টি-টোয়েন্টির বর্ষসেরার লড়াইয়ে দুই কিপার-ব্যাটসম্যানের সঙ্গে দুই অলরাউন্ডার

ছেলেদের ক্রিকেটে আইসিসির ২০২১ সালের বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় দুই কিপার-ব্যাটসম্যানের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন দুই অলরাউন্ডার। মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন জস বাটলার, ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও মিচেল মার্শ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2021, 05:20 PM
Updated : 29 Dec 2021, 05:32 PM

এই বছরের আইসিসি অ্যাওয়ার্ডসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনীতদের নাম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ছেলেদের বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশের পর বুধবার টি-টোয়েন্টির চার জনের নাম প্রকাশ করে বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পারফরম্যান্সের বিচারে আইসিসির অ্যাওয়ার্ডস প্যানেল এই তালিকা তৈরি করেছে।

মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান), ২৯ ম্যাচে ৭৩.৬৬ গড় ও ১৩৪.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ১৩২৬ রান। ডিসমিসাল ২৪টি।

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এই বছরটা রিজওয়ানের কেটেছে স্বপ্নের মতো। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে এক হাজার রান করার কীর্তি গড়েন তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনেও ছিলেন দারুণ কার্যকর।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সেমি-ফাইনালে খেলায় রিজওয়ানের ছিল বড় অবদান। ৬ ম্যাচে ৭০.২৫ গড় ও ১২৭.৭২ স্ট্রাইক রেটে ২৮১ রান করে এই কিপার-ব্যাটসম্যান ছিলেন টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

বছরে নিজের প্রথম ম্যাচেই তিনি করেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। লাহোরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৪ বলে ৭ ছক্কা ও ৬ চারে খেলেন ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। এই সংস্করণে যা এখন পর্যন্ত তার একমাত্র সেঞ্চুরি।

দুর্দান্ত ছন্দ তিনি ধরে রাখেন বছর জুড়ে। ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান বছরের শেষটাও রাঙান দারুণ এক ইনিংসে। করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেন ৪৫ বলে ৮৭ রানের ইনিংস।      

বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ে রিজওয়ান রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৫২ রানের লক্ষ্য রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজমের উদ্বোধনী জুটিতেই পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। ওয়ানডে হোক বা টি-টোয়েন্টি, বিশ্বকাপে ১৩ বারের চেষ্টায় প্রথমবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারে তারা। ৫৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। 

ভানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা), ২০ ম্যাচে ১১.৬৩ গড় ও ৫.৪৪ ইকোনমি রেটে ৩৬ উইকেট। ব্যাটিংয়ে এক ফিফটিতে ১৯৬ রান।  

এই বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হাসারাঙ্গা। বছর জুড়ে তিনি ছিলেন দারুণ ধারাবাহিক। এই সংস্করণে এরই মধ্যে নিজেকে সময়ের সেরা স্পিনারদের একজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। ব্যাট হাতেও বেশ পারদর্শী এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার।   

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স উপহার দেন হাসারাঙ্গা। ১৬ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। গড়েন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট হাতে খেলেন ৭১ রানের ইনিংস। 

শারজাহতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার দেশের যা প্রথম।

মিচেল মার্শ (অস্ট্রেলিয়া), ২৭ ম্যাচে ৩৬.৮৮ গড় ও ১২৯.৮১ স্ট্রাইক রেটে ৬২৭ রান। ১৮.৩৭ গড়ে উইকেট ৮টি।

এই বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মার্শ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে তার নতুন রূপে যাত্রার শুরু চলতি বছরেই, গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে। মূল ব্যাটসম্যানদের কয়েকজন না থাকায় তিন নম্বরে খেলার সুযোগ দেওয়া হয় তাকে। তিনি তা লুফে নেন দুহাতে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে করেন তিনটি ফিফটি। পরে বাংলাদেশ সফরে ভীষণ ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে তিনি ছিলেন দুই দল মিলিয়ে অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

এরপর বিশ্বকাপে অবশ্য শুরুটা ভালো করতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১ করে আউট হন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে জায়গাও হারান। তবে দল হারায় পরের ম্যাচেই তাকে ফেরানো হয়। আর পেছনে ফিরে তাকাননি এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে করেন ঝড়ো ফিফটি। সেমি-ফাইনালে দল শুরুতে উইকেট হারানোর পর ধাক্কা সামাল দেন তিনি ডেভিড ওয়ার্নারের সঙ্গে জুটিতে। আর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে তো তিনিই সেরা। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন নায়কের বেশে।

৫০ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় মার্শ খেলেন ৭৭ রানের চমৎকার ইনিংস। প্রথমবারের মতো এই সংস্করণের বিশ্বকাপে শিরোপার স্বাদ পায় অস্ট্রেলিয়া। আসরে ৬ ম্যাচে ৬১.৬৬ গড় ও ১৪৬.৮২ স্ট্রাইক রেটে মার্শ করেন ১৮৫ রান।  

জস বাটলার (ইংল্যান্ড), ১৪ ম্যাচে ৬৫.৪৪ গড় ও ১৪৩.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৫৮৯ রান। ডিসমিসাল ১৩টি।

বাটলার বছরের শুরুটা করেন ভারত সফরে অপরাজিত ৮৩ ও ৫২ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলে। সেই ফর্ম তিনি ধরে রাখেন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ছুটেছে রানের ফোয়ারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে রান তাড়ায় খেলেন ৩২ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস। ১২৬ রানের লক্ষ্য ইংল্যান্ড পেরিয়ে যায় ১১.৪ ওভারেই।

পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি করেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। শারজাহর মন্থর উইকেটে ৬৭ বলে ৬টি করে চার-ছক্কায় করেন অপরাজিত ১০১ রান। গড়েন ইংল্যান্ডের ছেলেদের ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণে সেঞ্চুরির কীর্তি।

আইসিসির ভোটিং একাডেমি ও ক্রিকেট সমর্থকদের যৌথ ভোটে নির্বাচন করা হবে বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ভোটিং একাডেমিতে আছেন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকাররা। আগামী ২৪ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে বিজয়ীর নাম।