'বলা হয়েছিল ভারত দলে বড় সমস্যা আছে'

নতুন কোচের হাত ধরে নতুন পথচলা শুরু করেছে ভারত। রবি শাস্ত্রির অধ্যায় এখন অতীত। ভারত দলের সঙ্গে পেছনের সময়ের কথা বলতে গিয়ে যেন নতুন বিতর্কের জন্ম দিলেন তিনি। অনেক কিছুই স্পষ্ট করেননি। কারো দিকে সরাসরি আঙুলও তোলেননি। তবে সাবেক এই অলরাউন্ডার অভিযোগের সুরে বললেন, অনেকের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নাকি ২০১৭ সালে তাকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2021, 03:36 PM
Updated : 10 Dec 2021, 05:01 PM

তার দাবি, দায়িত্বের শুরুতে নাকি তাকে বলা হয়েছিল ভারত দলে অনেক বড় সমস্যা আছে।

ওই বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর তখনকার কোচ অনিল কুম্বলে সরে দাঁড়ালে তার স্থলাভিষিক্ত হন শাস্ত্রি। চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে শেষ হলো সেই অধ্যায়। তার জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়।

ভারতীয় দলের সঙ্গে শাস্ত্রি প্রথম যুক্ত হন টিম ডিরেক্টর হিসেবে, ২০১৪ সালের অগাস্টে। তার ওই দায়িত্বের সময়ে ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে খেলে ভারত। এছাড়াও ৮ মাস তারা ছিল টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে।

২০১৬ সালে শেষ হয় শাস্ত্রির চুক্তির মেয়াদ। তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই। শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে এই সাবেক অলরাউন্ডারের সাক্ষাৎকার। সেখানেই কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রাপ্য সম্মানটা না দিয়ে আচমকাই ওই সময় তাকে বিদায় জানানো হয়েছিল।

“ধারাভাষ্যকার হিসেবে আমার কর্মজীবনকে পাশে সরিয়ে, অন্য সব কিছু ছেড়ে দলে যোগ দিতে বলার পর দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, আমি হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমি আর দায়িত্বে নেই। আমি বীজ বপন করার পর ফল আসতে শুরু করেছিল এবং তখনই আকস্মিকভাবে আমি জানতে পারি যে, আমাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ আমাকে কারণটা জানায়নি। পুরো ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে সেটা যে কোনো কিছুর চেয়ে আমাকে বেশি আঘাত করেছিল।”

“দলে আমার যেসব অবদান ছিল, তার প্রতিদানে বিসিসিআই থেকে শুধুমাত্র একটি শব্দে (বিদায় জানানো হয়)। আমাকে জানানোর আরও ভালো উপায় ছিল। ‘ওহ দেখুন আমরা আপনাকে চাই না, আমরা আপনাকে পছন্দ করি না, আমরা অন্য কাউকে চাই’-বিষয়টা অনেকটা এমন ছিল। যাই হোক, এরপর আমি ফিরে গিয়েছিলাম সেই কাজে যা আমি সবচেয়ে ভালো পারি-সেটা হলো টেলিভিশনে।”

২০১৬ সালে শাস্ত্রি প্রধান কোচের পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই দফায় দায়িত্ব পান কুম্বলে। সাবেক এই স্পিনারের কোচিংয়ে ভারত অনেক সাফল‍্য পায়। তবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে যায়। অধিনায়ক বিরাট কোহলিসহ অনেক ক্রিকেটার কুম্বলের 'দল ব্যবস্থাপনা' নিয়ে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা বোর্ডকে জানিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

এর কিছু দিন পরেই পদত্যাগ করেন কুম্বলে। আর টিম ডিরেক্টরের পদ থেকে চাকরি হারানোর ৯ মাস পর কোচ হিসেবে নিয়োগ পান শাস্ত্রি। সেই সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার কোচ হওয়াটা ‘বিশেষ কিছু লোকদের' জন্য বিব্রতকর ছিল যারা তাকে এই ভূমিকায় দেখতে চাননি।

“আমাকে বলা হয়েছিল (দলের ভেতর) বেশ বড় সমস্যা আছে এবং আমি বলেছিলাম, ৯ মাসের মধ্যে কোনো সমস্যা কীভাবে হতে পারে? আমি যে দলটি রেখে গিয়েছিলাম, তা খুব ভালো অবস্থায় ছিল। ৯ মাসের মধ্যে কীভাবে কোনো কিছু এতটা ভুল পথে যেতে পারে?”

“অনেক বিতর্কের পর আমি দ্বিতীয় মেয়াদ যোগ দেই। আমার ফেরাটা আক্ষরিক অর্থেই তাদের জন্য চপেটাঘাত ছিল যারা আমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল। তারা অন্য কাউকে বেছে নিয়েছিল এবং ৯ মাস পর সেই লোকটির কাছে ফিরে এসেছিল যাকে তারাই ছুঁড়ে ফেলেছিল।”

সেই সময়ে কোচ বাছাইয়ের জন্য বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন তিন ভারতীয় গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি ও ভিভিএস লক্ষ্মণ। ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন তিনজনই। সৌরভ এখন ভারতীয় বোর্ডের প্রধান। জাতীয় একাডেমির দায়িত্ব নিয়েছেন লক্ষ্মণ।

শাস্ত্রির কোচিংয়ে ভারতের সবচেয়ে বড় সাফল্যটা পায় টেস্টে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০১৮-১৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার সফরে প্রথমবারের মতো দেশটিতে টেস্ট সিরিজ জয়। দুই বছর বাদে ২০২০-২১ মৌসুমে রেকর্ড গড়ে আবারও অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হারায় ভারত।

আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরে দুই বছরের চক্র শেষে চলতি বছর ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। যদিও তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় নিউ জিল্যান্ড।

এ বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের প্রথম সিরিজেও ইংল্যান্ডের মাটিতে ২-১ এ এগিয়ে ছিল ভারত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় শেষ টেস্টটি স্থগিত করা হয় যা হবে আগামী বছর।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে নিয়মিত সাফল্য পেলেও দুটি বৈশ্বিক আসরে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে শাস্ত্রির দলকে। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায়ের পর চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে তার দল ছিটকে যায় সুপার টুয়েলভ থেকে।