অ্যাশেজের অ্যাডিলেইড টেস্টে শুক্রবার অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ৪৭৩ রানে। ইংলিশরা শেষদিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করেছে ১৭ রান নিয়ে। জো রুটের সঙ্গে উইকেটে আছেন দাভিদ মালান।
বিরূপ আবহাওয়ায় প্রায় ঘণ্টা খানেক আগেই দিনের খেলা শেষ করে দেন আম্পায়াররা। সফরকারীরা এখনও পিছিয়ে আছে ৪৫৬ রানে।
অস্ট্রেলিয়াকে বড় পুঁজি এনে দেওয়ার পথে লাবুশেন খেলেন ১০৩ রানের ইনিংস। টেস্টে চতুর্থবারের মতো নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়া স্মিথ করেন ৯৩। আর অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান।
অস্ট্রেলিয়া দিন শুরু করে ২ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে, আর লাবুশেন ৯৫ রানে। জেমস অ্যান্ডারসনকে চার মেরে দিনের পঞ্চম ওভারে ২৮৭ বলে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান পা রাখেন সেঞ্চুরিতে।
টেকনিক, টেম্পারমেন্টের দারুণ প্রদর্শনী মেলে ধরে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছান লাবুশেন। ২০ টেস্টে এটি তার ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, অ্যাশেজে প্রথম। তবে এখনও পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের কঠিনতম পরীক্ষায় উতরে সেঞ্চুরি সম্ভবত এটিই।
সেঞ্চুরির পর অলিভার রবিনসনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লাবুশেন। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বলটি ছিল ‘নো।’রবিনসন নিজের পরের ওভারেই শেষ পর্যন্ত ভাঙেন লাবুশেনের কঠিন প্রতিরোধ। ভেতরে ঢোকা বল পড়তে ভুল করে না খেলে ছেড়ে দেন লাবুশেন। বল লাগে প্যাডে। ইংলিশদের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি ব্যাটসম্যান। ৩০৫ বলে ৮ চারে ১০৩ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
এবার আর টিকতে পারেননি আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড। দ্রুত ফিরে যান ক্যামেরন গ্রিনও। জো রুটের ঝুলিয়ে দেওয়া বল বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় মিস করে বোল্ড হয়ে যান হেড। পরের ওভারেই দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে গ্রিনের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন বেন স্টোকস।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝেই ১৩৫ বলে ফিফটি তুলে নেন স্মিথ। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা অ্যালেক্স কেয়ারিকে নিয়ে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশনের বাকি সময়।
দ্বিতীয় সেশনে জমে ওঠে স্মিথ-কেয়ারির জুটি। পঞ্চাশ ছুঁয়ে এগোতে থাকে সেঞ্চুরির দিকে। স্মিথও চোখ রাখেন নিজের শতরানে, আর কেয়ারি ফিফটিতে।
কিন্তু দারুণ খেলতে থাকার মাঝেই অ্যান্ডারসনের নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান কামিন্সের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব পাওয়া স্মিথ। ১২ চার ও এক ছক্কায় ৯৩ রানের ইনিংসটি রিভিউ নিয়েও বাঁচাতে পারেননি স্মিথ। ডেভিড ওয়ার্নারের পর তাকেও ফিরতে হয়ে আক্ষেপ নিয়ে।
কেয়ারি ১০৪ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। নিজ শহর অ্যাডিলেইডেই পেলেন তিনি টেস্টে নিজের প্রথম পঞ্চাশের স্বাদ। এরপর আর এগোতে পারেননি এই কিপার-ব্যাটসম্যান। অ্যান্ডারসনের বলে কাভারে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ৫ চারে ৫১ করে।
মিচেল স্টার্ক ও অভিষিক্ত মাইকেল নিসার মিলে দ্রুত বাড়াতে থাকেন দলের রান। ৫১ বলে এই দুই জনে যোগ করেন ৫৮ রান। তাদের ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেয় সাড়ে চারশ ছাড়ানো পুঁজি।
২৪ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় ৩৫ রান করে স্টোকসের বলে ফেরেন নিসার। স্টার্ক অপরাজিত থাকেন ৫ চারে ৩৯ করে। পরে জাই রিচার্ডসন ফিরলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় স্বাগতিকরা।
শেষ বেলায় কেবল ৮.৪ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পায় অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যেই বিদায় করে দেয় দুই ওপেনারকে।
স্টার্কের ব্যাক অব লেংথের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন ররি বার্নস। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের স্বাদ পান নিসার। তার হাফভলির মতো বল লেগ সাইডে খেলে মিড অনে স্টার্কের হাতে তুলে দেন হাসিব হামিদ। নিসারের অভিষেক উইকেটে তার সঙ্গে আনন্দে মাতে পুরো দল।
এরপরই বিরূপ আবহাওয়ায় এদিন আর খেলা সম্ভব হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২২১/২) ১৫০.৪ ওভারে ৪৭৩/৯ ডিক্লেয়ার (লাবুশেন ১০৩, স্মিথ ৯৩, হেড ১৮, গ্রিন ২, কেয়ারি ৫১, স্টার্ক ৩৯*, নিসার ৩৫, রিচার্ডসন ৯; অ্যান্ডারসন ২৭-১০-৫-২, ব্রড ২৬-৬-৭৩-১, ওকস ২৩.৪-৬-১০৩-১, রবিনসন ২৭-১৩-৪৫-১, স্টোকস ২৫-২-১১৩-৩, রুট ২০-২-৭২-১)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৮.৪ ওভারে ১৭/২ (হামিদ ৬, বার্নস ৪, মালান ১*, রুট ৫*; স্টার্ক ৩-১-১১-১, রিচার্ডসন ৪-৩-১-০, নিসার ১.৪-০-৪-১)