ঢাকার মালিকানা বদল নিয়ে অগোছালো পরিস্থিতি, যা বলছে বিসিবি

বিপিএল আর বিতর্ক হাত ধরাধরি করে চলছে একদম শুরু থেকেই। তবে এবারের ঘটনা বিপিএলের মান মাথায় রেখেও বিস্ময়কর। ড্রাফটের আগের রাতে কিনা বদলে গেল একটি দলের মালিকানা! বিসিবি পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের দাবি, বিতর্কিত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সামনের বিতর্ক এড়াতেই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2021, 03:39 PM
Updated : 27 Dec 2021, 03:39 PM

গত বুধবার বিপিএলের ৬ দলের সত্ত্বাধিকারীদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বিসিবি। ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি পায় রূপা ফ্রেব্রিকস লিমিটেড ও মার্ন স্টিল লিমিটেডের কনসোর্টিয়াম। কিন্তু আর্থিক শর্ত পূরণ করতে না পারায় তাদেরক শেষ পর্যন্ত দল দেয়নি বিসিবি।

ড্রাফটের আগের রাতে এই পরিবর্তন আসে। অনেক আলোচনার পর গভীর রাতে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত এই ফ্র্যাঞ্চাইজি নিজেদের কাছেই রাখবে বিসিবি।

ড্রাফটের কয়েক ঘণ্টা আগে একটি দলের মালিকানা বদল নিশ্চিতভাবেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে গোটা দুনিয়ায় আর কোথাও কখনও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা জন্ম দেয় তুমুল সমালোচনার।

সোমবার ড্রাফটের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ইসমাইল হায়দার তুলে ধরলেন শেষ মুহূর্তে এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট।

“যখন আমরা বিপিএলের টেন্ডারে যাই, তখন প্রায় ১০-১২ টি দল আমাদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করে। পুরো প্রক্রিয়া করে আমরা ৮ জনকে বাছাই করি, যারা সত্ত্বাধিকারী হিসেবে থাকতে পারবে। তার থেকে আমরা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ৬টিকে নেই। ৫ জনই নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা দিয়েছে, একজন জমা দিতে পারেনি।”

“আগে যারা দল নিতে চেয়েছিল, গতকাল রাতেও তাদের একজন আগ্রহী ছিল। আমরা চিন্তা করেছি, বোর্ড আগে দলটা তৈরি করে ফেলুক। তৈরি করার পর স্পন্সরশিপ ব্যানারে হোক বা মালিকানা হোক, এটা আমরা দিয়ে দেব।”

বিসিবির প্রধান নির্বাহী ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য নিজাম উদ্দিন চৌধুরি কদিন আগে বলেছিলেন, অনেক যাচাই-বাছাই করে তারা ফ্র্যাঞ্চাইজির সত্ত্বাধিকারী বেছে নিচ্ছেন। খুঁটিনাটি দেখে সত্ত্বাধিকারী বেছে নেওয়ার পরও কেন এমন বিতর্কিত পরিস্থিতি হলো, সেই প্রশ্নে ইসমাইল হায়দার মল্লিক উল্টো দাবি করলেন, বিসিবির প্রশংসা প্রাপ্য।

“যাচাই-বাছাই করে দিচ্ছি বলেই তো উনাদের বাদ দিয়ে দিলাম। এটা তো একটা দিক থেকে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য যে, বোর্ড শুধু টাকার জন্য দল দিয়ে দেয়নি। আমাদের হাতে স্পন্সর আছে, সত্ত্বাধিকারী আছে। দল যে খারাপ হয়েছে, তা কিন্তু নয়। সেরা দলগুলির একটি হয়েছে। আমাদের বোর্ড সভাপতি গত রাতেই নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবেই সবকিছু প্রস্তুত আছে।”

“এখানে যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক হয়ে আসে, সবসময় যে তারা নিয়ম-কানুন মানতে চায়, সবার মধ্যে এই মানসিকতা থাকে না। ৩-৪ বছর আগে বড় আকারে যে বিপিএল হতো, এবার তার চেয়ে ছোট আঙ্গিকে হচ্ছে, অন্তত আর্থিক দিক থেকে। এর মধ্যেই আমাদের যে আর্থিক নিয়ম-কানুন ও অন্যান্য ইস্যু যা ছিল, আমরা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে চাই।”

প্রশ্ন থাকছে সেখানেই, এই প্রক্রিয়া কেন ড্রাফটের আগের দিনই করতে হবে? যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে ড্রাফটের অনেক আগেই তো আর্থিক শর্ত পূরণের শেষ দিনটি রাখা যেত! ইসমাইল হায়দার মল্লিক অবশ্য সেটির গভীরে যেতেই চাইলেন না। তিনি কেবল স্বচ্ছতার কথাই বললেন আরেকবার।

“যে কোনো সময়ই হতে পারে (মালিকানা বাতিল)। টুর্নামেন্ট চলার সময়ও যদি দেখি যে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি সত্ত্বাধিকারী বা স্পন্সর আমাদের নিয়ম-কানুন ভেঙেছে, তাদেরকে আমরা বাদ দিতে পারি। যে কোনো সময়ই হতে পারে।”

ড্রাফটের আগের রাতে মালিকানা বদল, ড্রাফটের দিন সকালে আগেই চূড়ান্ত করা ক্রিকেটারদের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন, এসব নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করেন না এই বোর্ড পরিচালক।

“মোটেও অগোছালো নয়। বরং বোর্ড সুচিন্তিতভাবেই এটা করেছে। আমরা বোর্ডে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবশেষ বোর্ড সভায়ই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আর্থিক বা কোনো ইস্যু থাকলে দল দেওয়া হবে না।”