শপথে শামিল ক্রিকেট পরিবারও

শহীদ জুয়েল ও শহীদ মুশতাক একাদশের প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচ দিয়ে প্রতিবার বিজয় দিবস উদযাপন করে আসছে বিসিবি। নিয়মিত সেই আয়োজন এবার ভিন্নমাত্রা পেল শপথ অনুষ্ঠানের সৌজন্যে। দেশজুড়ে হওয়া শপথ অনুষ্ঠানে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে কণ্ঠ মেলালেন ক্রিকেটাঙ্গনের সদস্যরাও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2021, 01:14 PM
Updated : 16 Dec 2021, 01:30 PM

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় শপথ পাঠ করান বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশজুড়ে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শপথে শামিল হয় ক্রিকেট পরিবার।

শহীদ জুয়েল ও শহীদ মুশতাক একাদশের হয়ে খেলা সাবেক ক্রিকেটারদের পাশাপাশি মিরপুরে শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, বোর্ড পরিচালকদের অনেকে ও বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, শহীদ ক্রিকেটার আব্দুল হালিম খান জুয়েলের বড় বোন সুরাইয়া খানম, ৭১-এ ব্যাটে ‘জয় বাংলা’ স্টিকার লাগিয়ে ব্যাট করতে নামা সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেট দলের বেশ কজন, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটাররা, হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের কয়েকজন এবং ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট আরও অনেকে।

শপথ অনুষ্ঠানের আগে জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলান তারা সবাই এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, দেশকে ভালোবাসব ও দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব।”

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও শহীদ জুয়েলের বোন সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ম্যাচ সেরার ট্রফি নিচ্ছেন আতহার আলি খান

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তাতে ওপরের দিকে আছে ক্রিকেট। যদিও প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির ফারাক এখনও অনেক। তবু এই খেলা দেশকে এনে দিয়েছে গৌরবের অনেক মুহূর্ত। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের বড় পরিচয়ের জায়গাও ক্রিকেট।

বিজয় দিবসের প্রদর্শনী ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরেও যথারীতি শের-ই-বাংলায় ছিল উৎসবের আবহ। ম্যাচে শহীদ মুশতাক একাদশ ৪২ রানে হারায় শহীদ জুয়েল একাদশকে।

শহীদ মুশতাক একাদশের হয়ে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৫ বলে ৬০ রান করে ম্যাচ সেরা হন আতহার আলি খান। তার ইনিংসের সঙ্গে খালেদ মাসুদের ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ ও শাহরিয়ার হোসেনের ২৪ বলে ২৬ রানের ইনিংসে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫০ রান করে মুশতাক একাদশ।

জুয়েল একাদশ ২০ ওভার খেলে ৬ উইকেটে করে ১২৮ রান। হাবিবুল বাশার অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ২৯ রানে, মুশফিকুর রহমান বাবু করেন ২৯ বলে ২৭ রান। মুশতাক একাদশের তারেক আজিজ খান ও সানোয়ার হোসেন নেন দুটি করে উইকেট।

শহীদ জুয়েল ও শহীদ মুশতাক একাদশের প্রীতি ম্যাচের দুই দল

আব্দুল হালিম চৌধুরি জুয়েল ছিলেন স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। আজাদ বয়েজ ক্লাবে খেলতেন, দারুণ মারকুটে ব্যাটসম্যান ছিলেন। স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিং ওপেন করার। ১৯৭১ সালের ৩১ মে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যান ভারতে। ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন।

১৯ অগাস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন অপারেশনে তিনি আহত হন। পরে তাকে আনা হয় প্রখ্যাত সরকার আলতাফ মাহমুদের বাসায়। ২৯ অগাস্ট সেখানে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী জুয়েলকে ধরে নিয়ে আসে ক্যাম্পে। সহযোদ্ধাদের পরিচয় ও তথ্য জানার জন্য প্রচণ্ড অত্যাচার করা হয়, কেটে দেওয়া হয় আঙুল। তিনি কোনো তথ্য দেননি। পরে ৩১ অগাস্টের পর আর তাকে পাওয়া যায়নি।

মুশতাক ছিলেন ক্রিকেট সংগঠক। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। তার শেকড় বা পরিবারের কথা কেউ জানত না কিছুই। কিন্তু সংগঠক হিসেবে পরিচিতি ছিল অনেক। আজাদ বয়েজ ক্লাবের জন্য দিন-রাত একাকার করতেন তিনি। ক্লাবই ছিল তার সংসার। সেই সময়ের অনেক ক্রিকেটারের আশ্রয় ছিলেন তিনি, অনেককে দিয়েছিলেন সুযোগ। ২৫ মার্চের কালো রাতেই পাকিস্তানিরা হত্যা করে মুশতাককে।