হারের আগে ইংল্যান্ডের লড়াই

ম্যাচ বাঁচাতে কাটিয়ে দিতে হতো পুরো একটি দিন। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় জস বাটলার আগলে রাখেন এক প্রান্ত। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ক্রিস ওকস। কিন্তু জাই রিচার্ডসনের তোপে ইংলিশদের সেই দেয়াল টিকল না শেষ পর্যন্ত। দারুণ এক জয়ে অ্যাশেজ ট্রফি ধরে রাখার পথে আরেকধাপ এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2021, 10:07 AM
Updated : 20 Dec 2021, 11:18 AM

অ্যাডিলেইডে দিবা-রাত্রির টেস্টটি স্বাগতিকরা জিতে নিল ২৭৫ রানে। টানা দুই জয়ে ৫ ম্যাচের সিরিজে তারা এখন এগিয়ে ২-০ তে। শেষ তিন টেস্টের একটি ড্র করলেই ঐতিহাসিক অ্যাশেজ থাকবে তাদের কাছে।

পঞ্চম দিন অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট। আর ৪৬৮ রানের লক্ষ্যে ৩৮৬ রানে পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ডকে কাটাতে হতো তিন সেশন। আশা জাগিয়ে তৃতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় শেষ সফরকারীদের লড়াই।

ইংল্যান্ডের আশার বাতি জ্বেলে রাখেন বাটলার। কিন্তু তার ২০৭ বল ও ২৫৮ মিনিট স্থায়ী ২৬ রানের প্রতিরোধ ভাঙে নিজের ভুলেই। রিচার্ডসনকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে পা দিয়ে নিজেই ভেঙে দেন স্টাম্প। তার সঙ্গে ১৯০ বলে ৬১ রানের জুটিতে ৯৭ বলে ৪৪ রান করেন ওকস। তিনিও শিকার রিচার্ডসনের।

প্রায় তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ভাগে রিচার্ডসন করেন আগুন ঝরা বোলিং। প্রথমবারের মতো এই সংস্করণে নেন ৫ উইকেট, ৪২ রান খরচায়। তার আগের সেরা ছিল ২৬ রান দিয়ে তিন উইকেট।

অস্ট্রেলিয়াকে পাহাড়সম পুঁজি এনে দেওয়ার নায়ক মার্নাস লাবুশেন জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৫১।

আগে থেকেই ব্যাকফুটে থাকা ইংল্যান্ড দিনের শুরুতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৪ উইকেটে ৮২ রান নিয়ে খেলতে নামা দলটি অলি পোপকে হারায় তৃতীয় ওভারেই। মিচেল স্টার্কের বলে স্লিপে ধরা পড়েন পোপ।

টিকে থাকার চেষ্টা চালানো বেন স্টোকসকে এলবিডব্লিউ করে দেন ন্যাথান লায়ন। রিভিউ নিয়ে ইংলিশ অলরাউন্ডারকে ফেরায় স্বাগতিকরা।

অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত দুই উইকেট পতনে হারের দুয়ারে তখন ইংল্যান্ড। বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান বলতে উইকেটে কেবল বাটলার। ওকসকে নিয়ে তিনি কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন।

ওকসের ব্যাটে কিছুটা রান আসলেও বাটলারের মনোযোগ ছিল কেবল উইকেট ধরে রাখায়। এই দুইজনের ব্যাটে তখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ইংলিশরা। কিন্তু সেই স্বপ্ন দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ভেঙে দেন রিচার্ডসন। তার সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল ওকসের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে ছোবল দেয় মিডল স্টাম্পে।

এরপর বাটলারের সঙ্গে দলের হার এড়ানোর অভিযানে যোগ দেন অলিভার রবিনসন। তার লড়াই থামে লায়নের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। মাঝে একবার জীবনও পান তিনি। তার কঠিন ফিরতি ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাইকেল নিসার।

একের পর এক বল ছেড়ে, ডিফেন্ড করে সময় পার করতে থাকেন বাটলার। কিন্তু এর মাঝেই করে বসেন সেই ভুল। একটু বেশিই পেছনে গিয়ে খেলতে গিয়ে মাঠ ছাড়েন হিটউইকেটের হতাশা নিয়ে।

৪ ঘণ্টার বেশি ব্যাট করা বাটলারের স্ট্রাইক রেট ১২.৫৬। টেস্ট ইতিহাসে ইনিংসে ২০০ বা এর বেশি বল খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা তৃতীয় মন্থরতম। আর কিপার-ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয়।

এরপর অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে রিচার্ডসন পূর্ণ করেন নিজের পাঁচ উইকেট। দলকে এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জয়।

আগামী রোববার সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৪৭৩/৯ ডিক্লে.

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৩৬

অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: ২৩০/৯ ডিক্লে.

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৬৮) (আগের দিন ৮২/৪) ১১৩.১ ওভারে ১৯২ (স্টোকস ১২, পোপ ৪, বাটলার ২৬, ওকস ৪৪, রবিনসন ৮, ব্রড ৯*, অ্যান্ডারসন ২; স্টার্ক ২৭-১০-৪৩-২, রিচার্ডসন ১৯.১-৯-৪২-৫, লায়ন ৩৯-১৬-৫৫-২, নিসার ১৩-৫-২৮-১, গ্রিন ৯-৫-৯-০, লাবুশেন ৪-২-১০-০, স্মিথ ১-১-০-১)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ২৭৫ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্নাস লাবুশেন