জোহানেসবার্গ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে দুই দলই প্রায় সমতায়। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মঙ্গলবার প্রথম ইনিংসে ২২৯ রানে অলআউট হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পায় ২৭ রানের লিড।
দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রান ২ উইকেটে ৮৫। এগিয়ে তারা ৫৮ রানে। উইকেটে আছে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কা রাহানে।
দা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনেও উইকেটে মুভমেন্ট পেয়েছেন পেসাররা। দারুণ লাইন-লেংথ আর আঁটসাঁট বোলিংয়ে শার্দুলের শিকার ৬১ রানে ৭টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোনো ভারতীয় বোলারের সেরা বোলিং এটি। ২০১৫ সালে নাগপুরে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৬৬ রানে ৭ উইকেট ছিল আগের রেকর্ড।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন কিগান পিটারসেন। টেম্বা বাভুমার ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান।
১১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন ব্যাটিং শুরু করা ডিন এলগার এদিন প্রথম রানের দেখা পান ৩২ বল খেলে। আগের দিন মিলিয়ে ৪৭ ডট বলের খরা কাটান তিনি ম্যাচে অফ স্পিনার অশ্বিনের প্রথম ওভারে বাউন্ডারি মেরে।
জাসপ্রিত বুমরাহর বলে এলগারকে একবার কট বিহাইন্ডের আউট দেন আম্পায়ার। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, কিপার রিশাভ পান্ত গ্লাভসে জমানোর আগে বল মাটি স্পর্শ করেছিল। সিদ্ধান্ত পাল্টান থার্ড আম্পায়ার। তখন ২৭ রানে ব্যাট করছিলেন স্বাগতিক অধিনায়ক।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা পিটারসেনও ছিলেন ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে। আগের দিন ১৪ রানে অপরাজিত থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান এগিয়ে যান ফিফটির দিকে।
কিন্তু লাঞ্চ বিরতির আগে শার্দুলের তোপে এলোমেলো হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। ১ উইকেটে ৮৮ থেকে দ্রুতই তাদের স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ১০২!
শুরুতে এলগারকে ফিরিয়ে ২১১ বল স্থায়ী ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন শার্দুল। অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলে কিপারকে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। ১২০ বলে ৪টি চারে তিনি করেন ২৮ রান।
শামির চার বলের মধ্যে তিনটি চার মারার পথে পিটারসেন প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন ১০৩ বলে। এরপর ইনিংস বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি তিনি। শার্দুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শট খেলে ক্যাচ দেন স্লিপে। ১১৮ বলে ৯ চারে গড়া তার ৬২ রানের ইনিংস।
এর আগের ওভারে শামির বলে রাসি ফন ডার ডাসেনকে কট বিহাইন্ডের আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সে যাত্রায় রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেও টিকতে পারেননি তিনি। শার্দুলের বলে ধরা পড়েন উইকেটের পেছনেই।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, ফন ডার ডাসেনের আউট নিয়ে আলোচনার জন্য লাঞ্চ বিরতিতে ম্যাচ অফিসিয়ালদের সঙ্গে দেখা করেন অধিনায়ক এলগার ও দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজার।
৪.৫ ওভারের এই স্পেলে ২ মেডেনে ৮ রানে শার্দুল নেন ৩ উইকেট।
পঞ্চম উইকেটে কাইল ভেরেইনাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন টেম্বা বাভুমা। জমে ওঠে তাদের জুটি। ভেরেইনাকে এলবিডব্লিউ করে ৬০ রানের এ জুটিও ভাঙেন শার্দুল। রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি ৭২ বলে ২১ রান করা ব্যাটসম্যান।
অশ্বিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর শার্দুলকে চার মেরে বাভুমা ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৯ বলে। পরের বলেই তিনি বিদায় নেন পান্তের অসাধারণ এক ক্যাচে। শার্দুল পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। ৬ চার ও একটি ছক্কায় গড়া বাভুমার ইনিংসটি।
দ্রুত শামির বলে মিড অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কাগিসো রাবাদা। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর তখন ৭ উইকেটে ১৭৯।
সেখান থেকে মার্কো ইয়ানসেন ও কেশভ মহারাজের ৩৮ রানের অষ্টম উইকেট জুটিতে লিড পায় স্বাগতিকরা। ১২ রানের মধ্যে তারা হারায় শেষ ৩ উইকেট।
মহারাজকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন বুমরাহ। এক ওভারে ইয়ানসেন ও লুঙ্গি এনগিডিকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন শার্দুল।
পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। সপ্তম ওভারে তারা হারায় সিরিজে দারুণ ছন্দে থাকা ও এই টেস্টের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে। ইয়ানসেনের বলে তিনি ধরা পড়েন স্লিপে।
দারুণ কিছু বাউন্ডারি মারেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। তবে ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি। ৫টি চারে ২৩ রান করে এলবিডব্লিউ হন তিনি ডুয়ানে অলিভিয়েরের বলে।
দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন পুজারা ও রাহানে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পুজারা ৪২ বলে ৭ চারে ৩৫ রানে অপরাজিত আছেন। ২২ বলে ১১ রানে খেলছেন রাহানে।
তৃতীয় দিন দলের রান বাড়ানোর পাশাপাশি একাদশে নড়বড়ে হয়ে পড়া নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চ্যালেঞ্জও এই দুজনের সামনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ২০২
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩৫/১) ৭৯.৪ ওভারে ২২৯ (এলগার ২৮, পিটারসেন ৬২, ফন ডার ডাসেন ১, বাভুমা ৫১, ভেরেইনা ২১, ইয়ানসেন ২১, রাবাদা ০, মহারাজ ২১, অলিভিয়ের ১*, এনগিডি; বুমরাহ ২১-৫-৪৯-১, শামি ২১-৫-৫২-২, সিরাজ ৯.৫-২-২৪-০, শার্দুল ১৭.৫-৩-৬১-৭, অশ্বিন ১০-১-৩৫-০)
ভারত ২য় ইনিংস: ২০ ওভারে ৮৫/২ (রাহুল ৮, মায়াঙ্ক ২৩, পুজারা ৩৫*, রাহানে ১১*; রাবাদা ৬-১-২৬-০, অলিভিয়ের ৪-০-২২-১, এনগিডি ৩-১-৫-০, ইয়ানসেন ৬-২-১৮-১, মহারাজ ১-০-৮-০)