রেকর্ড গড়ে উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল পাকিস্তান

করোনাভাইরাসের ছোবলে কমতে কমতে দলে অবশিষ্ট ছিল কেবল চার জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তাদের দারুণ ব্যাটিংয়েই বিশাল সংগ্রহ গড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্যও দাঁড়াল রেকর্ড রান তাড়া করার চ্যালেঞ্জ। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সেই কঠিন পথই পাড়ি দিল দলটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2021, 04:58 PM
Updated : 16 Dec 2021, 06:09 PM

করাচিতে বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তানে। ক্যারিবিয়ানদের দেওয়া ২০৮ রানের লক্ষ্য তারা ছুঁয়ে ফেলে ৭ বাকি থাকতেই।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এত বেশি রান আগে কখনও তাড়া করে জিততে পারেনি পাকিস্তান। চলতি বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২০৪ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয় ছিল দলটির আগের রেকর্ড।

রেকর্ড গড়া জয়ের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশও করল বাবরের দল।

ছয় জন ক্রিকেটার কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ায় একাদশ সাজাতেই বেগ পেতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। বিশেষজ্ঞ চার ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন কিং, শামারা ব্রুকস, নিকোলাস পুরান ও ড্যারেন ব্রাভোকে নিয়ে মাঠে নামে তারা। পুরানের ফিফটি ও বাকি তিন জনের ত্রিশ ছাড়ানো ইনিংসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো দুইশ রানের পুঁজি দাঁড় করায় দলটি।

১৫৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে পাকিস্তানকে রেকর্ড রান তাড়ার ভিত গড়ে দেন বাবর ও রিজওয়ান। সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুজনে গড়েন সবচেয়ে বেশি ছয়টি শতরানের জুটি। পেছনে ফেললেন পাঁচটি সেঞ্চুরি জুটি গড়া লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মাকে।

অধিনায়ক বাবর খেলেন ৭৯ রানের ইনিংস। রিজওয়ান করেন ৮৭। এই ইনিংসের পথে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে এক পঞ্জিকাবর্ষে দুই হাজার রানের অনন্য কীর্তি গড়েন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রিজওয়ান জেতেন ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরস্কার।

ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় উড়ন্ত সূচনা। কিং ও ব্রুকস পাওয়ার প্লেতে দলকে এনে দেন ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।

শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন কিং। মোহাম্মদ নওয়াজের ওপর বইয়ে দেন ঝড়। এই স্পিনারের প্রথম ওভারে মারেন টানা দুই চার। পরের ওভারে তিন বলে দুই চারের সঙ্গে হাঁকান এক ছক্কা।

দারুণ খেলতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে পাওয়ার প্লের শেষ বলে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ২১ বলে ২ ছক্কা ও ৭ চারে ৪৩ রান করেন কিং।

ব্রুকস চার বলের মধ্যে তিন ছক্কায় ওড়ান শাদাব খানকে। পরের ওভারেই শাহনওয়াজ দাহানির বলে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়ে শেষ হয় তার ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৪৯ রানের ইনিংস।

প্রথম ১০ ওভারে ৯৯ রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের গতি আরও বাড়ান নিকোলাস পুরান। ইফতিখার আহমেদকে দুই ছক্কায় ওড়ানোর পর ওয়াসিমকে মারেন আরেকটি। ৩১ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন তিনি।

১৮তম ওভারে ওয়াসিমের বলে এই কিপার-ব্যাটসম্যান থামেন ৬ ছক্কা ও ২ চারে ৬৪ রান করে। ব্রাভো অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে। 

রান তাড়ায় বাবর ও রিজওয়ান শুরুতেই তোলেন ঝড়। দ্বিতীয় ওভারে দুইজন মিলে রোমারিও শেফার্ডকে মারেন দুই চার ও এক ছক্কা। রিজওয়ান অভিষিক্ত গুডাকেশ মোটিকে চার মারার পর স্লগ সুইপে ওড়ান ছক্কায়।

তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ৬ ওভার শেষে পাকিস্তান তুলে ফেলে ৬০। ১০ ওভারে স্বাগতিকরা করে ৯৮ রান। এর মাঝে রিজওয়ান ৩৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। বাবরের ফিফটি আসে ৪০ বলে।

ফিফটির পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন বাবর। ওশেন টমাসকে টানা তিন বলে মারেন দুটি চার ও এক ছক্কা। পরে হেইডেন ওয়ালশকে মাথার ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেন বাউন্ডারিতে।

ওডিন স্মিথের স্লোয়ারে বাবর ধরা পড়েন লং-অফে। ২ ছক্কা ও ৯ চারে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ৭৯। এক ওভার পরই ডমিনিক ড্রেকসের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে যান রিজওয়ান। তার ৮৭ রানের ইনিংসটি গড়া ৩ ছক্কা ও ১০ চারে।

শেষ দিকে ফখর জামানকে হারালেও আসিফ আলি ৭ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ২১ রান করে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলার কথা ছিল পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিন্তু এদিনই দুই বোর্ড যৌথ বিবৃতি দিয়ে স্থগিত করে দেয় তা। আগামী বছরের জুনে হবে সিরিজটি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ২০৭/৩ (কিং ৪৩, ব্রুকস ৪৯, পুরান ৬৪, ব্রাভো ৩৪*, পাওয়েল ৬*; নওয়াজ ৩-০-৩৬-০, হাসনাইন ৪-০-৪৯-০, দাহানি ৪-০-২৩-১, ওয়াসিম ৪-০-৪৪-২, শাদাব ৪-০-৩৬-০, ইফতিখার ১-০-১৫-০)

পাকিস্তান: ১৮.৫ ওভারে ২০৮/৩ (রিজওয়ান ৮৭, বাবর ৭৯, ফখর ১২, আসিফ ২১*, ইফতিখার ১*; মোটি ৪-০-২৯-০, শেফার্ড ৩.৫-০-৫৩-১, ড্রেকস ৪-০-৩৭-১, স্মিথ ৩-০-৩৪-১, ওয়ালশ ২-০-৩০-০, টমাস ২-০-২৫-০)

ফল: ৭ উইকেটে জয়ী পাকিস্তান

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ তে জিতেছে পাকিস্তান

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান

ম্যান অব দা সিরিজ
: মোহাম্মদ রিজওয়ান