নিজেদের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার এই চার জনের নাম প্রকাশ করেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা।
বছর জুড়ে ইংল্যান্ড হেরেছে একের পর এক টেস্ট ম্যাচ, গড়েছে বিব্রতকর রেকর্ড। ঠিক এর বিপরীত চিত্র ছিল দলটির অধিনায়ক রুটের ব্যাটে। টেস্ট ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার ৭০০ রানের বেশি রান করেছেন। তার আগে এই কীর্তি গড়েছেন কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফ।
দেশে ও বাইরে লাল বলের ক্রিকেটে ব্যাট হাতে সমান উজ্জ্বল ছিলেন রুট। উপমহাদেশের বিরুদ্ধ কন্ডিশনে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে পরপর দুটি নিজের ব্যাটসম্যানশিপের প্রমাণ দেন তিনি। গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইংলিশদের ঐতিহাসিক ২-০ ব্যবধানে জেতা সিরিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন রুট। চার ইনিংসে ১০৬.৫০ গড়ে দুটি সেঞ্চুরিতে রান করেন ৪২৬।
এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে উপহার দেন ২১৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণকে সামলে তার ওই ইনিংসের ওপর ভর করে ইংলিশরা ম্যাচটি জিতে নেয় ২২৭ রানে।
আহমেদাবাদে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বিরাট কোহলির দলকে বল হাতে চমকে দেন রুট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে মাত্র ৮ রানে নেন পাঁচ উইকেট। হাত ঘুরিয়ে বছর শেষে তার নামের পাশে উইকেট সংখ্যাটা ১৪।
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার অশ্বিন চলতি বছরে স্পিন মায়াজালে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও খেলেছেন দারুণ কার্যকরী কিছু ইনিংস। দেশে ও প্রতিপক্ষের মাটিতেও দুর্দান্ত ছিলেন এই অভিজ্ঞ বোলার।
বোলিংয়ে বছরের শুরুটা ভালো না হলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনি টেস্টে ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলেন অশ্বিন। ৪০৭ রান তাড়া করতে নেমে শেষ দিনে ২৭২ রানে ভারত যখন পঞ্চম উইকেট হারায়, দিনের খেলার তখনও বেশ বাকি। তবে বাকি সময়ে হনুমা বিহারিকে সঙ্গে নিয়ে ১২৮ বলে অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ বাঁচানোয় রাখেন বড় অবদান।
ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সব আলো বাঁহাতি স্পিনার আকসার প্যাটেল কেড়ে নিলেও আপন আলোয় উজ্জ্বল ছিলেন অশ্বিন। চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ঝাঁপি খুলে দিয়েছিলেন নিজের অলরাউন্ড দক্ষতার। বল হাতে দুই ইনিংসে ৮ উইকেট শিকারের পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে প্রচন্ড চাপের মুখে সেঞ্চুরি করে দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যান। ভারত ম্যাচটি জেতে ৩১৭ রানে।
চার টেস্টে ১৪.৭২ গড়ে ৩২ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৮৯ রানের জন্য সিরিজ সেরার পুরুস্কার ওঠে অশ্বিনের হাতে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ প্রথম চক্রের ফাইনালে গত জুনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায় ভারত। সাউদাম্পটনের পেস-বান্ধব উইকেটেও যথেষ্ট কার্যকর ছিলেন অশ্বিন, পেয়েছিলেন চার উইকেট।
এরপর ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজের দলে থাকলেও সুযোগ পাননি কোনো ম্যাচেই।
লাল বলের ক্রিকেটে নিজের প্রত্যাবর্তন সিরিজে আবারও জ্বলে ওঠেন অশ্বিন। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে মাত্র ১১.৩৬ গড়ে তুলে নেন ১৪ উইকেট। জিতে নেন ভারতের রেকর্ড নবম বারের মত সিরিজ সেরার পুরুস্কার। টেস্টে সর্বোচ্চ সিরিজ সেরার তালিকায় আছেন কেবল শ্রীলঙ্কান স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন (১১ বার)।
টেস্ট ক্রিকেটে নিউ জিল্যান্ডের সমৃদ্ধ বোলিং লাইনআপে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছেন কাইল জেমিসন। দারুণ কিছু স্পেলে অবদান রেখেছেন কিউইদের বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত জয়ে। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট ও নিল ওয়্যাগনারের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর এক পেস আক্রমণ। বোলার হিসেবে এই বছরে নিজেকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে গেছেন এই ডানহাতি পেসার।
সাদা বলের ক্রিকেটে আইসিসি ইভেন্টে বারবার ফাইনালে গিয়ে হৃদয় ভাঙ্গা হারের বিষাদ নিয়ে ফেরা নিউ জিল্যান্ডের জন্য শিরোপার আরেকটি উপলক্ষ্য হয়ে এসেছিল গত জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। সাউদাম্পটনের সহায়ক কন্ডিশনে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে বিপক্ষে দুই ইনিংসেই নিজেকে মেলে ধরেন জেমিসন।
প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতেও খেলেন ১৬ বলে ২১ রানের ছোট তবে কার্যকরী একটি ইনিংস। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন দুই উইকেট। দুই ইনিংসেই ভারত অধিনায়ক কোহলিকে সাজঘরে ফেরান ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের পেস-বোলিং বান্ধব উইকেট ছাড়াও উপমহাদেশের স্পিন সহায়ক উইকেটেও দারুণ বল করেন জেমিসন। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আলাদাভাবে নজর কাড়েন তিনি। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে গতি, সুইং ও স্কিল দিয়ে কঠিন পরীক্ষা নেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। সিরিজে তিনি উইকেট নেন ছয়টি।
ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে সাফল্যই বলে দিচ্ছে, আসছে বছরগুলোতে দীর্ঘদেহী বোলার হতে পারেন ব্যাটসম্যানদের বড় বড় চ্যালেঞ্জ।
টেস্ট ক্রিকেটের সময়ের সেরা ওপেনার হিসেবে অনেকেই এগিয়ে রাখেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে। অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এই সংস্করণে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দলের জন্য বছরটি মিশ্র অভিজ্ঞতার হলেও ব্যাট হাতে তার জন্য ছিল স্মরণীয়।
গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ১৪৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা লঙ্কানদের লড়াইয়ে ধরে রাখেন করুনারত্নে। লুঙ্গি এনগিডি ও আনরিক নরকিয়াকে নিয়ে সাজানো স্বাগতিকদের বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে শতক তুলে নেন করুনারত্নে।
আউট হওয়ার আগে ১২৮ বলে ১৯ চারে করেন ১০৩ রান। অধিনায়ক এক প্রান্তে লড়াকু ইনিংস খেলকেও অন্য প্রান্তে তাকে যোগ্য সমর্থন দিতে পারেননি কেউই। হেসেখেলেই ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এরপর ঘরের মাটিতে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও ছন্দ ধরে রাখেন করুনারত্নে। পাল্লেকেলেতে ড্র হওয়া প্রথম টেস্টে খেলেন ২৪৪ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। এরপর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকানোর পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ফিফটি। ম্যাচে স্বাগতিকরা জয় পায় ২০৯ রানে।
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ২-০ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন করুনারত্নে। চার ইনিংসে একটি শতক ও অর্ধশতকে ৬৯.৫০ গড়ে করেন ২৭৮ রান।