নির্ঘুম রাত শেষে মুমিনুলের আনন্দময় দিন

চতুর্থ দিনের মাঠের লড়াই তো শেষ হলো। হোটেলে ফিরে রাতে মুমিনুল হকের লড়াই শুরু হলো নিজের সঙ্গে। চোখের পাতা যে এক করাই মুশকিল! রোমাঞ্চ-উত্তেজনার শিহরণ, শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচল, পরদিন কী হয় না হয়, সবকিছু মিলিয়ে রাতটা একরকম নির্ঘুম কাটে বাংলাদেশ অধিনায়কের। দলের সবার অবস্থাও নিশ্চয়ই কম-বেশি এমনই! ভেতরের সেই ঝড়কে দমিয়ে মাঠে নেমে শেষ দিনেও দুর্দান্ত পারফর্ম করে দল। ধরা দেয় অসাধারণ জয়। অধিনায়কের কণ্ঠে এখন তাই তৃপ্তির সুর, মুখে মধুর হাসি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2022, 05:53 AM
Updated : 5 Jan 2022, 12:32 PM

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ বড় লিড নেওয়ার পর জয়ের পথে এগিয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসের বোলিংয়ে। ইবাদত হোসেন চৌধুরির দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ড চতুর্থ দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে। প্রথম ইনিংসের ১৩০ রানের ঘাটতি মিটিয়ে কিউইদের রান তখন ছিল কার্যত ৫ উইকেটে ১৭।

বাংলাদেশ তখন অনেক এগিয়ে, তবে সেটিই তো ম্যাচ জয়ের নিশ্চয়তা নয়! জয়ের মতো অবস্থা থেকেও আগে বহু ম্যাচ হারের নজির আছে। সেই সব স্মৃতি জাগায় অজানা আশঙ্কা। হানা দেয় আততায়ী হয়ে। নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান রস টেইলর তখনও ক্রিজে। তার সঙ্গী তরুণ প্রতিভা রাচিন রবীন্দ্র। দুজনের একটি ভালো জুটি হলে আর পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা কিছু রান করলে, নিউ জিল্যান্ডের জয়ও ছিল খুবই সম্ভব।

ইতিহাস গড়া জয়ের হাতছানির সঙ্গে সুযোগ হারানোর শঙ্কা, সবকিছুর যোগফল ‘চাপ।’ মুমিনুলের চোখ থেকে তাই ঘুম উধাও। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল জানালেন তার আগের রাতের অভিজ্ঞতা।

“কালকে রাতে রুমে যাওয়ার পর সত্যি কথা আমি ঘুমাতে পারিনি। কারণ যখনই ৫ উইকেট পড়ে গেল, আমার মনে হচ্ছিল ওরা বেশি রান করবে না। কম-টম করতে পারে। এই টেনশনে ঘুম কম হচ্ছিল।”

শেষ দিনে শঙ্কাগুলিতে উড়িয়ে বাংলাদেশ আলিঙ্গন করে নেয় সম্ভাবনাকেই। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ৮ উইকেটে জিতে এগিয়ে যায় সিরিজে। ধরা দেয় নিউ জিল্যান্ডের মাঠে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়।

ভেতরে উত্তেজনা থাকলেও মাঠে সেসব চাপা দিয়েই রাখেন তিনি এবং তারা। মাঠে নেমে মনোযোগ রাখেন কেবলই ক্রিকেটে। প্রথম লক্ষ্য ছিল নিউ জিল্যান্ডকে অলআউট করা। সেটি হয়ে যাওয়ার পর জয়ের ঘণটা বাজতে থাকে মুমিনুলের মনে।

“কালকে যখন ইবাদত চারটা উইকেট, দ্রুত ব্রেক থ্রু দিল, তখন মনে হলো, আমরা হয়তো এই টেস্ট জেতার দিকে যাচ্ছি। আজকে সকালে ওরা অলরাউট হওয়ার পর আরও মোটামুটি পরিষ্কার হয়। তবে আগে থেকে এক্সাইটমেন্ট অতটা ছিল না। টিভিতে যদি দেখে থাকেন, আমাদের মধ্যে অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্ট ছিল না। আমরা শান্ত ও স্থির থাকার চেষ্টা করেছি।”

মুমিনুল এমনিতেও খুব বাকপটু নন। একটু অন্তর্মুখি, নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন। ছোট্ট কথায় কাজ সারেন। শেষ পর্যন্ত বহুকাঙ্ক্ষিত জয়টি যখন ধরা দিল, মুমিনুল যেন কথা হারিয়ে ফেললেন আরও।

“আমার মনে হয়, আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। অবিশ্বাস্য জয় এটি। গতকাল রাতে সত্যি বলতে আমি ঘুমাতে পারিনি। কারণ চাপ অনুভব করছিলাম, ভাবছিলাম যে আজকে কী হবে।”

“এই ম্যাচে জয়টা খুব জরুরি ছিল।  গত ২ বছরে আমরা টেস্টে খুব একটা ভালো করতে পারিনি। টেস্টে উন্নতি করতে আমরা মুখিয়ে ছিলাম। এটা দলীয় প্রচেষ্টার ফসল, তিন বিভাগেই ভালো করেছি।”