জোহানেসবার্গে জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে দ. আফ্রিকা

জোহানেসবার্গ টেস্টের তৃতীয় দিনে ব্যাটে-বলে লড়াইটা হলো দারুণ। ব্যর্থতার বলয়ে ঘুরপাক খাওয়া চেতেশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কা রাহানের ফিফটিতে ভারত জাগাল বড় লক্ষ্য দেওয়ার আশা। কাগিসো রাবাদার দুর্দান্ত এক স্পেলে ঘুরে দাঁড়াল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে দলের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করলেন অধিনায়ক ডিন এলগার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2022, 05:11 PM
Updated : 5 Jan 2022, 05:30 PM

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২৪০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা বুধবার তৃতীয় দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ১১৮ রান তুলে। ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরাতে স্বাগতিকদের প্রয়োজন ১২২ রান। দক্ষিণ আফ্রিকায় অধরা সিরিজ জিততে ভারতের চাই ৮ উইকেট।

হেলমেটে-শরীরে বলের আঘাত সয়ে ১২১ বল খেলে ৪৬ রানে অপরাজিত আছেন এলগার। উইকেটে তার সঙ্গী রাসি ফন ডার ডাসেন খেলছেন ১১ রানে।

দা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনেও উইকেট থেকে সহায়তা পেয়েছেন পেসাররা। একটা পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৫৫ রানের শক্ত অবস্থানে থেকে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৬৬ রানে। প্রথম ইনিংসে ২৭ রানের ঘাটতি পুষিয়ে আড়াইশর কাছাকাছি লক্ষ্য দিতে পারে তারা।

টেস্টে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে চাপের মধ্যে থাকা দুই ব্যাটসম্যান রাহানে করেন ৫৮, পুজারা ৫৩। বিরাট কোহলির চোটে সুযোগ পাওয়া হনুমা বিহারি অপরাজিত থাকেন ৪০ রানে।

২ উইকেটে ৮৫ রান নিয়ে দিন শুরু করে ভারত। প্রথম ঘণ্টায় তারা ১৪ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে তোলে ৬৬ রান। রাবাদার হাত ধরে পরের ঘণ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। এই সময়ে ১০ ওভারে ৩৭ রান তুলতে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।

নিজের টানা তিন ওভারে রাহানে, পুজারা ও রিশাভ পান্তের উইকেট নেন রাবাদা। লাঞ্চের আগে লুঙ্গি এনগিডির শিকার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

তৃতীয় উইকেটে ১১১ রানের জুটি গড়েন চেতেশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কা রাহানে। ছবি: র‍য়টার্স

একাদশে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া অবস্থান শক্ত করার লড়াইয়ে পুজারা ও রাহানে দিনের শুরুটা করেন দারুণ। আগের দিন ৩৫ রানে অপরাজিত পুজারা দ্বিতীয় ওভারে এনগিডির তিন বলের মধ্যে মারেন দুটি বাউন্ডারি। মার্কো ইয়ানসেনকে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মারার পর শর্ট বল কাট করে পয়েন্টের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ছক্কা হাঁকান রাহানে।

পুজারা ফিফটি পূর্ণ করেন ৬২ বলে। ৭ ইনিংস পর টেস্টে পঞ্চাশ ছুঁতে পারলেন তিনি।

ডুয়ানে অলিভিয়েরকে পরপর দুটি চার মেরে রাহানে ফিফটির স্বাদ পান ৯ ইনিংস পর, ৬৭ বলে। তাদের তৃতীয় উইকেট জুটির রান স্পর্শ করে তিন অঙ্ক।

এরপরই পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। রাহানেকে কট বিহাইন্ড করে ১১১ রানের জুটি ভাঙেন রাবাদা। ৭৮ বলে ৮ চার ও একটি ছক্কায় গড়া রাহানের ৫৮ রানের ইনিংস।

রাবাদার পরের ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ হয় পুজারার ৮৬ বলে ১০টি চারে খেলা ৫৩ রানের ইনিংস। পরে তার বলে বাজে শট খেলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কিপার-ব্যাটসম্যান পান্ত। এনগিডির বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন অশ্বিনও।

২ উইকেটে ১৫৫ থেকে ভারতের স্কোর তখন ৬ উইকেটে ১৮৪।

সেখান থেকে তাদের সংগ্রহ আড়াইশ পার হয় মূলত বিহারি ও শার্দুল ঠাকুরের নৈপুণ্যে। সপ্তম উইকেটে দুজন উপহার দেন ৪০ বলে ৪১ রানের জুটি। যেখানে অগ্রণী ছিলেন শার্দুল। আগের দিন রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে ৭ উইকেট নেওয়া এই পেসার ২৪ বলে ৫ চার ও একটি ছক্কায় করেন ২৮ রান। বিহারি ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন ৮৪ বলে ৬ চারে।

টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নেন পেসার কাগিসো রাবাদা। ছবি: রয়টার্স  

রাবাদা, এনগিডি ও ইয়ানসেন নেন ৩টি করে উইকেট। অন্যটি আরেক পেসার অলিভিয়েরের।

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয় ভালো। চা বিরতির আগে ৭ ওভারে ৩৪ রান তোলেন এলগার ও এইডেন মারক্রাম।

সিরিজে তাদের সর্বোচ্চ ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মারক্রামের বিদায়ে। তার বিপক্ষে শার্দুলের চার বলের মধ্যে তিনবার আবেদন হয় এলবিডব্লিউয়ের। তৃতীয়বারে ধরা দেয় সাফল্য। ৩৮ বলে ৬ চারে মারক্রাম করেন ৩১ রান।

প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা কিগান পিটারসেন এবারও শুরুটা করেন ভালো। তার ও এলগারের ব্যাটে এগিয়ে যায় দল। ২৮ রানে পিটারসেনকে এলবিডব্লিউ করে ৪৬ রানের এই জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার অশ্বিন।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের শাদাব খানের পর জোহানেসবার্গে টেস্টে উইকেট পেলেন কোনো স্পিনার। এর মাঝে এখানে উইকেট পতন হয়েছে ১১১টি, যার ১০৯টি পেসারদের, বাকি দুটি রান আউট।

তৃতীয় উইকেটে ফন ডার ডাসেনের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ২৫ রানের জুটিতে দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন অধিনায়ক এলগার। উজ্জ্বল করেন তারা দলের জয়ের সম্ভাবনা। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ২০২

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২২৯

ভারত ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৮৫/২) ৬০.১ ওভারে ২৬৬ (পুজারা ৫৩, রাহানে ৫৮, বিহারি ৪০*, পান্ত ০, অশ্বিন ১৬, শার্দুল ২৮, শামি ০, বুমরাহ ৭, সিরাজ ০; রাবাদা ২০-৩-৭৭-৩, অলিভিয়ের ১২-১-৫১-১, এনগিডি ১০.১-২-৪৩-৩, ইয়ানসেন ১৭-৪-৬৭-৩, মহারাজ ১-০-৮-০)

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৪০) ৪০ ওভারে ১১৮/২  (মারক্রাম ৩১, এলগার ৪৬*, পিটারসেন ২৮, ফন ডার ডাসেন ১১*; বুমরাহ ১০-১-৪২-০, শামি ৯-২-২২-০, শার্দুল ৯-১-২৪-১, সিরাজ ৪-০-১৪-০, অশ্বিন ৮-১-১৪-১)