শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইনিংস ও ৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। বাবর আজমের দল ৩০০ রানে একমাত্র ইনিংস ঘোষণা করার পর স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ বেলায় গুটিয়ে যায় ২০৫ রানে।
পাকিস্তানের জয়ের নায়ক অফ স্পিনার সাজিদ। প্রথম ইনিংসে ৮টির পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার ৪ উইকেট। ম্যাচে তিনি ১২৮ রানে নেন ১২ উইকেট, বাংলাদেশের বিপক্ষে যা টেস্টে চতুর্থ সেরা বোলিং।
ওয়ানডের পর টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশড হলো বাংলাদেশ। বাড়ল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে পয়েন্টের জন্য অপেক্ষা।
শেষ ঘণ্টার খেলা শুরুর আগ পর্যন্ত এটা এড়ানোর সম্ভাবনা খুব ভালোভাবে বেঁচে ছিল। দ্রুততম ৪ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলের রেকর্ড গড়ে ক্রিজে ছিলেন সাকিব আল হাসান, সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪ উইকেট নিয়েও শেষ ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
অবাক করে এই দুই অলরাউন্ডারের জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন বাবর। এই ম্যাচের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮৯ ম্যাচ খেলে কখনও বোলিং করেননি তিনি। অফ স্পিনে এবার পাকিস্তান অধিনায়ক মিরাজকে ফিরিয়ে ভাঙেন পাকিস্তানের বাধা হয়ে থাকা জুটি।
বাবরের লেংথ বলে সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন মিরাজ। এলবিডব্লিউয়ের সফল রিভিউয়ে ভাঙে ১৩৯ বল স্থায়ী ৫১ রানের জুটি। ৭০ বলে ১৪ রান করে শেষ হয় মিরাজের প্রতিরোধ।
শেষ ভরসা হয়ে টিকে থাকা সাকিব ফিরে যান এর পরপরই। সাজিদের জোরের ওপর করা ডেলিভারির লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। ১৩০ বলে তিনি ৯ চারে করেন ৬৩ রান।
সাকিবকে ফিরিয়ে ম্যাচে দশম উইকেট পাওয়া সাজিদ পরে শূন্য রানে বিদায় করেন সৈয়দ খালেদ আহমেদকে। এরপর শেষ জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেন। তাদের ৩৪ বলের প্রতিরোধ ভাঙেন সাজিদ। তাইজুলকে এলবিডব্লিউ করে তিনি আনন্দে ভাসান সফরকারীদের।
শুরুর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় অবশ্য মনে হচ্ছিল ম্যাচ তত দূরে নেয়াও সম্ভব নয়। ফলোঅনে নেমে স্বাগতিকরা দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় স্রেফ ২৫ রানে। এই সিরিজে আগের তিন ইনিংসে ৪৯, ২৫ ও ৩১ রানে প্রথম চার উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
টপ অর্ডারের নিদারুণ ব্যর্থতার পর বাংলাদেশের হার মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। লিটন দাস ও সাকিবের সঙ্গে দুটি চমৎকার জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে সেটা দুই সেশন পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখেছিলেন মুশফিকুর রহিম। চা-বিরতির আগে শেষ ওভারে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে ফিরেন তিনি।
৯ ওভারের মধ্যে প্রথম চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে মুশফিক ও লিটনের ব্যাটে। দেখেশুনে খেলে এগিয়ে যেতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। উইকেটেও তেমন কিছু ছিল না, বোলাররা খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছিল না তাদের।
সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ভাঙে তাদের ১৫০ বল স্থায়ী ৭৩ রানের জুটি। সাজিদের শর্ট বল লেগে যে কোনো জায়গায় পাঠাতে পারতেন লিটন। কিন্তু তিনি ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে, দুইবারের চেষ্টায় বল মুঠোয় জমান ফাওয়াদ আলম।
৭ চারে ৮১ বলে ৪৫ রান করেন লিটন।
অসংখ্য বিপদে ত্রাতা মুশফিক ও সাকিবের জুটিতে আর কোনো ক্ষতি ছাড়াই দ্বিতীয় সেশন কাটিয়ে দেওয়ার আশা জাগায় বাংলাদেশ। ক্রিজে গিয়েই হাসানকে দারুণ তিন কাভার ড্রাইভে টানা তিন চার মেরে চাপ সরিয়ে নেন সাকিব। এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে।
চা-বিরতির আগে শেষ ওভারে দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে ভাঙে ১১৪ বল স্থায়ী ৪৯ রানের জুটি। নুমান আলির বলে ক্রিজ ছেড়ে একটু বেরিয়ে মিড উইকেটে আলতো করে ঠেলেই রান নিতে ছোটেন সাকিব। সাড়া দেন মুশফিক। ফিল্ডার আব্দুল্লাহ শফিক দ্রুত বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান। কিপার মোহাম্মদ রিজওয়ান উড়িয়ে দেন বেলস। মুশফিক শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিয়ে ক্রিজে পৌঁছেও যান। তবে গড়বড় হয় অন্য জায়গায়। ক্রিজে ঢোকার আগ থেকেই উঁচু হয়ে ছিল তার ব্যাট!
১৩৬ বলে তিন চারে ৪৮ রান করেন মুশফিক। তার বিদায়ের সঙ্গেই শুরু হয় চা-বিরতি। এরপর মিরাজকে নিয়ে ম্যাচ শেষ ঘণ্টায় নেন সাকিব। আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ। হার দিয়েই শেষ হয় দলের ব্যাটিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন জাগানো এক টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩০০/৪ (ডি.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৮৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস (ফলো-অনের পর): ৮৪.৪ ওভারে ওভারে ২০৫ (সাদমান ২, মাহমুদুল ৬, শান্ত ৬, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৪৮, লিটন ৪৫, সাকিব ৬৩, মিরাজ ১৪, তাইজুল ৫, খালেদ ০, ইবাদত ০*; আফ্রিদি ১৫-৫-৩১-২, হাসান ১১-৩-৩৭-২, নুমান ২০-৫-৪১-০, ফাহিম ৪-৪-০-০, সাজিদ ৩২.৪-৮-৮৬-৪, বাবর ২-১-১-১)।
ফল: পাকিস্তান ইনিংস ও ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাজিদ খান
ম্যান অব দা সিরিজ: আবিদ আলি