ক্রিকেটকে হরভজনের বিদায়

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থমকে ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া গত আইপিএলের বাকি অংশেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। এবার সব কিছুর শেষ বলে দিলেন হরভজন সিং। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন ভারতের এই অফ স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2021, 10:30 AM
Updated : 24 Dec 2021, 12:34 PM

টুইটারে শুক্রবার ভিডিও বার্তায় অবসরের ঘোষণা দিয়ে ৪১ বছর বয়সী হরভজন বলেন, অনেক দিক থেকে আগেই তিনি অবসর নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকায় অবসরের ঘোষণা দেরিতে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

“সবার জীবনে একটা সময় আসে যখন কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয় এবং সামনে এগিয়ে যেতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে এই ঘোষণার ব্যাপারে ভেবেছি। কিন্তু বিষয়টি বলার জন্য সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম; আজ, আমি ক্রিকেটের সব সংস্করণ থেকে অবসর নিচ্ছি।”

“অনেক দিক থেকে আগেই একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি অবসর নিয়েছি, কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারছিলাম না। বেশ কিছু সময় ধরে আমি আর সক্রিয় ক্রিকেটার নই। কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম এবং (২০২১) আইপিএল মৌসুমে তাদের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মৌসুম চলাকালে আমি অবসরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।”

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হরভজনের অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। দলের ৮ উইকেটে হারের সেই ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন ২ উইকেট। সব মিলিয়ে ১০৩ টেস্টে ৩২.৪৬ গড়ে তার উইকেট ৪১৭টি, দেশের হয়ে যা চতুর্থ সর্বোচ্চ।

তার ইনিংস সেরা বোলিং ৮৪ রানে ৮ উইকেট, ম্যাচ সেরা ২১৭ রানে ১৫ উইকেট, দুটিই ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টে। তার সেই বোলিং ভারতের ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে রেখেছিল বড় ভূমিকা। কলকাতায় সিরিজের আগের টেস্টে ফলো-অনে পড়ে পঞ্চম উইকেটে রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণের ৩৭৬ রানের জুটি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে, তবে ভারতের জয়ে বড় অবদান রেখেছিল ম্যাচে হরভজনের ১৩ উইকেট।   

ওয়ানডে খেলেছেন তিনি ২৩৬টি, ৩৩.৩৫ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ২৬৯টি। এর মধ্যে চারটি ২০০৭ সালে এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রো-এশিয়া কাপে। ২৮ টি-টোয়েন্টিতে উইকেট ২৫টি। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তার ৭০৭ উইকেট ভারতের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৯৫৩ উইকেট নিয়ে তার ওপরে আছেন অনিল কুম্বলে।

২০০৭ সালে ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য হওয়াসহ দেশের হয়ে দারুণ সব সাফল্য আছে হরভজনের। সেরা অর্জন অবশ্যই ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। তিন টেস্টে ৩২ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। যেখানে আর কোনো ভারতীয় বোলারের ৩ উইকেটের বেশি ছিল না। এর মধ্যে কলকাতা টেস্টে ১৩ উইকেট নেওয়ার পথে তিনি করেছিলেন হ্যাটট্রিক।  

“আমাকে যদি আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার প্রথম আনন্দময় মুহূর্ত কলকাতায় করা হ্যাটট্রিক, টেস্ট ম্যাচে প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে যা করেছিলাম। সেই সিরিজের তিন টেস্টে ৩২ উইকেট নিয়েছিলাম, যা এখনও রেকর্ড।”

“এরপর ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় এবং ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই আনন্দ আমার জন্য কত বড় ছিল, তা আমি ভুলতে পারব না বা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”

সবশেষ টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন তিনি ২০১৫ সালে। পরের বছরের মার্চে ঢাকায় এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচটি দেশের হয়ে তার শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল।

আইপিএলেও হরভজন দারুণ সফল। ১৬৩ ম্যাচে ১৫০ উইকেট নিয়ে আইপিএলের পঞ্চম সেরা উইকেট শিকারি বোলার তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট, ২০১১ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের শিরোপা জয়ে রেখেছিলেন বড় অবদান।

আইপিএলে ১০ বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে খেলে তিনি নাম লেখান আরেক বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংসে। দুই মৌসুম তাদের হয়ে খেলার পর শেষ করলেন কলকাতার হয়ে।