চারটিই মেডেন নেন গ্রিন, বোল্যান্ড নিজের প্রথম পাঁচ ওভারের পাঁচটিই। ৩৬ রানে থেকেই তিন উইকেট হারায় ইংলিশরা।
প্রথম ২০ বলে এক রান করা স্টোকস এক ওভারে দুই চার মারেন কামিন্সকে। পরের ওভারেই ইংলিশ অলরাউন্ডারকে ফেরানোর সুযোগ পান কামিন্স। কিন্তু স্টোকসের ফিরতি ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।
ভাগ্য এদিন সহায় ছিল স্টোকসের। ৩১তম ওভারে বিস্ময়করভাবে আবারও বেঁচে যান তিনি। রাউন্ড দা উইকেটে করা গ্রিনের বল ছেড়ে দেন স্টোকস। প্রথম দেখাতেই মনে হয়, বল স্টাম্পে লেগে আশ্রয় নেয় কিপারের গ্লাভসে। টিভি ধারাভাষ্যকার সঙ্গে সঙ্গে সেটি বলেনও। তবে বেলস পড়েনি।
সংশয়ের সৃষ্টি হয় এরপরই। বেলস না পড়াতেই হয়তো গ্রিন ভাবেন, বল লেগেছে স্টোকসের পায়ে। তিনি এলবিডব্লিউর আবেদন করেন। আম্পায়ার পল রাইফেলও হয়তো তাই ভেবে আঙুল তুলে দেন। স্টোকসের নেওয়া রিভিউয়ে দেখা যায়, তার প্যাডের ধারেকাছে ছিল না বল। বরং ১৩৪.১ কিলোমিটার গতির বল সজোরে আঘাত করে অফ স্টাম্পের এক পাশে। কিন্তু বেলস রয়ে যায় সেখানেই। নিয়ম অনুযায়ী বোল্ড নন।
নিজের ভাগ্য দেখে মাথায় হাত দিয়ে হাসিতে ফেটে পড়েন স্টোকস। ওয়ার্নার গিয়ে স্টাম্প নাড়িয়ে দেখতে থাকেন, এত জোরে আঘাতের পরও কীভাবে বেলস পড়ে না!
এরপর দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন সাইড স্ট্রাইনের চোট নিয়ে খেলতে নামা স্টোকস। তাকে সঙ্গ দিয়ে যান বেয়ারস্টো। দুইজনে কাটিয়ে দেন দ্বিতীয় সেশন। চা-বিরতি থেকে ফিরে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ৭০ বলে ফিফটি করা স্টোকস। ন্যাথান লায়নের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬৬ করে।
মার্ক উড সঙ্গ দেন বেয়ারস্টোকে। দুইজনের জুটিতে আসতে থাকে দ্রুত রান। লায়নকে পরপর দুই ওভারে ছক্কায় ওড়ান বেয়ারস্টো। পরে গ্রিনকে তিন বলের মধ্যে মারেন একটি ছক্কা ও চার। কামিন্সকে মোট তিনটি ছক্কা হাঁকান উড। যেখানে টানা দুই বলে ছিল দুটি।
৭২ বলে ৭২ রানের এই জুটি ভাঙে উডের বিদায়ে। কামিন্সের শর্ট বলে পুল করে ব্যাটে বলে করতে পারেননি উড। প্রথমে মনে হয়েছিল বল শুধু হেলমেটে লেগেই জমা পড়েছে পয়েন্টে থাকা লায়নের হাতে। অস্ট্রেলিয়ার আবেদনে তাই সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে স্বাগতিকরা রিভিউ নিলে দেখা যায় উডের গ্লাভসে সামান্য ছুঁয়েছে বল। সাজঘরে ফিরে যান ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩৯ রান করে উড।
দিনের শেষ ওভারে কামিন্সকে চার মেরে ১৩৮ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অংকে পা রাখেন বেয়ারস্টো। ৮০ টেস্টের ক্যারিয়ারে যা তার সপ্তম সেঞ্চুরি।
চতুর্থ দিনে বেয়ারস্টোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের চ্যালেঞ্জ কতটুকু সামলাতে পারেন জ্যাক লিচ ও বাকিরা, সেটাই দেখার বিষয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪১৬/৮ ডিক্লে.
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৩/০) ৭০ ওভারে ২৫৮/৭ (হামিদ ৬, ক্রলি ১৮, মালান ৩, রুট ০, স্টোকস ৬৬, বেয়ারস্টো ১০৩*, বাটলার ০, উড ৩৯, লিচ ৪*; কামিন্স ২০-৬-৬৮-২, স্টার্ক ১৪-২-৪৯-১, বোল্যান্ড ১২-৬-২৫-২, গ্রিন ৯-৪-২৪-১, লায়ন ১২-০-৭১-১, লাবুশেন ৩-০-৭-০)