কিউইদের বিপক্ষে বড় জয়ের দুয়ারে ভারত

দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষেই অনেকটা নির্ধারিত হয়ে যায় মুম্বাই টেস্টের ভাগ্য। নিউ জিল্যান্ডকে পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাচের লাগাম হাতে নিয়েছে ভারত। শেষ দুই দিনে অবিশ্বাস্য কোনো নাটকীয়তাই কেবল পারে স্বাগতিকদের জয় আটকাতে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2021, 01:49 PM
Updated : 5 Dec 2021, 02:20 PM

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোববার ৭ উইকেটে ২৭৬ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। প্রথম ইনিংসে স্রেফ ৬২ রানে গুটিয়ে যাওয়া নিউ জিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৪০ রানের!

টেস্টে কোনো দলের বিপক্ষে এটা ভারতের দেওয়া তৃতীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্য। ২০০৯ সালে ওয়েলিংটনে কিউইদেরই ৬১৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল তারা। ২০১৭ সালে গলে শ্রীলঙ্কাকে দিয়েছিল ৫৫০ রানের লক্ষ্য।

৬১৭ রানের লক্ষ্যে সেবার ম্যাচ ড্র করতে পেরেছিল নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু এই দফায় তাদের অবস্থান খুবই নাজুক। তৃতীয় দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪০ রান। এখনও ৪০০ রানে পিছিয়ে তারা। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দুই দিন কাটিয়ে দেওয়াও তাদের পক্ষে অসম্ভবই বলা যায়।

বিনা উইকেটে ৬৯ রান নিয়ে দিন শুরু করে ভারত। স্পিন সহায়ক উইকেটে আবারও আলো ছড়ান প্রথম ইনিংসে ‘পারফেক্ট টেন’ নেওয়া এজাজ প্যাটেল। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে ফিরিয়ে ১০৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বাঁহাতি স্পিনার। ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬২ রান করা এই ওপেনার ধরা পড়েন লং-অফে।

আগের দিনের আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান চেতেশ্বর পুজারাও এরপর যেতে পারেননি বেশিদূর। প্রথম ইনিংসে শূন্য রান করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান এবার করেন ৬ চার ও এক ছক্কায় ৪৭ রান। তিনিও বাঁহাতি স্পিনার এজাজের শিকার, ক্যাচ দেন স্লিপে।

চোট কাটিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা শুবমান গিল ও বিরাট কোহলি কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন। বাড়তে থাকে দলের রান। ৪৭ রান করা গিলকে ফিরিয়ে টেস্টে নিজের প্রথম উইকেট নেন রাচিন রবীন্দ্র। ভাঙে ৮২ রানের জুটি। নিজের পরের ওভারে বাঁহাতি এই স্পিনার বোল্ড করে দেন ভারত অধিনায়ককে।

শ্রেয়াস আইয়ার স্টাম্পড হয়ে যান এজাজের বলে। ঋদ্ধিমান সাহাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন রবীন্দ্র। সতীর্থদের আসা যাওয়ার মাঝে ঝড় তোলেন আকসার প্যাটেল। ২৬ বলে ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৪১ রান করে থাকেন তিনি অপরাজিত।

ফিরতি ক্যাচ নিয়ে জয়ন্ত যাদবকে সাজঘরে পাঠিয়ে এজাজ ধরেন ম্যাচে তার চতুর্দশ শিকার। ভারতের বিপক্ষে এক টেস্টে যা সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামের, ১৩ উইকেট।

এরপরই ভারতের ইনিংস ঘোষণা। রান পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিউ জিল্যান্ড শুরুতেই খায় ধাক্কা। চতুর্থ ওভারেই টম ল্যাথামকে এলবিডব্লিউ করে দেন অশ্বিন। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি সফরকারি ওপেনার।

নিউ জিল্যান্ড রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হলেও সফল হয় ভারত, ফেরায় উইল ইয়াংকে। পঞ্চদশ ওভারে এই ওপেনারের ক্যাচের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন কোহলি। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাড থেকে আসা বল মুঠোয় জমান শর্ট লেগ ফিল্ডার।

আরও একবার ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়ে দলকে আরও বিপদে ফেলেন রস টেইলর। দুই টেস্টের এই সিরিজে ৪ ইনিংসে কেবল একবার দুই অঙ্কে যেতে পেরেছেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান, তাও সেটা কেবল ১১।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন ড্যারিল মিচেল ও হেনরি নিকোলস। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৭৬ বলে ফিফটি তুলে নেন দলে ফেরা মিচেল। তবে আকসারকে উইকেট ছেড়ে বড় শট খেলার চেষ্টায় ধরা পড়েন ডিপ কাভারে। শেষ হয় তার ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬০ রানের ইনিংস। ভাঙে ৭৩ রানের জুটি।

এক ওভার পরই রান আউটে কাটা পড়েন টম ব্লান্ডেল। শেষ দিকে দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি নিকোলস ও রবীন্দ্র। তবে আশার আলো খুব একটা নেই।

৩৬ রান নিয়ে খেলছেন নিকোলস। প্রথম টেস্টে দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে দলকে হার থেকে বাঁচানো রবীন্দ্র ২ রান নিয়ে আছেন অপরাজিত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৩২৫

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬২

ভারত ২য় ইনিংস: (আগের দিন ৬৯/০) ৭০ ওভারে ২৭৬/৭ ডিক্লে: (মায়াঙ্ক ৬২, পুজারা ৪৭, শুবমান ৪৭, কোহলি ৩৬, শ্রেয়াস ১৪, ঋদ্ধিমান ১৩, আকসার ৪১*, জয়ন্ত ৬; সাউদি ১৩-১-৩১-০, এজাজ ২৬-৩-১০৬-৪, জেমিসন ৮-২-১৫-০, সমারভিল ১০-০-৫৯-০, রবীন্দ্র ১৩-২-৫৬-৩)

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫৪০) ৪৫ ওভার ১৪০/৫ (ল্যাথাম ৬, ইয়াং ২০, মিচেল ৬০, টেইলর ৬, নিকোলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ০, রবীন্দ্র ২*; সিরাজ ৫-২-১৩-০, অশ্বিন ১৭-৭-২৭-৩, আকসার ১০-২-৪২-১, জয়ন্ত ৮-২-৩০-০, উমেশ ৫-১-১৯-০)