চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে রোববার ২১৯ রানে গুটিয়ে যায় উত্তরাঞ্চল। ৩ উইকেট নিয়ে মধ্যাঞ্চলের সফলতম বোলার রবিউল হক।
বোলিংয়ে সাফল্যের পর ব্যাট হাতেও দিনটা দারুণভাবে শেষ করে মধ্যাঞ্চল। কোনো উইকেট না হারিয়ে তাদের রান ৬১।
মধ্যাঞ্চলের ইনিংসে চমক ওপেন করতে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। ওয়ানডের গতিতে খেলে তিনি ৬ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত আছেন ৫৪ বলে ৪৩ রান করে।
ইনিংস ওপেন করা নতুন নয় মিঠুনের জন্য। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এই প্রথম খেললেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। মূল ওপেনার আব্দুল মজিদ ছিটকে না গেলে হয়তো এই অভিজ্ঞতা হতো না তার।
শুক্রবার রাতে মধ্যাঞ্চলের সব ক্রিকেটারের কোভিড নমুনা নেয় বিসিবি। শনিবার একাদশ প্রস্তুত করার সময় তারা জানতে পারে, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ওপেনার মজিদের ফল এসেছে ‘পজিটিভ।’ পরে দলের পক্ষ থেকে ‘র্যাপিড টেস্ট' করানো হলে ফল আসে ‘নেগেটিভ।’ তবে ততক্ষণে আর তাকে খেলানোর উপায় ছিল না।
মিঠুন অবশ্য দারুণ ব্যাটিংয়ে বুঝতে দেননি, তিনি নিয়মিত ওপেনার নন। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এই ব্যাটসম্যান আস্থার সঙ্গে খেলে ভালো শুরু এনে দেন দলকে।
এর আগে উত্তরাঞ্চলকে কম রানে গুটিয়ে দেওয়ায় বড় ভূমিকা রাখেন রবিউল। ছোট ছোট সুইংয়ে এই পেসার ব্যাটসম্যানদের ভাবনায় রাখেন প্রায় পুরোটা সময়। উদ্বোধনী জুটির পর মার্শাল আইয়ুব ও তানবীর হায়দারের সম্ভাবনাময় আরেকটি জুটিও ভাঙেন তিনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই তরুণ তানজিদ হাসান ও পারভেজ হোসেনের ব্যাটে শুরুটা ভালো করে উত্তরাঞ্চল। শুরু থেকে শট খেলেন তানজিদ, আরেক প্রান্তে পারভেজ ছিলেন সাবধানী।
দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জুটি পঞ্চাশ ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকে সামনে। ৬২ রানে এই জুটি থামান রবিউল হক। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান তানজিদ। ৭ চারে তিনি ৩৯ বলে করেন ৩২।
তিনে নেমে রানের খাতা খুলতে পারেননি মাহিদুল ইসলাম। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির বলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। এরপর নাঈম ইসলামকে থিতু হতে দেননি রবিউল।
আরেক প্রান্তে ফিফটির পথে এগিয়ে যাওয়া পারভেজকে থামান মুকিদুল ইসলাম। ৮ চারে ৭২ বলে ৪৬ রান করেন পারভেজ।
ভালো শুরুর পর দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া উত্তরাঞ্চল প্রতিরোধ গড়ে মার্শাল ও তানবীরের ব্যাটে। দেখেশুনে খেলে দুই জনে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। তখন আবার বাধা হয়ে দাঁড়ান রবিউল। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার তানবীরকে এলবিডব্লিউ করে তিনি ভাঙেন ৪০ রানের জুটি ভাঙে।
থিতু হয়ে যাওয়া মার্শাল রান আউট হয়ে যান সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় আরিফুল হকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। উত্তরাঞ্চল অধিনায়ক চারটি চারে করেন ৩৫।
বেরিয়ে এসে হাসান মুরাদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে থামেন আরিফুল।
শুভগত হোম চৌধুরির অফ স্টাম্পের বাইরের বল ডিফেন্স করার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়েন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। পরের বলে প্রায় একইভাবে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শফিকুল ইসলাম।
উত্তরাঞ্চলের আট ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে গেলেও তাদের কেউই যেতে পারেনি পঞ্চাশ পর্যন্ত। ত্রিশের ঘর ছাড়াতে পারেন কেবল একজন।
নোমান চৌধুরির রান আউটে ২১৯ রানে গুটিয়ে যায় উত্তরাঞ্চলের প্রথম ইনিংস। ২১ রানে অপরাজিত থাকেন সানজামুল।
মধ্যাঞ্চল ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭ ওভার খেলে হারায়নি উইকেট। মিঠুনের সঙ্গে অপরাজিত থেকেই দিন শেষ করেন মিজানুর রহমান।
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৬৫.১ ওভারে ২১৯ (তানজিদ ৩২, পারভেজ ৪৬, মাহিদুল ০, নাঈম ১৩, মার্শাল ৩৫, তানবীর ২৫, আরিফুল ২৫, আমিনুল ২১, সানজামুল ২১ *, শফিকুল ০, নোমান ০; রবিউল ১৫.১-৪-৩৭-৩, মুকিদুল ১২-১-৪৪-১, শুভাগত ৬-০-২১-২, মোসাদ্দেক ১-০-৮-০, মৃত্যুঞ্জয় ১২-০-৫৯-১, সৌম্য ৭-০-১৮-০, মুরাদ ১২-৫-৩২-১)
মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৭ ওভারে ৬১/০ (মিজানুর ১৮ *, মিঠুন ৪৩ * ; শফিকুল ৭-১-২৬-০, নোমান ৪-০-১৫-০, আরিফুল ৪-০-১৪-০, সানজামুল ২-১-৬-০)