বোল্যান্ডের আগুনে পুড়ে ছাই ইংল্যান্ড, ‘ছাইদানি’ অস্ট্রেলিয়ার

‘হি ক্যান ডু নো রং’, ধারাভাষ্যকার কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হলো এই কথা। এতটা নিখুঁত বোলিং উপহার দিলেন স্কট বোল্যান্ড, ঘরের মাঠের দর্শকের গর্জনের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরলেন এমন ভাবে, আসলেই যেন কোনো ভুল তিনি করতে পারেন না! অভিষেকে তিনি উপহার দিলেন রেকর্ড গড়া বোলিং। ইংল্যান্ডকে বিধ্বস্ত করে বক্সিং ডে টেস্ট জিতে অ্যাশেজের ট্রফি বিখ্যাত সেই ‘ছাইদানি’ ধরে রাখল অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2021, 04:35 AM
Updated : 28 Dec 2021, 04:35 AM

বক্সিং ডে টেস্টের স্থায়ীত্ব হলো স্রেফ দুই দিন ও এক ঘণ্টা। প্রথম ইনিংনে মাত্র ২৬৭ রানের পুঁজি নিয়েও অস্ট্রেলিয়া জিতে গেল ইনিংস ও ১৪ রানে। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম তিনটিই জিতে তারা নিশ্চিত করল, অ্যাশেজ থাকছে নিজেদের কাছেই।

মেলবোর্নে মঙ্গলবার ম্যাচের তৃতীয় দিন সকালে প্রথম পানি পানের বিরতির একটু পর ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় কেবল ৬৮ রানেই।

১১৭ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন রান এটি। সবশেষ ১৯০৪ সালে মেলবোর্নেই তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৬১ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার এই ধ্বংসযজ্ঞের মূল নায়ক বোল্যান্ড। ৩২ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকে তোলপাড় ফেলে দেন তিনি রেকর্ড বইয়ে। মাত্র ৪ ওভার বোলিংয়েই ৭ রান দিয়ে তার শিকার ৬ উইকেট।

অভিষেকে এত কম রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি নেই ক্রিকেট ইতিহাসে আর কারও।

৬ উইকেটের প্রথম ৫টি নেন তিনি ১৯ বলের মধ্যে। তাতে টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম ৫ উইকেটের রেকর্ডে স্পর্শ করেন আর্নি টোশাক ও স্টুয়ার্ট ব্রডের রেকর্ড।

মাত্র ৮২ রানের লিড নিয়েই ইনিংস ব্যবধানে জিতল অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৪ বছরের ইতিহাসে এর চেয়ে কম লিড নিয়ে ইনিংসে জয় আছে আর কেবল দুটি।

সব মিলিয়ে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্যাট কামিন্সের যাত্রা শুরু হলো স্বপ্নের মতো।

জয়ের পথটা আগের দিনই সুগম করে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড তৃতীয় দিন শুরু করে ৪ উইকেটে ৩১ রান নিয়ে।

দুই দলের সবাই কোভিড পরীক্ষায় উতরে তবেই মাঠে নামতে হয় তৃতীয় দিনে। আগের দিন ইংল্যান্ডের সাপোর্ট স্টাফের দুজন ও পরিবারের দুজন সদস্য কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর পিসিআর পরীক্ষা করানো হয় অন্য সবারই। সেটির ফল স্বস্তি বয়ে আনে দুই দলেই।

তবে মাঠের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের স্বস্তি ছিল না। আগের দিন ইংলিশদের ভোগান্তির শুরু যার বোলিংয়ে, সেই মিচেল স্টার্ক নতুন দিনেও ছোবল দেন সবার আগে। দিনের পঞ্চম ওভারে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকসকে। ১৪৫ কিলোমিটার গতির গোলা সিমে পিচ করে ভেতরে ঢুকে ছত্রখান করে দেয় স্টাম্প।

এরপর সবকিছু যেন বোল্যান্ডময়। ঘরের ছেলের অভিষেকে দর্শকেরা গলা ফাটিয়ে উৎসাহ দিয়ে যান প্রতিটি বলে। উজ্জীবিত বোল্যান্ড প্রতিদান দেন আগুনঝরা বোলিংয়ে। জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে এ দিন তার শিকার ধরার শুরু। পরে ফিরিয়ে দেন মূল বাধা জো রুটকেও।

১২ রানে দিন শুরু করা ইংলিশ অধিনায়ক ২৮ রানে ক্যাচ দেন স্লিপে। তাতে এই বছর তিনি থামলেন ১ হাজার ৭০৮ রান নিয়ে।

ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে ১ হাজার ৭০০ রান তার হলো বটে, তবে রেকর্ড গড়া হলো না। ২০০৬ সালে মোহাম্মদ ইউসুফের ১ হাজার ৭৮৮ ও ১৯৭৬ সালে ভিভ রিচার্ডসের ১ হাজার ৭১০ রান রইল রুটের ওপরে।

এরপর নিজের বলে মার্ক উডের ক্যাচ নিয়ে বোল্যান্ড পূর্ণ করেন অভিষেকে ৫ উইকেট। এক বল পর ধরা দেয় অলিভার রবিনসনের উইকেটও। তার উচ্ছ্বাস-উদযাপনে তখন চোখেমুখে লেগে আছে অবিশ্বাসের ছাপও। নিজেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না!

রবিনসনের শূন্য রানে বিদায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি রেকর্ডে নাম লেখা হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। ৫৪টি ‘ডাক’ নিয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি দলীয় শূন্যের রেকর্ডে তারা স্পর্শ করে ১৯৯৮ সালে গড়া নিজেদেরই রেকর্ড।

পরের ওভারেই জিমি অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন ক্যামেরন গ্রিন। ১ হাজার ৮৪ বলেই শেষ ম্যাচ ম্যাচ। গত ৭০ বছরে অস্ট্রেলিয়ায় সংক্ষিপ্ততম ম্যাচ এটি।

দারুণ জয়ে বাঁধনহারা উল্লাসে মাতে অস্ট্রেলিয়ানরা। পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে তারা জবাব দেয় দর্শকের অভিনন্দনের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৮৫

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ২৬৭

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ২৭.৪ ওভারে ৬৮ (আগের দিন ১২ ওভারে ৩১/৪) (রুট ২৮, স্টোকস ১১, বেয়ারস্টো ৫, বাটলার ৫*, উড ০, রবিনসন ০, অ্যান্ডারসন ২; স্টার্ক ১০-৩-২৯-৩, কামিন্স ১০-৪-১৯-০, বোল্যান্ড ৪-১-৭-৬, গ্রিন ৩.৪-০-৭-১)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ১৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের তিনটি শেষে অস্ট্রেলিয়া ৩-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: স্কট বোল্যান্ড।