সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর তৃতীয় দিনে তিন ইনিংস মিলিয়ে পতন হয়েছে ১৮ উইকেটের! এই মাঠে টেস্টের একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড এটি। ২০০৭ সালে এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউ জিল্যান্ড টেস্টের তৃতীয় দিনের ১৬ উইকেট ছিল আগের রেকর্ড।
৩ উইকেটে ২৭২ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করে ভারত প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৩২৭ রানে। ৬৯ বলের মধ্যে ৪৯ রানে তারা হারায় শেষ ৭ উইকেট। ৭১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার লুঙ্গি এনগিডি।
জবাবে ১৯৭ রানেই গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ উইকেট নিয়ে ভারতকে ১৩০ রানের লিড এনে দেন শামি। মঙ্গলবার দিন শেষে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ১৬। এগিয়ে আছে তারা ১৪৬ রানে, হাতে ৯ উইকেট।
তৃতীয় দিনের শুরুটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হয় দারুণ। দিনের চতুর্থ ওভারে কাগিসো রাবাদার বাড়তি বাউন্সে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরেন সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল। প্রথম দিন শেষে ১২২ রানে অপরাজিত এই ওপেনার যোগ করতে পারেন আর ১ রান।
প্রথম দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান অজিঙ্কা রাহানে ৪০ রানের সঙ্গে যোগ করতে পারেন ৮। তিনিও বিদায় নেন এনগিডির বাড়তি বাউন্সে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে।
এনগিডি নিজের পরের ওভারে রিশাভ পান্তকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। শর্ট লেগে ক্যাচ দেন ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যান। মাঝে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফেরান রাবাদা। এই পেসারের পরের ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন শার্দুল ঠাকুর।
এনগিডি উইকেটের দেখা পান তার টানা তৃতীয় ওভারে। এবার তার শিকার শামি। টানা পাঁচ ওভারে ৫ উইকেট হারায় ভারত।
শেষ উইকেট জুটিতে ১৯ রান যোগ করেন জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ। ভিয়ান মুল্ডারের দুর্দান্ত ক্যাচে বুমরাহকে ফিরিয়ে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত মার্কো ইয়ানসেন।
ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। ৩২ রানের মধ্যেই তারা হারায় ৪ উইকেট।
ইনিংসের পঞ্চম বলে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ডিন এলগারকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান বুমরাহ। ধারাভাষ্যকার যে বলটিকে বললেন ‘আনপ্লেয়েবল।’
কিগান পিটারসেন ও এইডেন মারক্রামকে বোল্ড করে দেন শামি। আরেক পেসার সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শটে গালিতে ক্যাচ দেন রাসি ফন ডার ডাসেন।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন টেম্বা বাভুমা ও কুইন্টন ডি কক। দারুণ কিছু বাউন্ডারি মারেন বাভুমা। অশ্বিনকে ছক্কায় ওড়ান ডি কক। দলের স্কোর ছাড়ায় একশ।
আক্রমণে ফিরে ৩৪ রান করা ডি কককে বোল্ড করে ৭২ রানের জুটি ভাঙেন শার্দুল। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। চার মেরে রানের খাতা খোলা মুল্ডার টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। শামির তৃতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি কিপারকে ক্যাচ দিয়ে।
শামিকে পুল শটে বাউন্ডারি মেরে ১০১ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বাভুমা। এক বল পরই আলগা শটে কিপারকে ক্যাচ দেন তিনি।
এই ক্যাচ নিয়ে ভারতের কিপার হিসেবে সবচেয়ে কম টেস্টে ১০০ ডিসমিসালের রেকর্ড গড়েন পান্ত। ২৬ টেস্টে মাইলফলক ছুঁয়ে তিনি পেছনে ফেললেন মহেন্দ্র সিং ও ধোনি ও ঋদ্ধিমান সাহাকে, এই দুজনের লেগেছিল ৩৬ টেস্ট।
১৪৪ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর অষ্টম উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন রাবাদা ও ইয়ানসেন। ১৯ রান করা ইয়ানসেনকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন শার্দুল।
পরে রাবাদাকে (২৫) ফিরিয়ে শামি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। একই সঙ্গে তিনি স্পর্শ করেন ২০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক। পরের ওভারে মহারাজকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ইনিংস গুটিয়ে দেন বুমরাহ।
দিনের শেষ দিকে আধা ঘণ্টা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায় ভারত। প্রথম ইনিংসের শেষ বলে উইকেট নেওয়া ইয়ানসেন এবার নিজের প্রথম বলে আগারওয়ালকে কট বিহাইন্ড করে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। সেটি যদিও হয়নি।
রাহুল অপরাজিত আছেন ৫ রানে। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা শার্দুল খেলছেন ৪ রান নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ১০৫.৩ ওভারে ৩২৭ (আগের দিন ২৭২/৩) (রাহুল ১২৩, রাহানে ৪৮, পান্ত ৮, অশ্বিন ৪, শার্দুল ৪, শামি ৮, বুমরাহ ১৪, সিরাজ ৪*; রাবাদা ২৬-৫-৭২-৩, এনগিডি ২৪-৫-৭১-৬, ইয়ানসেন ১৮.৩-৪-৬৯-১, মুল্ডার ১৯-৪-৪৯-০, মহারাজ ১৮-২-৫৮-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৬২.৩ ওভারে ১৯৭ (এলগার ১, মারক্রাম ১৩, পিটারসেন ১৫, ডাসেন ৩, বাভুমা ৫২, ডি কক ৩৪, মুল্ডার ১২, ইয়ানসেন ১৯, রাবাদা ২৫, মহারাজ ১২, এনগিডি ০*; বুমরাহ ৭.২-২-১৬-২, সিরাজ ১৫.১-৩-৪৫-১, শামি ১৬-৫-৪৪-৫, শার্দুল ১১-১-৫১-২, অশ্বিন ১৩-২-৩৭-০)
ভারত ২য় ইনিংস: ৬ ওভারে ১৬/১ (রাহুল ৫*, আগারওয়াল ৪, শার্দুল ৪*; রাবাদা ৩-০-৭-০, এনগিডি ২-১-৪-০, ইয়ানসেন ১-০-৪-১)।