ওয়ানডের বর্ষসেরার লড়াইয়ে সাকিবের সঙ্গে বাবর-মালান-স্টার্লিং

এই বছর ব্যাট ও বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স সাকিব আল হাসানকে এনে দিতে পারে দারুণ এক স্বীকৃতি। ছেলেদের ক্রিকেটে আইসিসির ২০২১ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। তার সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন বাবর আজম, ইয়ানেমান মালান ও পল স্টার্লিং।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2021, 08:56 AM
Updated : 30 Dec 2021, 01:27 PM

এই বছরের আইসিসি অ্যাওয়ার্ডসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের নাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। পরপর দুই দিন বর্ষসেরা টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার ওয়ানডের চার জনের নাম প্রকাশ করে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পারফরম্যান্সের বিচারে আইসিসির অ্যাওয়ার্ডস প্যানেল এই তালিকা তৈরি করেছে।

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ), ৯ ম্যাচে ৩৯.৫৭ গড়ে ২৭৭ রান, ফিফটি ২টি। ১৭.৫৩ গড়ে উইকেট ১৭টি।

গত জানুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেই বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি ৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে করেন ১৯ রান। পরে জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ৩-০ ব্যবধানে জেতা সিরিজে ব্যাট হাতে ১১৩ রান করার পাশাপাশি বাঁহাতি স্পিনে নেন ৬ উইকেট।

দেশের মাটিতে এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটা যদিও তেমন ভালো কাটেনি সাকিবের। তিন ম্যাচে রান করেন ১৯, উইকেট নেন ৩টি। এরপর জিম্বাবুয়ে সফরে ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। তিন ম্যাচে ১৪৫ রানের পাশাপাশি উইকেট নেন ৮টি। বাংলাদেশ সিরিজ জেতে ৩-০ ব্যবধানে। বছরে দ্বিতীয়বারের মতো ‘ম্যান অব দা সিরিজ’ হন সাকিব।

হারারেতে ওই সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটে-বলে দলকে উদ্ধার করেন সাকিব। পাওয়ার-প্লেতে জিম্বাবুয়ে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ব্রেন্ডন টেইলর ও রেজিস চাকাভা জুটি যখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল, চাকাভাকে বোল্ড করে সাকিব ভাঙেন ৪৭ রানের জুটি। পরে নেন থিতু হওয়া ডিওন মায়ার্সের উইকেট। ১০ ওভারে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের ৪২ রানে তার প্রাপ্তি ২টি।

পরে ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব। একটা পর্যায়ে ১৮ ওভারে ৭৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর তিনি মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়েন ৫৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি, সপ্তম উইকেটে আফিফ হোসেনের সঙ্গে ২৮ রানের জুটি।

১৭৩ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশের শেষ ৭১ বলে দরকার ছিল ৬৮ রান। সাকিব তখন ব্যাটিংয়ে ৬৩ রানে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫ বল বাকি থাকতে দলের জয় নিয়ে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ১০৯ বলে ৮ চারে খেলেন অপরাজিত ৯৬ রানের অসাধারণ ইনিংস।

বাবর আজম (পাকিস্তান), ৬ ম্যাচে ৬৭.৫০ গড়ে ৪০৫ রান, সেঞ্চুরি ২টি।

এই বছর মাত্র ছয়টি ওয়ানডে খেললেও দলের দুই সিরিজেই ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিন ম্যাচে ২২৮ রান করে তিনি ছিলেন সিরিজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। তার দল সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে, দুই জয়ের ম্যাচেই বাবর হন ‘ম্যান অব দা ম্যাচ।’

প্রথম ম্যাচে ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাবর খেলেন ১০৩ রানের ইনিংস। শেষ ওয়ানডেতে ৮২ বলে করেন ৯৪ রান, আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান তোলে ৩২০ রান।   

এরপর ইংল্যান্ড সফরে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশড হওয়া সিরিজেও ব্যাট হাতে বারব ছিলেন উজ্জল। তিন ম্যাচে তিনি করেন ১৭৭ রান। পাকিস্তানের আর কেউ ১০০ ছুঁতে পারেননি। 

