ফেরার ম্যাচ সেঞ্চুরিতে রাঙালেন খাওয়াজা

ট্রাভিস হেড কোভিড আক্রান্ত না হলে হয়ত একাদশেই থাকতেন না উসমান খাওয়াজা। সতীর্থের দুর্ভাগ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগটা দুই হাতে লুফে নিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান। দারুণ এক সেঞ্চুরিতে রাঙালেন ফেরার উপলক্ষ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2022, 11:20 AM
Updated : 6 Jan 2022, 11:58 AM

খাওয়াজার ঝকঝকে ইনিংসের সুবাদে অ্যাশেজের সিডনি টেস্টে ৮ উইকেটে ৪১৬ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। এখনও ৪০৩ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা।

স্বাগতিকদের চারশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর খাওয়াজা করেন ১৩৭ রান। ২৬০ বল ও ৪১০ মিনিট স্থায়ী তার ইনিংসটি সাজানো ১৩ চারে। স্টিভেন স্মিথের রান ৬৭।

২০১৯ সালের অ্যাশেজের মাঝপথে দল থেকে বাদ পড়ার পর আর ফেরা হচ্ছিল না খাওয়াজার। লম্বা সময় পর সুযোগ পেয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি উপহার দিলেন সেঞ্চুরি, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম ও অ্যাশেজে দ্বিতীয়।

খাওয়াজার ব্যাটিং মাস্টারক্লাসের মাঝে বল হাতে ঝলক দেখান স্টুয়ার্ট ব্রড। এক ম্যাচ পর দলে ফিরে তিনি নেন ১০১ রানে ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিতীয়বার পেলেন তিনি পাঁচ উইকেট, আগেরটি ২০১৩ সালে সিডনিতে।

১৯৮৭ সালে রিচার্ড হ্যাডলির পর সফরকারী দলের সবচেয়ে বয়স্ক পেসার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট নিলেন ব্রড। টেস্ট শুরুর দিন হিসেবে নেওয়া হয় বয়সের ক্ষেত্রে। নিউ জিল্যান্ডের কিংবদন্তি পেসার ৩৬ বছর ১৭৬ দিনে গড়েছিলেন এই কীর্তি। মেলবোর্নের ওই টেস্টে দুই ইনিংসেই তিনি পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট করে। ব্রড পেলেন ৩৫ বছর ১৯৫ দিনে।

বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম দিনে খেলা হয়নি খুব একটা। ৩ উইকেটে ১২৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম সেশনেই তিনবার বাধা দেয় বৃষ্টি। তবে খেলা হয়েছে ৩১ ওভার।

উইকেটে ছিল অসমান বাউন্স, সিডনিতে সচরাচর যেমন ব্যাটিং উইকেট দেখা যায় মোটেও তেমন ছিল না এদিন। সেই চ্যালেঞ্জ সামলে প্রথম সেশন কাটিয়ে দেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান খাওয়াজা ও স্মিথ।

এই সময় একটি সুযোগ অবশ্য পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু জ্যাক লিচের বলে ২৮ রানে থাকা খাওয়াজার ক্যাচ স্লিপে মুঠোয় জমাতে পারেননি জো রুট।

লাঞ্চের আগে ১১৬ বলে সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন স্মিথ। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে নতুন বল নিয়ে সাফল্য পায় ইংল্যান্ড। ৬৭ রান করা স্মিথকে কট বিহাইন্ড করে ফেরত পাঠান ব্রড। ভাঙে ১১৫ রানের জুটি।

ব্রডের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বল আলগা শটে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন ক্যামেরন গ্রিন। অ্যালেক্স কেয়ারিকে ইনিংস বড় করতে দেননি রুট। ইংলিশ অধিনায়কের অফ স্পিনে বল আকাশে তুলে মিড-অনে ধরা পড়েন কেয়ারি।

ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ১৩৪ বলে ফিফটি করা খাওয়াজা অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাড়াতে থাকেন রান। এই জুটিতেই খাওয়াজা ২০১ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অংকে পা রাখেন।

চা-বিরতির পর ফিরে যান কামিন্স। ব্রডের বাউন্সারে তার গ্লাভস ছুঁয়ে বল জমা পড়ে জস বাটলারের গ্লাভসে। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে ফেরায় ইংল্যান্ড।

এরপর মিচেল স্টার্ককে নিয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন খাওয়াজা। তার বিদায়েই ৬৭ রানের এই জুটি ভাঙে। ব্রডের বলে ব্যাটের ভেতরের কানা নিয়ে লেগ স্টাম্প এলোমেলো হয়ে যায় খাওয়াজার। এরই সঙ্গে ইংলিশ পেসার পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ১৯তম পাঁচ উইকেট।

দুই ওভার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। স্টার্ক মাঠ ছাড়েন ৩ চারে ৩৪ রান নিয়ে, ন্যাথান লায়ন করেন ১৬।

শেষ বেলায় ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে একটি উইকেট নিতে পারত অস্ট্রেলিয়া। স্টার্কের বলে স্লিপে ধরা পড়েন জ্যাক ক্রলি। মাঠ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইংলিশ ওপেনার, এমন সময় ধরা পড়ে পায়ের ‘নো বল’। পরে বিপদ ছাড়াই দিন শেষ করে ইংল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১২৬/৩) ১৩৪ ওভারে ৪১৬/৮ ডিক্লে. (স্মিথ ৬৭, খাওয়াজা ১৩৭, গ্রিন ৫, কেয়ারি ১৩, কামিন্স ২৪, স্টার্ক ৩৪*, লায়ন ১৬*; অ্যান্ডারসন ৩০-৯-৫৪-১, ব্রড ২৯-৫-১০১-৫, স্টোকস ১৩.৫-৩-৩৭-০, উড ২৬.১-৬-৭৬-১, লিচ ২৪-২-৮৯-০, মালান ৩-০-১৫-০, রুট ৮-০-৩৬-১)

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫ ওভারে ১৩/০ (হামিদ ২*, ক্রলি ২*; কামিন্স ৩-২-১-০, স্টার্ক ২-০-৪-০)