আইসিসির নভেম্বরের সেরার লড়াইয়ে বাংলাদেশের নাহিদা

লম্বা বিরতির পর বাংলাদেশ নারী দলের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার লড়াইয়ে অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দেন নাহিদা আক্তার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই সিরিজের পর বিশ্বকাপ বাছাইয়েও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ‘আইসিসি প্লেয়ার অব দা মান্থ’-এর নভেম্বর মাসের সেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 11:18 AM
Updated : 7 Dec 2021, 01:26 PM

তিন জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার সঙ্গে আছেন পাকিস্তানের আনাম আমিন ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেইলি ম্যাথিউস।

গত মাসের পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেরার লড়াইয়ে থাকাদের নাম প্রকাশ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা আইসিসি। বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে মাস সেরার লড়াইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন নাহিদা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন নাহিদা। মাত্র ৪.৮১ গড়ে নেন ১১ উইকেট, যার মধ্যে রয়েছে তৃতীয় ওয়ানডেতে ২১ রানে পাঁচ উইকেট। ওই ম্যাচে তার স্পিনে ৭২ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। ৩-০ তে সিরিজটি জিতে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা।

দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা নাহিদা ধরে রাখেন বিশ্বকাপ বাছাইয়েও। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় নিগার সুলতানার দল। বল হাতে ২৭ রানে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে ২০১ রানে বেঁধে রাখতে ভূমিকা রাখেন নাহিদা। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের হেরে যাওয়া ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। ৭ ওভার বল করে ১৭ রান দিয়ে নেন এক উইকেট।

আনাম গত মাসে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজে বল হাতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। তিন ম্যাচে ১১.২২ গড়ে নেন ৯ উইকেট, যার মধ্যে রয়েছে প্রথম ম্যাচে পাঁচ উইকেট। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্সে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নেন ১ উইকেট। পরের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন ম্যাচ জয়ী পারফরম্যান্স; ৯ রান দিয়ে শিকার করেন তিনটি উইকেট।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন অলরাউন্ডার হেইলি। একটি ফিফটি সহ ১৩২ রানের পাশাপাশি বল হাতে তুলে নেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ম্যাচে ২৬ রান করার পাশাপাশি চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ২০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।

ছেলেদের নভেম্বর মাসের সেরার লড়াইয়ে আছেন পাকিস্তানের ওপেনার আবিদ আলি, নিউ জিল্যান্ড পেসার টিম সাউদি ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার।

২০১৯ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকেই দারুণ খেলছেন আবিদ। গড়টাও দারুণ, ৪৯.১৬। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে চট্রগ্রামে প্রথম ইনিংসে করেন ১৩৩ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও শতরানের সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট হন ৯১ রানে। উভয় ইনিংসেই আব্দুল্লাহ শফিকের সঙ্গে গড়েন সেঞ্চুরি জুটি। তাদের জুটিতে ভর করে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতে যায় পাকিস্তান।

গত মাসে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট, দুই সংস্করণেই দারুণ ছন্দে ছিলেন সাউদি। বৈশ্বিক আসরে নভেম্বরে পাঁচ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে দলকে ফাইনালে তোলার পথে রাখেন বড় অবদান। এরপর ভারতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে অধিনায়ক হিসেবে খেলে নেন ৪ উইকেট; এর মধ্যে দ্বিতীয় ম্যাচে নেন ১৬ রানে তিনটি। তৃতীয় ম্যাচে ছিলেন বিশ্রামে।

টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে কানপুরে ড্র হওয়া ম্যাচে বল হাতে দুই ইনিংসেই দারুণ করেন সাউদি। প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট তুলে নেন ৭৫ রানের বিনিময়ে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ওয়ার্নারের। সুপার টুয়েলভে নিজেদের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে খেলেন মাত্র ৫৬ বলে অপরাজিত ৮৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। ওই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হন তিনি।

সেমি-ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩০ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলার পর ফাইনালে ৩৮ বলে করেন ৫৩ রান। ৭ ম্যাচে ৪৮.১৬ গড় ও ১৪৬.৭০ স্ট্রাইক রেটে ২৮৯ রান করে ‘ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট’ পুরস্কার জেতেন ৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

এই বছর থেকেই আইসিসি মাস সেরা ক্রিকেটারের স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করেছে। আইসিসির ভোটিং একাডেমি ও ক্রিকেট সমর্থকদের যৌথ ভোটে নির্বাচন করা হয় মাসের সেরা দুই ক্রিকেটার। ভোটিং একাডেমিতে আছেন জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক, সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকাররা। তারা ভোট দেন ই-মেইলে, আইসিসির নিবন্ধিত সমর্থকদের ভোট দিতে হয় আইসিসির ওয়েবসাইটে।

সেরার রায়ে ভোটিং একাডেমির ভোট বিবেচনায় নেওয়া হয় শতকরা ৯০ ভাগ, সমর্থকদের ভোট বাকি ১০ ভাগ।