তার সেরাটা দেখা যায় সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে। আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তান তোলে ৩৩১ রান। দলের প্রায় অর্ধেক রান ছিল বাবরের, ১৩৯ বলে ১৫৮।

শুরুতে ফখর জামানের উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে তিনি ইমাম উল হকের সঙ্গে বাবর গড়েন ৯২ রানের জুটি। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ৭২ বলে। পরের পঞ্চাশ করতে লাগে কেবল ৩২ বলে। তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি শেষ হয় শেষ ওভারে আউট হয়ে। যদিও সঙ্গী হয় হারের বিষাদ। 

ইয়ানেমান মালান (দক্ষিণ আফ্রিকা), ৮ ম্যাচে ৮৪.৮৩ গড়ে ৫০৯ রান, সেঞ্চুরি ও ফিফটি ২টি করে।

২০২০ সালে ওয়ানডে অভিষিক্ত মালান খুব দ্রুতই এই সংস্করণে নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বছরে তিনি প্রথম ওয়ানডে খেলেন এপ্রিলে, দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে।  ৩২১ রান তাড়ায় ইনিংস শুরু করে খেলেন ৮১ বলে ৭০ রানের ইনিংস। যদিও হেরে যায় তার দল।    

এরপর আয়ারল্যান্ড সফরে তিন ম্যাচের সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হন মালান। দুই ম্যাচে ২৬১ রান করে তিনি ছিলেন সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোরার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৯১ রান তাড়ায় খেলেন ৯৬ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। ৪৩ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে মালান উপহার দেন অপরাজিত ১৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। ১৬৯ বলে ১৬ চার ও ৬ ছক্কায় গড়া তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি।

সেদিন কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে তিনি গড়েন ২২৫ রানের উদ্বোধনী জুটি। ডি কক আউট হন ১২০ রান করে। মালান সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১২৬ বলে। ডেথ ওভারে ৭১ রান করেন তিনি কেবল ৩৩ বলে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ উইকেটে তোলে ৩৪৬ রান, ৭০ রানে ম্যাচ জিতে সমতায় শেষ করে সিরিজ।  

মালান ফর্মটা ধরে রাখেন শ্রীলঙ্কা সফরেও। তিন ম্যাচে ১৬২ রান করে তিনি ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা জিততে পারে কেবল একটি ম্যাচই, যেখানে ১৩৫ বলে ১২১ রানের ইনিংস খেলেন মালান।

সব মিলিয়ে ৫০৯ রান করে ২০২১ সালে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। 

পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড), ১৪ ম্যাচে ৭৯.৬৬ গড়ে ৭০৫ রান, সেঞ্চুরি ৩টি ও ফিফটি ২টি।

আইরিশ ওপেনারের বছরটা কাটে স্বপ্নের মতো। এই বছরে ওয়ানডের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই।

বছরে নিজের প্রথম ওয়ানডেই স্টার্লিং উপহার দেন সেঞ্চুরি। আবু ধাবিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলেন ১৪৮ বলে অপরাজিত ১৩১ রানের ইনিংস। ম্যাচটি যদিও হেরে যায় আইরিশরা।  

এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ড ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশড হলেও স্টার্লিংয়ের পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। সেখানে ২৮৫ রান করে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই করেন সেঞ্চুরি।  

ফর্মটা ধরে রাখেন তিনি নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজেও। ২-১ ব্যবধানে হারা সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ফিফটি। 

পরের দুই সিরিজে যদিও অতটা দাপট ছিল না স্টার্লিংয়ের ব্যাটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচে ৫১ রানের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সমান ম্যাচে করেন ১০৮ রান। 

আইসিসির ভোটিং একাডেমি ও ক্রিকেট সমর্থকদের যৌথ ভোটে নির্বাচন করা হবে বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ভোটিং একাডেমিতে আছেন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকাররা। আগামী ২৪ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে বিজয়ীর নাম।