নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের সোনালি দিন

প্রথম দিনের শেষ সেশনে ছিল ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত, দ্বিতীয় দিনে ফেরার সেই অভিযান পেল পূর্ণতা। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ব্যাটে-বলে ঝলমলে একটি দিন কাটাল বাংলাদেশ। সকালের সেশনে বোলারদের দারুণ সাফল্য আর পরে মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিং দৃঢ়তায় দুই দিন শেষে শক্ত অবস্থানে দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2022, 06:51 AM
Updated : 2 Jan 2022, 08:11 AM

সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে রোববার প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১৭৫।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিন নম্বরে খেললেও টেস্ট দলে যাকে বানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওপেনার, সেই মাহমুদুল ব্যাট হাতে উপহার দিয়েছেন দারুণ চমক। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে ধৈর্যশীল ও স্থিতধী ব্যাটিংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনীতে করেছেন প্রথম ফিফটি। দিন শেষ করেছেন ২১১ বলে ৭০ রান করে।

নিউ জিল্যান্ডে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ওপেনার খেলতে পারল ২০০ বল।

মাহমুদুলের সঙ্গে শতরানের জুটির অংশীদার শান্ত ফেরেন ৬৪ রান করে। প্রায় ৪০ ওভার খেলে এই দুজনের জুটিতে রান আসে ১০৪।

মাহমুদুলকে বিদায় করার কিছু ‘হাফ চান্স’ কাজে লাগাতে না পারা নিউ জিল্যান্ডের জন্য হয়তো সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে রিভিউ না নেওয়া। রিভিউ নিলেই ২০ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরতে হতো মাহমুদুলকে।

সেবারই শুধু নয়, ভাগ্যকে এ দিন বেশ কবারই পাশে পেয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী এই তরুণ। কয়েক দফায় একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি বল। কয়েকবার অল্পের জন্য ফিল্ডারের হাতে যায়নি ক্যাচ। দুয়েকবার বেঁচে যান ‘প্লেড অন’ হতে হতে।

তবে তার কৃতিত্ব তাতে কমে যাচ্ছে না। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উইকেট আঁকড়ে রেখে তিনি ধরে রাখেন দলের হাল। সফল হ্যান্ডে খেলে তার বাউন্স সামলানোর দক্ষতাও ছিল দেখার মতো।

দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দৃঢ়তার আগে দিনের শুরুতে সুরটা বেঁধে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে শুরু করে নিউ জিল্যান্ড যোগ করতে পারে আর কেবল ৭০ রান। ৩২৮ রানে অলআউট হয় কিউইরা, দেশের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে যা তাদের সর্বনিম্ন।

দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এক পর্যায়ে হ্যাটট্রিকের আশাও জাগান এই অফ স্পিনার। তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। আগের দিন দুই উইকেট নেওয়া শরিফুল ইসলাম এ দিন নেন আরেকটি।

আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ানকে আউট করা মুমিনুল হক এদিন বিদায় করেন হেনরি নিকোলসকে। তার ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সৌম্য সরকারের চার ক্যাচের রেকর্ড স্পর্শ করেন সাদমান ইসলাম।

এরপর বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম সেশনের ৩ ওভার কাটিয়ে দেওয়া। সেটায় উতরে যাওয়া সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল দ্বিতীয় শেষ সেশনের প্রথম ঘণ্টাও নিরাপদে পার করে দেন।

১৮ ওভার খেলে ফেলা জুটিকে পানি পানের বিরতির পর প্রথম বলেই বিচ্ছিন্ন করেন নিল ওয়‍্যাগনার। নিচু ফুলটস বলে ফ্লিক করতে গিয়ে আগেভাগেই ব্যাট ঘুরিয়ে ফেলেন সাদমান। ব‍্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বলটিকে ঝাঁপিয়ে তালুবন্দি করেন ওয়‍্যাগনার।

৪৩ রানের জুটি শেষে সাদমানের (২২) বিদায়ের পরপরই আরেকটি উইকেট হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ। ওয়‍্যাগনারের ওই ওভারেই একটুর জন‍্য স্লিপে রস টেইলরের হাতে যায়নি শান্তর ক‍্যাচ।

ওয়‍্যাগনারের পরের ওভারে নিউ জিল্যান্ড রিভিউ নিলে ফিরে যেতে হতো মাহমুদুলকে। তার রান ছিল ২০।    

শুরুতে একটু ভোগান্তি হলেও পর ছন্দে ফিরেন শান্ত। মাহমুদুলের সঙ্গে গড়ে তোলেন জুটি। দুই জনের দৃঢ়তায় আর কোনো উইকেট না হারিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনে ৬৫ রান যোগ করা সফরকারীরা তৃতীয় সেশনে শান্তর উইকেট হারিয়ে যোগ করে ১০৫ রান।

তৃতীয় সেশনের প্রথম ওভারে বোল্টকে চার মেরে শুরু করেন শান্ত। থিতু হওয়ার পর দারুণ সাবলিল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কাইল জেমিসনকে অন ড্রাইভে মারা তার বাউন্ডারিটি দুই দল মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত এই টেস্টের সেরা শটগুলির একটি।

রাচিন রবীন্দ্রকে স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে ৯০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন শান্ত। জুটির রান তিন অঙ্ক স্পর্শ করে ২২৬ বলে। জুটির একশ হওয়ার পর ওয়্যাগনারের ফাঁদে পা দিয়ে শেষ হয় শান্তর যাত্রা। 

একের পর এক শর্ট বল করে যাওয়া ওয়্যাগনার হুট করে একটি ডেলিভারি করেন অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথ। শর্ট বলের আশায় ব্যাকফুটে থাকা শান্ত পা না বাড়িয়েই বল তাড়া করে ধরা পড়েন গালিতে।  ১০৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় করেন তিনি ৬৪।

রবীন্দ্রর বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৬৫ রান বলে ফিফটি স্পর্শ করেন মাহমুদুল। দুয়েকটি নার্ভাস মুহূর্ত তার এসেছে ফিফটির পরও। তবে হাল ছাড়েননি। মুমিনুল হকের সঙ্গে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন নিরাপদে। শান্তকে হারানোর পরও তাই বাংলাদেশের তৃপ্তি দারুণ একটি দিন কাটানোর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল‍্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৮/৫) ১০৮.১ ওভারে ৩২৮ (নিকোলস ৭৫, রবীন্দ্র ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়‍্যাগনার ০, বোল্ট ৯*; তাসকিন ২৬-৭-৭৭-০, শরিফুল ২৬-৭-৬৯-৩, ইবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, শান্ত ২-০-১০-০, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৬৭ ওভারে ১৭৫/২ (সাদমান ২২, মাহমুদুল ৭০*, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮*; সাউদি ১৫-২-৪১-০, বোল্ট ১৪-৫-৩৭-০, জেমিসন ১৩-৪-৩৫-০, ওয়‍্যাগনার ১৬-৫-২৭-২, রবীন্দ্র ৯-১-২৬-০)