দ.আফ্রিকার পেসারদের আগুনে পুড়ল ভারতীয় ব্যাটিং

উইকেটে ছিল হালকা ঘাসের ছোঁয়া। মুভমেন্ট, সুইং ও বাউন্স ছিল দিন জুড়ে। দারুণভাবে সেসব কাজে লাগিয়ে আগুন ঝরা বোলিং উপহার দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। মার্কো ইয়ানসেন, ডুয়ানে অলিভিয়েরদের তোপে প্রথম ইনিংসে দুইশ পার হতেই গুটিয়ে গেল ভারত।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 05:01 PM
Updated : 3 Jan 2022, 05:09 PM

জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন ভারতকে ২০২ রানে থামিয়ে ব্যাটিং করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এইডেন মারক্রামকে হারিয়ে ৩৫ রান নিয়ে সোমবার দিন শেষ করেছে তারা। এখনও ১৬৭ রানে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। ডিন এলগারের সঙ্গে উইকেটে আছেন কিগান পিটারসেন।

ম্যাচের দিন সকালে পিঠের চোটে নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ছিটকে পড়েন। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম চোটের কারণে কোনো টেস্ট খেলতে পারছেন না তিনি। এই সিরিজে আগে থেকেই নেই সহ-অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তাই এই ম্যাচে টস করেন লোকেশ রাহুল। প্রথমবারের মতো ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ওপেনার। কোহলির জায়গায় দলে এসেছেন হনুমা বিহারি।

সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব না করেই ১৯৯০ সালে টেস্টে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। ৩১ বছর পর রাহুলও একই উদাহরণ গড়লেন।

পরিবর্তন আছে দক্ষিণ আফ্রিকা দলেও। প্রথম টেস্টের পর হুট করে লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন কুইন্টন ডি কক। এই কিপার-ব্যাটসম্যানের জায়গায় একাদশে এসেছেন কাইল ভেরেইনা।

কোলপাক চুক্তি শেষে প্রায় তিন বছর পর দলে ফেরা অলিভিয়েরকে প্রথম টেস্টে খেলায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ভিয়ান মুল্ডারকে বসিয়ে এবার তাকে একাদশে নিয়েছে তারা।

নিখুঁত লাইন-লেংথের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা নিয়মিত বিরতিতে তুলে নেন ভারতের উইকেট। এতে সফরকারীদের একটি জুটিও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি, খেলতে পারেনি একশ বলও।

৩১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন ইয়ানসেন। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা এই পেসারের যা ক্যারিয়ার সেরা। তিনটি করে উইকেট প্রাপ্তি অলিভিয়ের ও কাগিসো রাবাদার।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আত্মবিশ্বাসী শুরু করেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। সাবধানী ছিলেন রাহুল। প্রথম ঘণ্টার কঠিন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে দেন দুই ওপেনার। আভাস দেন দারুণ কিছুর।

কিন্তু ড্রিংকস বিরতির পর প্রথম বলেই মায়াঙ্ককে হারায় সফরকারীরা। ইয়ানসেনের ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন সেঞ্চুরিয়নে ফিফটি করা এই ওপেনার।

পরপর দুই বলে চেতেশ্বর পুজারা ও অজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড অনেকটাই ভেঙে দেন অলিভিয়ের। দলে ফিরেই পূর্ণ করলেন টেস্টে তার পঞ্চাশ উইকেট, ১৪৮৬ বলে। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বলে এই কীর্তি গড়ায় তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে। ১২৪০ বলে ৫০ উইকেট নিয়ে রেকর্ডটি ভার্নন ফিল্যান্ডারের।

অলিভিয়েরের বাড়তি বাউন্স করা বল পুজারার ব্যাটের কানা নিয়ে যায় পয়েন্টে থাকা ফিল্ডারের হাতে। পরের বলেই রাহানে ধরা পড়েন গালিতে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। হ্যাটট্রিক বলটি ঠেকিয়ে দেন বিহারি।

এক বছর পর দলে ফেরা বিহারি ৯ রানে একবার জীবন পেয়েও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। লুঙ্গি এনগিডির বলে পয়েন্টে তার ক্যাচ ছাড়েন টেম্বা বাভুমা। দ্বিতীয় সেশনে রাবাদার বলে শর্ট লেগে অসাধারণ ক্যাচে বিহারিকে ফেরান রাসি ফন ডার ডাসেন।

উইকেটে শুরুতে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না রাহুল। বেশ কয়েকবার অল্পের জন্য বল নেয়নি তার ব্যাটের কানা। সেঞ্চুরিয়নে সেঞ্চুরির পর এবার দলের একমাত্র ফিফটি অবশ্য আসে তার ব্যাট থেকেই। ১২৮ বলে পঞ্চাশ করা ভারত অধিনায়ক ইয়ানসেনের শর্ট বল পুল করে ধরা পড়েন ফাইন লেগে।

১১৬ রানে ৫ উইকেট হারানো ভারতের রান মূলত দুইশ পার হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৬ চারে ৫০ বলে ৪৬ রানের সুবাদে। মাঝে একবার জীবন পাওয়া এই ব্যাটসম্যানকে থামান ইয়ানসেন।

প্রতিপক্ষকে অল্পতে থামিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই হারায় এইডেন মারক্রামকে। মোহাম্মদ শামির লেংথ বল লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে-বলে করতে পারেননি এই ওপেনার। জোরাল এলবিডব্লিউর আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার।

শেষ বেলায় আরেকটি উইকেট নিতে পারত ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহর অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন পিটারসেন। কিন্তু ডান পাশে ঝাঁপিয়ে বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি রিশাভ পান্ত। ১২ রানে জীবন পান চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান।

৩৯ বলে ২ চারে ১৪ রান নিয়ে খেলছেন পিটারসেন। এলগার অপরাজিত আছেন ৫৭ বলে ১১ রান করে।

দিনটিতে আরেকটি বাজে মুহূর্ত সঙ্গী হয় ভারতের। দিনের শেষের আগের ওভার করতে এসে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লেগে পাঁচ বল করেই মাঠ ছাড়েন মোহাম্মদ সিরাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৬৩.১ ওভারে ২০২ (রাহুল ৫০, মায়াঙ্ক ২৬, পুজারা ৩, রাহানে ০, বিহারি ২০, পান্ত ১৭, অশ্বিন ৪৬, শার্দুল ০, শামি ৯, বুমরাহ ১৪*, সিরাজ ১; রাবাদা ১৭.১-২-৬৪-৩, অলিভিয়ের ১৭-১-৬৪-৩, এনগিডি ১১-৪-২৬-০, ইয়ানসেন ১৭-৫-৩১-৪, মহারাজ ১-০-৬-০)

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৮ ওভারে ৩৫/১ (এলগার ১১*, মারক্রাম ৭, পিটারসেন ১৪*; বুমরাহ ৮-৩-১৪-০, শামি ৬-২-১৫-১, সিরাজ ৩.৫-২-৪-০, শার্দুল ০.১-০-০-০)