রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়ালের সৌজন্যে সিরিজের প্রথম দিনটি দারুণ কাটাল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের প্রথম দিনে তাদের রান ৩ উইকেটে ২৭২।
১২২ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন রাহুল। ৪১ টেস্টে তার ৭ম সেঞ্চুরি এটি, ৬টিই দেশের বাইরে!
ভারতের ওপেনারদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি ছিল আগে কেবল ওয়াসিম জাফরের, ২০০৭ সালে।
ওপেনারের সেঞ্চুরি খরাই বলে দিচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন বল খেলার কাজটি কতটা কঠিন। মুভমেন্ট, বাউন্স, গতি, সব মিলিয়েই ওপেনারদের কঠিন পরীক্ষা নেয় সেখানকার সব মাঠের উইকেট।
তবে এবার সেঞ্চুরিয়নের উইকেট একটু ব্যতিক্রম। হালকা ঘাসের ছোঁয়া যদিও আছে, তবে খেলা শুরুর পর দেখা গেল উইকেট কিছুটা মন্থর। বাউন্সও খুব ভয়ঙ্কর নয়। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলাররাও লাইন-লেংথে ছিলেন না খুব ধারাবাহিক।
তবে রাহুল ও মায়াঙ্কের কৃতিত্ব তাতে কমছে না। নতুন বলের চ্যালেঞ্জ যা ছিল, তাদেরকেই তো সামলাতে হয়েছে! দারুণ ব্যাটিংয়ে ভারতের দুই ওপেনার গড়েন শতরানের জুটি।
প্রায় ৩০ বছর আগে বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টে ফেরার পর এই প্রথম তাদের ঘরোয়া গ্রীষ্মের প্রথম টেস্টে শতরানের শুরু পেল কোনো প্রতিপক্ষ।
ভারত ব্যাটিংয়ে নামে টস জিতে। দক্ষিণ আফ্রিকা পেস আক্রমণ সাজায় কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডির সঙ্গে মার্কো ইয়ানসেনকে নিয়ে। ২১ বছর বয়সী দীর্ঘদেহী বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ইয়ানসেন পান টেস্ট ক্যাপ। পাশাপাশি পেস বোলিং অলরাউন্ডার ভিয়ান মুল্ডারকে নিয়ে ৪ পেসারের আক্রমণ। কিন্তু শুরুটা ভালো করতে পারেননি তারা।
শুরুতে রাহুল ছিলেন সাবধানী, মায়াঙ্ক খেলেন দারুণ কিছু শট। জুটির যখন ফিফটি হলো, তাতে মায়াঙ্কের অবদানই ৩৬।
জুটি ভাঙার একটি সুযোগই পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৬ রানে ইয়ানসেনের বলে মায়াঙ্কের কঠিন ক্যাচ নিতে পারেননি কিপার কুইন্টন ডি কক।
প্রথম সেশনে ২৮ ওভার খেলে ৮৩ রান নিয়ে লাঞ্চে যান তারা অবিচ্ছিন্ন থেকে। পরের সেশনে শতরান হয়ে যায় জুটির অনায়াসেই।
ভারতের প্রথম পছন্দের টেস্ট ওপেনার রোহিত শর্মা চোটের কারণে এই সিরিজে নেই। ভবিষ্যতে বাকি একটি জায়গা নেওয়ার দৌড়ে থাকতে পারেন রাহুল ও মায়াঙ্ক। সেই লড়াইটা দুজন জমিয়ে দিলেন দারুণভাবে।
অভিষেকে বিপজ্জনক কিছু ডেলিভারি করে প্রতিভার ছাপ কিছু রাখেন ইয়ানসেন। তবে পাশাপাশি আলগা বলও করেন অনেক। সেঞ্চুরিয়নে দারুণ রেকর্ড থাকলেও এ দিন সুবিধা করতে পারেননি রাবাদা।
প্রোটিয়াদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা এই জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙেন এনগিডি। তার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি লাগে মায়াঙ্কের পায়ে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২৩ বলে ৬০ রানে বিদায় নেন মায়াঙ্ক, জুটি থামে ১১৭ রানে।
পরের বলেই ধরা দেয় আরেকটি উইকেট। এবার চেতেশ্বর পুজারার ব্যাটে ছোবল দিয়ে প্যাড ছুঁয়ে বল আশ্রয় নেয় শর্ট লেগের হাতে।
পুজারার ৯৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় ‘গোল্ডেন ডাক’ এটি। দুটিই সেঞ্চুরিয়নে এবং দুবারই তিনি এনগিডির শিকার। আগেরবার ২০১৮ সালে তাকে সরাসরি থ্রোয়ে আউট করেছিলেন এনগিডি।
সেই জোড়া ধাক্কা ভারত সামলে নেয় রাহুল ও বিরাট কোহলির ব্যাটে। ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে রাহুল ফিফটি স্পর্শ করেন ১২৭ বলে। কোহলি থিতু হয়ে যান বেশ অনায়াসেই। জমে ওঠে আরেকটি জুটি।
৮২ রানের এই জুটি ভাঙে কোহলির বাজে এক শটে। শিকারি সেই এনগিডিই। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে পিচ করে আরও বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ধরা পড়েন ভারতীয় অধিনায়ক ৯৪ বলে ৩৫ রান করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সেটি ছিল খেলায় ফেরার সুযোগ। প্রচণ্ড চাপে থাকা অজিঙ্কা রাহানের জন্য এটি বলা যায় ক্যারিয়ার বাঁচানোর ম্যাচ।
কিন্তু রাহানের ব্যাটিংয়ে স্নায়ুর চাপের লেশ মাত্র দেখা যায়নি। উইকেটে গিয়েই দারুণ কিছু শট খেলেন তিনি। রাহুল তো আরেক প্রান্তে আস্থার প্রতিমূর্তি। তাতেই ভারত পেয়ে যায় আরেকটি জুটি।
বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে টানা দুই বলে চার ও ছক্কায় ৯০ স্পর্শ করেন রাহুল। এরপর ১২ ওভারের প্রতীক্ষা শেষে তার সেঞ্চুরি আসে ২১৮ বলে।
এই বছরই টেস্ট দলে ফেরার পর ট্রেন্টব্রিজে ৮৪ করেছিলেন তিনি, লর্ডসে করেছিলেন সেঞ্চুরি। এবার আরেকটি সেঞ্চুরিতে জানান দিলেন, সহজে আর ছাড়তে চান না জায়গা।
শেষ করেননি সেখানেই। বরং দিনের বাকিটাও কাটিয়ে দেন নিরাপদে। ৪০ রানে দিন শেষ করেন রাহানে। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটির রান ৭৩।
দক্ষিণ আফ্রিকা এই জুটি ভাঙতে পারেনি দিনের শেষ দিকে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৯০ ওভারে ২৭২/৩ (রাহুল ১২২*, মায়াঙ্ক ৬০, পুজারা ০, কোহলি ৩৫, রাহানে ৪০*; রাবাদা ২০-৫-৫১-০, এনগিডি ১৭-৪-৪৫-৩, ইয়ানসেন ১৭-৪-৬১-০, মুল্ডার ১৮-৩-৪৯-০, মহারাজ ১৮-২-৫৮-০)।