অ্যাশেজ সিরিজে অ্যাডিলেইডে দিন-রাত্রির টেস্টের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার স্বস্তি নিয়েই শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপক্ষে ২ উইকেট হারিয়ে ২২১ রান করেছে স্বাগতিকরা।
পেস সহায়ক উইকেটে চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে ৯৫ রানে অপরাজিত আছেন লাবুশেন। যদিও জীবন পেয়েছেন তিনি দুইবার। এই ইনিংসের পথে টেস্টে পঞ্চম দ্রুততম দুই হাজার রান করার কীর্তি গড়েন তিনি। তার সঙ্গে ১৮ রান নিয়ে খেলছেন স্টিভেন স্মিথ।
এর আগে সবশেষ যখন অ্যাডিলেইডে খেলেছিলেন ওয়ার্নার, ক্যারিয়ার সেরা ৩৩৫ রান করে ছিলেন অপরাজিত। এবারও দারুণ কিছুর আভাস দেন; কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত তিন অংক ছুঁতে। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৫৯ টেস্ট ইনিংসে কেবল একবার নার্ভাস নাইটিসে আউট হয়েছিলেন তিনি। পরের দুই ইনিংসেই সেই সংখ্যাকে পরিণত করলেন তিনে।
এই ম্যাচ দিয়ে ২০১৮ সালে বল টেম্পারিং কাণ্ডের পর প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে টস করেন স্মিথ। কোভিড আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে আসায় মূল অধিনায়ক প্যাট কামিন্স আছেন কোয়ারেন্টিনে। তার জায়গায় স্বপ্নের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পান পেসার মাইকেল নিসার।
টেস্ট ক্রিকেটে হাজার উইকেট নেওয়া এই জুটি শুরুতেই চেপে ধরেন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে। নিখুঁত লাইন লেংথে ভোগাতে থাকেন স্বাগতিক ওপেনারদের।
প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার সুফল দ্রুতই পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। অষ্টম ওভারে ব্রডের বলে ফিরে যান মার্কাস হ্যারিস। যদিও ব্রডের চেয়ে এই উইকেটে কৃতিত্ব বেশি জস বাটলারের। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ গ্লাভসে জমান তিনি।
মাত্র ৪ রানে উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার হাল ধরেন ওয়ার্নার ও লাবুশেন। তাদেরকেও কোণঠাসা করে রাখেন ইংলিশ বোলাররা। অস্ট্রেলিয়া প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় চতুর্দশ ওভারে।
ওয়ার্নার নিজের প্রথম রান করেন ২০তম বলে। তাকে ফেরানোর চেষ্টায় প্রথম ঘণ্টায়ই ইংল্যান্ড নষ্ট করে দুইটি রিভিউ।
সাবধানী ব্যাটিংয়ে ওয়ার্নার ও লাবুশেন পার করে দেন প্রথম সেশন। ২৫ ওভারের এই সেশনে অস্ট্রেলিয়া তুলতে পারে কেবল ৪৫ রান। লাঞ্চ বিরতির পর ১৭১ বলে ফিফটি স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়ার রান।
জমে যাওয়া এই জুটি ভাঙার সুযোগ দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় পায় ইংল্যান্ড। বেন স্টোকসের শরীর তাক করা বাউন্সার একটু সরে পুল করেন ২১ রানে থাকা লাবুশেন। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে বল মুঠোয় জমাতে পারেননি বাটলার।
সময়ের সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে কিছুটা দ্রুত রান আসতে থাকে। ৪১তম ওভারে স্টোকসকে তিন বলের মধ্যে দুই চার মেরে ১০৮ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। ওই ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার রানরেট স্পর্শ করে দুই।
শেষ সেশনে ওয়ার্নার সেঞ্চুরির দিকে দ্রুত এগোতে থাকেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কের খুব কাছে গিয়ে থেমে যান তিনি। স্টোকসের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে কাভারে ব্রডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১১ চারে ৯৫ রান করে। ভাঙে লাবুশেনের সঙ্গে তার ১৭২ রানের জুটি।
এরপর দিনের প্রায় ২৫ ওভার কাটিয়ে দেন লাবুশেন ও স্মিথ। দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন দুইজন। একেবারে শেষ বেলায় আবারও জীবন পান লাবুশেন। অ্যান্ডারসনের বলে উইকেটের পেছনে ৯৫ রানে থাকা এই ব্যাটসম্যানের সহজ ক্যাচ ছাড়েন বাটলার। হতাশায় যেন ভেঙে পড়ে পুরো দল।
পরে আরও ১৯ বল খেলেন লাবুশেন। কিন্তু নিতে পারেননি একটি রানও। তাই সেঞ্চুরির জন্য তাকে এখন অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয় দিনের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮৯ ওভারে ২২১/২ (হ্যারিস ৩, ওয়ার্নার ৯৫, লাবুশেন ৯৫*, স্মিথ ১৮*; অ্যান্ডারসন ১৮-৯-২৯-০, ব্রড ১৬-২-৩৪-১, ওকস ১৫-৫-৩৬-০, রবিনসন ১৬-৭-৩৪-০, স্টোকস ১৩-১-৫০-ক, রুট ১১-১-৩৭-০)