বৃষ্টির সৌজন্যে ড্র করার আশাও এখন কাতরাচ্ছে সেই স্তুপে চাপা পড়ে। আশার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। চার দিন মিলিয়ে যে ম্যাচে ওভারের হিসেবে খেলা হয়েছে দেড় দিনেরও কম, সেই ম্যাচেও হারার ক্ষেত্র তৈরি করার কঠিন কাজটি করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। মূল কারণ, ব্যাটিং ব্যর্থতা।
ব্যাটিং ব্যর্থতা অবশ্য বাংলাদেশের নিয়মিত অনুসঙ্গ। তবে মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ যে ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখাল, এক কথায় সেটিকে বলা যায় অবিশ্বাস্য।
বাজে শট খেলা, উইকেট উপহার দেওয়া, এসব কিছুই নতুন নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কিন্তু একের পর এক ব্যাটসম্যান উইকেটে গিয়ে ছটফট করা, বারবার আগ্রাসী শট চেষ্টা করা, অনেকবার অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েও আবার ঝুঁকি নেওয়া, সবকিছুই ছিল চমকে যাওয়ার মতো।
ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে ছয় উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার সাজিদ খান এক ইনিংসেই পেয়ে গেলেন ৬ উইকেট। তার ভালো বোলিং তো ছিলই, কিন্তু তাতে বড় অবদান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উপহারও।
“সবাই আগ্রাসী থাকার কারণ এটাই ছিল যে, উইকেট সহজ ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। রান করাটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে যে যত বেশি রক্ষণাত্মক মানসিকতায় থাকবে, আউট হওয়ার শঙ্কাও তত বেশি থাকবে। এজন্যই আমার মনে হয়, ব্যাটসম্যান যে জায়গায় শক্তিশালী, সেই শট খেলার চেষ্টা করেছে।”
“দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবায়ন ওভাবে হয়নি। কিন্তু আমার মনে হয়, যে উইকেট ছিল ও যেরকম বলা হচ্ছিল, রক্ষণাত্মক থাকলে সমস্যা আরও বেশি হতো। কারণ রানটাও গুরুত্বপূর্ণ।”
উইকেট একটু কঠিন হলে একটু ইতিবাচক থাকা, কিছু শট খেলা, ‘ইন্টেন্ট’ বা অভিপ্রায় দেখানো, এসব যথেষ্টই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি তো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, ম্যাচ সচেতনতার ছাপ রাখা, শট খেলার উপযুক্ত বল বেছে নেওয়া। শান্ত অবশ্য অতি আগ্রাসনের কথা মানতে নারাজ।
“ব্যাটিংয়ে সুনির্দিষ্ট আলাদা কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যার যেটা সহজাত খেলা, সেটা খেলারই পরিকল্পনা ছিল।”
“অনেক বেশি আগ্রাসী যে সবাই খেলেছে, তা কিন্তু নয়। যে শট যে পারে, সেটি করতে গিয়েই বাস্তবায়ন ঠিকঠাক হয়নি। এমন নয় যে সবাই অনেক বেশি আগ্রাসী ছিল বা ভিন্ন ধরনের শট খেলেছে।”
শান্ত জানালেন, আগ্রাসী শটের পথ বেছে নেওয়ার একটা কারণ, ছাতার মতো ঘিরে থাকা ক্লোজ-ইন ফিল্ডিং। আলোর স্বল্পতার কারণে এক ওভারের পর আর পেসারদের ব্যবহার করতে পারেনি পাকিস্তান। তবে আক্রমণ করা থেকে তারা পিছপা হয়নি। দুই স্পিনার নুমান আলি ও সাজিদ খান দুই প্রান্ত থেকে টানা বোলিং করে যান সিলি মিড অন, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, সিলি পয়েন্ট স্লিপ, লেগ স্লিপে ফিল্ডার নিয়ে।
এই অবস্থায় নিজের ডিফেন্স খুব ভালো না হলে উইকেট আঁকড়ে রাখা কঠিন। আক্রমণই তখন টিকে থাকার পথ!
শান্ত অবশ্য ডিফেন্সের দুর্বলতার প্রশ্ন উড়িয়ে দিলেন। কৌশল হিসেবেই আগ্রাসনের পথ বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তার।
দল যখন বিপদে, মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যান দৃষ্টিকটুভাবে স্লগ সুইপ করার চেষ্টায়। একইভাবে আউট হন মেহেদী হাসান মিরাজও। আরেক অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান, শান্ত নিজেও বারবার সুইপ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।
শট যতই বিপজ্জনক হোক, উইকেট বিবেচনায় তা উপযুক্ত ছিল বলেই মনে করেন শান্ত।
“যে উইকেটে টার্ন করে, সেখানে এলবিডব্লিউ হওয়ার চান্স খুবই কম। টার্নিং উইকেটে সবাই সুইপের ওপর বেশি আস্থা রাখে। এজন্যই সুইপ খেলার পরিকল্পনা করেছে সবাই।”
সব মিলিয়ে নিজেদের ব্যাটিংয়ের ধরন কিংবা কৌশলে কোনো ভুল দেখছেন না শান্ত। তার মতে, স্রেফ দিনটি ছিল খারাপ।
“আজকের দিনটি খারাপ করেছি মানে এই নয় যে আমাদের সামর্থ্য এটুকু। আমরা এর চেয়েও ভালো ব্যাটিং ও বড় বড় রান করে এসেছি।”
“বাস্তবায়ন একদিন হবে, আরেকদিন হবে না। যত বেশি হবে, সাফল্যের পরিমাণ তত বেশি থাকবে। আজকে হয়নি, পরের ইনিংসে সুযোগ এলে হয়তো হবে। তবে ব্যাপারটি এমন নয় যে আমরা পারি না বা এর আগে করিনি। আজকে হয়নি।”