বাংলাদেশ সিরিজ দিয়েই টেস্টকে বিদায় টেইলরের

সময়টা ভালো যাচ্ছিল না ব্যাট হাতে। বয়সটাও তো পক্ষে নেই খুব একটা। সব মিলিয়ে শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছিলেন রস টেইলর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেললেন। নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং গ্রেট জানিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে শনিবার শুরু হতে যাওয়া সিরিজই টেস্ট ক্রিকেটে তার শেষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও পুরোপুরি অবসরে চলে যাবেন এপ্রিলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2021, 05:07 AM
Updated : 30 Dec 2021, 05:07 AM

থেমে যাচ্ছে তাই ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য এক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। যেখানে ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের সঙ্গী একগাদা রেকর্ড। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি ( ৪৪৫টি)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান তার। রান করেছেন ১৮ হাজার ৭৪, সাড়ে ১৫ হাজার রানও নেই আর কারও। তার ৪০ সেঞ্চুরিও নিউ জিল্যান্ডের রেকর্ড। 

মার্টিন ক্রো, কেন উইলিয়ামসনদের সঙ্গে টেইলরকেও রাখা হয় নিউ জিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায়।

শুধু দেশের নয়, তিন সংস্করণেই আলাদা করে ১০০ ম্যাচ খেলায় বিশ্ব ক্রিকেটেই তিনি প্রথম।

২০০৬ সালের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে টেইলরের আন্তর্জাতিক অভিষেকে। ওই বছরের ডিসেম্বরে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডেতে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন ১২৮ রানের ইনিংস, ক্যারিয়ারের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ইনিংসে করেন ৪৩ বলে ৬২। টেস্ট অভিষেক ২০০৭ সালে। এখানেও তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

এরপর ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠে নিউ জিল্যান্ডের বড় ব্যাটিং ভরসা। তার ব্যাট থেকে আসে দারুণ সব ম্যাচ জেতানো ইনিংস। নিউ জিল্যান্ডকে নেতৃত্বও দেন তিনি ১৪ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ১৩ টি-টোয়েন্টিতে।

কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, পাখির চোখ করছেন ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে। কিন্তু থেমে যাচ্ছেন লক্ষ্যের বেশ আগেই। মূলত টেস্টের ফর্মহীনতাই ডেকে আনল তার শেষ। সম্প্রতি ভারত সফরে চার ইনিংসে তার রান ছিল মোটে ২০।

গত জুনে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও প্রথম ইনিংসে ছিলেন ব্যর্থ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ রান করে ক্রিজে ছিলেন দলের জয়ের সময়। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিউ জিল্যান্ড পায় তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা সাফল্য।

তবে সবশেষ ২৪ টেস্ট ইনিংসে সেঞ্চুরি নেই তার, ফিফটিও করেছেন মোটে ৩টি। ব্যাটিং গড় এই সময়টায় মাত্র ২৮.১০।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দুটি ম্যাচই খেলতে পারলে তার টেস্ট সংখ্যা হবে ১১২। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার রেকর্ডে স্পর্শ করবেন ড্যানিয়েল ভেটোরিকে।

টেস্টে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান তার। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডও একসময় তার ছিল। এখন তা নিজের করে নিয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। ২০১৫ সালে পার্থে ২৯০ রানের ইনিংস টেইলরের ক্যারিয়ারের সেরা। অস্ট্রেলিয়ায় কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও তা।

তার ১৯ টেস্ট সেঞ্চুরিতে ডাবল সেঞ্চুরি তিনটি। টেস্ট ব্যাটিং গড় এখন ৪৪.৮৭, এক সময় যা ছিল প্রায় ৪৯। টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সামর্থ্যই তুলে ধরছে তা।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও তিনি দারুণ সফল। ওয়ানডেতে এখন ২৩৩ ম্যাচে রান ৮ হাজার ৮১, গড় ৪৮.২০ ও স্ট্রাইক রেট ৮৩.৪১। কোভিড বিরতির আগে দেশের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৮৪ বলে অপরাজিত ১০৯ ও অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস তিনি খেলেছেন। তবে কোভিড বিরতির পর ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন স্রেফ আর ১টি।

শুধু পরিসংখ্যান-রেকর্ডই নয়, রঙিন পোশাকে নিজের দিনে ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন বিধ্বংসী ও বিশ্বের সেরাদের একজন।

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর টেইলর জায়গা হারান নিউ জিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে। এ নিয়ে আক্ষেপের কথাও জানান পরে।

এবার নিজে থেকেই থেমে যাচ্ছে সব সংস্করণে। অস্ট্রেলিয়া সফরে নিউ জিল্যান্ডের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এই মাসের শেষে। নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সিরিজটি দেশের মাঠেই, যেটির শেষ ম্যাচ ৪ এপ্রিল। এই দুই ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে ফেব্রুয়ারি-মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলবে নিউ জিল্যান্ড। তবে সেটিতে যে খেলবেন না, তা টুইটারে বৃহস্পতিবার বিদায়ের ঘোষণাতেই উল্লেখ করেছেন টেইলর।

“আজকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দিচ্ছি, এবারের গ্রীষ্ম শেষেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি টেস্ট আর অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৬টি ওয়ানডে। ১৭ বছর ধরে অবিশ্বাস্য সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। দেশকে প্রতিনিথিত্ব করতে পারা বড় সম্মানের।”

বিদায়ের আগে এই ম্যাচগুলিতে নিজেকে উজাড় করে দিতে চান টেইলর।

“সব ভালো জিনিসেরই শেষ আছে। বিদায়ের সময়টাও আমার সঠিক বলেই মনে হচ্ছে। আমার পরিবার, বন্ধু ও অন্য যারা আমাকে এই পর্যায়ে আসতে সহায়তা করেছে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।”

“মৌসুম শেষে আরও অনেক ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা ও ফিরে তাকানোর সময় মিলবে। আপাতত আমার সবটা দিয়ে মনোযোগ দিতে চাই এই গ্রীষ্মে এবং পারফর্ম করতে চাই দলের হয়ে।”

দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাকে বিদায়বেলায় স্তুতিতে ভাসালেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

“লম্বা সময় ধরে রস (টেইলর) ছিল দলের প্রাণ এবং এই দেশে খেলাটাকে এগিয়ে নিতে তার যে ভূমিকা, তাতে সে গর্বিত হতেই পারে। বিশ্বমানের ক্রিকেটার সে, দীর্ঘ সময় ধরে ছিল ব্যাট হাতে আমাদের সেরা এবং ব্যক্তিগতভাবে, সব সংস্করণে তার সঙ্গে অনেক অনেক জুটির সঙ্গী হতে পারা ছিল তৃপ্তিদায়ক।”