‘অসাধারণ খেলেছে মুমিনুল ও লিটন’

নিজেদের ব্যাটিং লাইনআপ অনভিজ্ঞ, প্রতিপক্ষের পেস আক্রমণ ক্ষুরধার। কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ তো আছেই। বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে তাই ছিল বড় শঙ্কার জায়গা। কিন্তু চমক উপহার দিয়ে সেই ব্যাটসম্যানরাই দেখাল অসাধারণ দৃঢ়তা। এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ ব্যাটসম্যানদের জানালেন কুর্নিশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2022, 11:36 AM
Updated : 3 Jan 2022, 11:37 AM

মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে টস জিতে বোলিং নেওয়া বাংলাদেশ প্রথম দিনে বেশ চাপে ছিল একটা সময়। নিউ জিল্যান্ডের রান এক পর্যায়ে ছিল ৩ উইকেটে ২২৭। সেদিন শেষবেলায় ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু।

দ্বিতীয় দিন সকালে আর কেবল ৭০ রান যোগ করে কিউইরা হারায় তাদের বাকি ৫ উইকেট। এরপর মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করে ২ উইকেটে ১৭৫ রান নিয়ে। বিদেশের মাঠে ব্যাটিং-বোলিং মিলিয়ে এমন দিন বাংলাদেশের বেশ বিরল।

তৃতীয় দিন সকালে মাহমুদুল ২২৮ বলে ৭৮ রান করে আউট হওয়ার পর মুশফিকুর রহিমকেও ফিরিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু দুর্দান্ত জুটিতে আবার বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন মুমিনুল হক ও লিটন দাস। ৮৮ রান করেন মুশফিক, ৮৬ লিটন।

বাংলাদেশ তৃতীয় দিন শেষ করে ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে লিড এখন ৭৩ রানের।

দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে খালেদ মাহমুদ বললেন দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারার তৃপ্তির কথা।

“টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের ভালো দিনগুলির একটি এটি। যদিও চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে প্রসেস ছিল দুর্দান্ত। ছেলেরা খুব ভালো করেছে, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ছিল যথাযথ। আজকে ২২৬ রান করেছি আমরা কেবল ৪ উইকেট হারিয়ে, যা খুব ভালো। ওরা উইকেটে সময় কাটিয়েছে, যা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। খুব ভালো করেছে ছেলেরা।”

“রানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে আমরা চেয়েছি সময় কাটাতে উইকেটে। যতটা গভীরে নেওয়া যায় খেলাটা। আমাদের প্রক্রিয়া ও তার বাস্তবায়ন ছিল নিখুঁত। একটা চাপ তো ছিলই যে এটা তরুণ দল এবং ততটা পরিণত নয় এই কন্ডিশনে। তবে হ্যাটস অফ, দারুণ খেলেছে ছেলেরা।”

তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে লড়াই জমে ওঠে তুমুল। মাহমুদুল ও মুশফিককে হারিয়ে ২৬ ওভারে মাত্র ৪৫ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে লিড নেওয়ার পথে এগিয়ে নেন মুমিনুল ও লিটন।

দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে দুজনে গড়েন ১৫৮ রানের জুটি।

ম্যাচে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব এই দুজনকেই দিলেন খালেদ মাহমুদ।

“দারুণ… খুব ভালো একটা জুটি ছিল দুজনের। যে পরিস্থিতি ছিল তখন, আমরা চাপে ছিলাম। নিউ জিল্যান্ডের বোলাররা যে গোছানো বোলিং করে, সেই বোলিংয়ের সামনে টিকে থাকা…।”

“মুমিনুল ছিল দুর্দান্ত। এত বল ছেড়েছে, এত বল খেলেছে, জয়ও করেছে এটা আমাদের জন্য, তবে লিটন ও মুমিনুল ছিল অসাধারণ। দারুণ জুটি গড়েছে এবং আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে, যেখান থেকে আমরা মনে করি যে দাপট দেখাতে পারব এই ম্যাচে।”

প্রথম সেশনে অবশ্য অনেক ধুঁকতে হয়েছে মুমিনুলকে। ৫০ মিনিট উইকেটে থাকার পর দিনের প্রথম রান পেয়েছেন তিনি ২৯ বল খেলে। প্রথম সেশনে ৭২ বল খেলে করতে পারেন কেবল ৯ রান।

তবে লিটন উইকেটে যাওয়ার পর বদলে যায় চিত্র। ছন্দ পেতে একটুও সময় লাগেনি তার। নিউ জিল্যান্ডের কোনো বোলারই তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেনি। দারুণ সব শট খেলে তিনি মোমেন্টাম নিয়ে আসেন বাংলাদেশের দিকে। মুমিনুলও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন সময়ের সঙ্গে।

গত বছর থেকেই টেস্টে দারুণ ফর্মে থাকা লিটনকে স্তুতিতে ভাসালেন টিম ডিরেক্টরও।

“লিটন তো সাবলিল ছিল। সে যেরকম ব্যাটিং করে, সেরকমই করেছে। লিটনের ব্যাটিং সবসময় দেখতে ভালো লাগে। দারুণ ক্রিকেটার। আজকে একবারও ওর ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি যে চাপে আছে। এত সাবলিল ছিল এবং এতটা সহজে ফাস্ট বোলারদের সামলেছে….দারুণ খেলেছে সে।”

“আমরা জানি সে কতটা ভালো ক্রিকেটার। হ্যাঁ, বিশ্বকাপের একটা চাপ তো ছিলই যে রান করতে পারেনি ওখানে। তবে আমরা জানতাম ওর সামর্থ্য কতটা। আমরা সবসময়ই বলতাম, ওর যে সামর্থ্য, সেই তুলনায় রান কম করছে। তবে আজকে দারুণ খেলেছে। ওর ব্যাটিং সবসময়ই দেখতে ভালো।”