নতুন বছরে নতুন কিছুর আশায় বাংলাদেশ

“তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক…”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পঙক্তিমালা বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে। তবে মুমিনুল হক যেন এই কথাগুলিকে আপ্তবাক্য করে নিলেন খ্রিস্টীয় নতুন বছরে চোখ রেখেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাস্তবতাই যে এমন! গত বছরের সব হতাশা-আক্ষেপ-অপ্রাপ্তি উড়িয়ে দিতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক। নতুন বছরে দলকে নিয়ে ছুটে যেতে চান নতুন সম্ভাবনার পথে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2021, 10:54 AM
Updated : 31 Dec 2021, 12:32 PM

২০২১ সাল দেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল হতাশার। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট ছিল দুর্বিষহ। এমন বছরকে তো উড়িয়ে দিয়ে সামনে তাকানোই স্বাভাবিক!

নতুন বছরে নতুন কিছুর অভিযান মুমিনুলদের শুরু হয়ে যাচ্ছে একদম প্রথম দিনেই। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোর ৪টায়।

গত বছর ৭ টেস্টে বাংলাদেশের জয় ছিল স্রেফ ১টি। ৫টিতেই ছিল হার। সেই হারের মধ্যে ছিল দেশের মাঠে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার হতাশাও। নিউ জিল্যান্ড যাওয়ার ঠিক আগে পাকিস্তানের সঙ্গেও বাজেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে হেরেছে ম্যাচের অর্ধেকের বেশি সময় প্রাকৃতিক বাধায় খেলা না হওয়ার পরও।

সেই দল থেকে বাংলাদেশ এই সিরিজে পাচ্ছে না দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল তো নেই আগে থেকেই। তারপরও সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল শোনালেন আশার গান।

“নতুন বছরে আমি খুব রোমাঞ্চিত। আগে কী হয়েছিল, এসব নিয়ে চিন্তা না করে সামনে বছর কীভাবে নতুন করে, সুন্দরভাবে শুরু করা যায়, সেটা নিয়েই ভাবছি। আমি সত্যিই খুব রোমাঞ্চিত। নতুন বছরটা যদি সুন্দর হয়, শুরুটা ভালো হলে তা ধরে রাখা সহজ হয় আর কী…।”

তবে নতুন করে শুরু করতে চাইলেই তো আর হয় না, সেই শক্তি-সামর্থ্যও থাকতে হয়। পারফরম্যান্সেও ইচ্ছের প্রতিফলন ফেলতে হয়। বাংলাদেশের তা কতটা আছে? মুমিনুল ভরসা রাখছেন দলীয় শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।

“দল হিসেবে আমাদের খেলাটা... আমাদের যে ধরন, এখানে দল হিসেবে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় কথাটা বলি। আমার কাছে মনে হয়, আমরা এখন যেভাবে অনুশীলন করছি ও যেভাবে দেখছি সবাই সবাইকে, আমরা দল হিসেবে যদি খেলতে পারি… ওটার জন্যই রোমাঞ্চ কাজ করছে।”

“আমরা যত টেস্ট ম্যাচ জিতেছি, জিততে পেরেছি দল হিসেবে খেলতে পারায়। এখন কেউ যদি একশ করে বা বোলারদের কেউ ৫ উইকেট পায়, কিন্তু আর কেউ ৩-৪ উইকেট না পেলে হবে না। দল হিসেবে খেলতে না পারলে দলীয় ফল আসে না। তখন ব্যক্তিগত অর্জন হবে, দলীয় পারফরম্যান্স হবে না।”

সমস্যা হলো, মুমিনুল নতুন আশায় বুক বাঁধছেন এমন এক সফরে, যেখানে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি খুব একটা নেই। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের দেশে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩২ ম্যাচ খেলে সব হেরেছে বাংলাদেশ। টেস্ট হেরেছে ৯টির সবকটি, এর মধ্যে ৫টিই ইনিংস ব্যবধানে।

মুমিনুল সেই ইতিহাস বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন কিছুটা অনুশীলনের স্বস্তি থেকে আর অনেকটা আশার স্রোতে নৌকা ভাসিয়ে।

“যে কদিন অনুশীলন করেছিলাম আমরা, খুব ভালো ছিল তা। আগের রেকর্ড তো অতীত। এটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে বা চিন্তা করে লাভও হবে না। আমার কাছে মনে হয়, সামনের ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করাই ভালো। আমার কাছে মনে হয়, সবসময় আশাবাদী থাকা বা ভালো চিন্তা করা ভালো।”

“অবশ্যই নিউ জিল্যান্ডে আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকবে অনেক। তবে যদি পেছনের কথা চিন্তা করেন বা খারাপ কিছু ভাবেন, তাহলে কোনোভাবেই ভালো ফল আসবে না। আশাবাদী থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে মনে হয়।”

নিউ জিল্যান্ড এই সিরিজে পাচ্ছে না চোটাক্রান্ত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে। তবে চোটের কারণে সবশেষ ভারত সফরে না থাকা ডেভন কনওয়ে ফিরেছেন। নেতৃত্ব দেবেন টম ল্যাথাম।

ভারতে একটি টেস্ট ড্র করতে পারলেও আরেক টেস্টে হেরে গেছে নিউ জিল্যান্ড। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে প্রথম জয়ের দেখা পেতে তাই মরিয়া থাকবে তারাও।

এই সিরিজ নিউ জিল্যান্ডের কাছে ভিন্ন মাত্রা পেয়ে গেছে রস টেইলরের শেষ সিরিজ বলেও। দেশের ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যানের বিদায়ী টেস্ট সিরিজ স্মরণীয় করে রাখতে চাইবে কিউইরা।

যে মাঠে খেলা, সেই বে ওভালে এখনও পর্যন্ত দুটি টেস্ট হয়েছে গত দুই বছরে। একটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড, আরেকটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০১ রানে। বাংলাদেশ সেই তুলনায় যথেষ্টই সহজ প্রতিপক্ষ। এই মাঠে কিউইদের জয়ের হ্যাটট্রিক না হওয়াটাই হবে বিস্ময়কর।

বাংলাদেশ কি পারবে, বিস্ময় উপহার দিতে? বাস্তবতা বলছে, খুবই কঠিন। তবু আশা নিয়ে মাঠে নামবে দল, যেমনটি বলেছেন অধিনায়ক মুমিনুল, “আমি সবসময়ই আশার কথা বলব। আগের বছর ১০ নম্বরে থেকে শেষ করলেও নতুন বছরে আশার কথাই বলব।”