বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৩৫ বছর পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন বোল্যান্ড

উচ্ছ্বাস-উদযাপন একটা পর্যায়ে তো ছিলই। এরপর সেসব ছাপিয়ে স্কট বোল্যান্ডের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল অবিশ্বাস। অভিষেকে, ঘরের মাঠে এমন এক স্বপ্নযাত্রার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, নিজেও হয়তো বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। একেকটি উইকেট ধরা দিচ্ছিল আর বোল্যান্ডের প্রতিক্রিয়ায় যেন ফুটে উঠছিল, ‘হচ্ছেটা কী!’

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2021, 06:42 AM
Updated : 28 Dec 2021, 08:50 AM

৪-১-৭-৬, যে কোনো প্রেক্ষাপটে, যে কোনো বোলারের জন্য অসাধারণ এক ফিগার। সেটি যদি হয় অভিষেকে, তাহলে চোখ কপালেই ওঠার কথা। অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্টে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস গুঁড়িয়ে দেওয়া এই বোলিংয়ে বোল্যান্ড নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে।

অভিষেকে এত কম রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি নেই টেস্ট ইতিহাসে আর কারও। আগেরটি রেকর্ডটি গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ারই চার্লি টার্নার, প্রায় ১৩৫ বছর আগে!

সেই ১৮৮৭ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই সিডনিতে ১৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার টার্নার।

৫ উইকেটই শুধু নয়, অভিষেকে বোল্যান্ডের চেয়ে কম রান দিয়ে ২ উইকেটের বেশি নেওয়ার নজির নেই আর একটিও।

অভিষিক্তদের থেকে যদি সীমানা ছড়িয়ে দেওয়া হয় টেস্ট ইতিহাসের সব ম্যাচের সব বোলারে, বোল্যান্ডের চেয়ে কম রানে ৬ উইকেট আছে কেবল একজনেরই। ২০০২ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার জার্মেইন লসন।

তবে লসন বোলিং করেছিলেন ৬.৫ ওভার। স্রেফ ৪ ওভারেই ৬ উইকেট নেই ইতিহাসের আর কোনো বোলারের।

বোল্যান্ডের ৫ উইকেট পূর্ণ হয়ে যায় স্রেফ ১৯ বলের মধ্যেই। স্পেলের শুরু থেকে বলের হিসেবে টেস্টে দ্রুততম ৫ উইকেটের রেকর্ডে নাম লেখা হয়ে যায় তার। এখানে তিনি স্পর্শ করেন অস্ট্রেলিয়ারই আর্নি টোশাক ও ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের রেকর্ড।

সব মিলিয়ে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ সেরা বোলিং বোল্যান্ডের এই ৭ রানে ৬ উইকেট।

অথচ এই টেস্টে বোল্যান্ডকে খেলানোই ছিল বড় চমক। জশ হেইজেলউড চোটের কারণে নেই। তার বদলে সুযোগ পাওয়া জাই রিচার্ডসনও আগের টেস্টে ৫ উইকেট পাওয়ার পর হালকা চোটের কারণে খেলতে পারেনি এই টেস্টে। তার পরও বোল্যান্ডের খেলা নিশ্চিত ছিল না। তৃতীয় পেসারের জায়গার লড়াইয়ে ছিলেন মাইকেল নিসারও।

আগের টেস্টে অভিষেকে খারাপ করেননি নিসার। তারই এগিয়ে থাকার কথা লড়াইয়ে। শেষ পর্যন্ত বোল্যান্ডের ওপর দল আস্থা রাখে ম্যাচটি মেলবোর্নে বলেই। ভিক্টোরিয়ান পেসারের ঘরের মাঠ এটি। এই মাঠে তার রেকর্ড দারুণ, শেফিল্ড শিল্ডের সবশেষ ম্যাচেও নেন ৮ উইকেট। এই মাঠের কথা ভেবেই তাকে উপহার দেওয়া হয় টেস্ট ক্যাপ। তিনি প্রতিদান দিলেন রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে।

ছেলেদের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র দ্বিতীয় আদিবাসী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেললেন তিনি। শুধু এদিক থেকেই নয়, উপলক্ষ স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি ইতিহাস গড়া বোলিংয়ে।

সেই ১৮৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী দল নিয়ে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখানো ক্রিকেটার জনি মাল্লার স্মরণে বক্সিং ডে টেস্টের ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কারের নাম এখন ‘জনি মাল্লা মেডেল।’ সেটি এবার গলায় পরলেন এক আদিবাসী ক্রিকেটারই।

পরের টেস্টের জন্যও মধুর এক সমস্যায় পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট। রিচার্ডসন ফিট হয়ে উঠছেন নিশ্চিতভাবেই, ফিট হয়ে উঠতে পারেন হেইজেলউডও। সঙ্গে বোল্যান্ড ও নিসার, একটি জায়গার জন্য লড়াইয়ে চারজন। সিডনিতে কাকে রেখে কাকে খেলাবে দল!