গুমোট দিনে তাইজুলের ঝলকের পর বাবরের ফিফটি

খেলা শুরুর একটু আগে থেকেই আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। প্রথম সেশনেই জ্বলে উঠল ফ্লাড লাইট। রোদ-মেঘের সেই লুকোচুরি চলল দিনজুড়েই। বাংলাদেশের পারফরম্যান্সেও তেমনই আলো-আঁধারের খেলা। দুই সেশনের চিত্র দুইরকম। শেষ সেশনে খেলাই হলো না আলোকস্বল্পতায়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2021, 11:47 AM
Updated : 4 Dec 2021, 11:47 AM

মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে পাকিস্তানের রান ২ উইকেটে ১৬১। মেঘলা দিনে আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ হয় ৩৩ ওভার আগেই।

দিনের প্রথম সেশনের দুই ঘণ্টা ছিল দুইরকম। পাকিস্তানের ভালো শুরুর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তবে বাবর আজম ও আজহার আলির দৃঢ়তায় দ্বিতীয় সেশনে পড়েনি একটি উইকেটও। দিনশেষেও তাই এগিয়ে পাকিস্তানই।

সফরের তিন টি-টোয়েন্টি ও প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর অবশেষে রানের দেখা পেলেন বাবর আজম। পাকিস্তান অধিনায়ক অপরাজিত ৬০ রানে। আজহারের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তার অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৯১।

এই জুটির আগ পর্যন্ত ম্যাচে দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশ। সেটি মূলত তাইজুল ইসলামের সৌজন্যে। প্রথম সেশনে দুর্দান্ত বোলিং করেন আগের টেস্টে ইনিংসে ৭ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাচের প্রথম সকালেই উইকেট থেকে আদায় করে নেন টার্ন ও বাউন্স। খুব বড় হুমকি হয়ে উঠতে না পারলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ধরে রাখেন চাপ। তবে বাবর ও আজহার পরে সরিয়ে দেন চাপ।

পাকিস্তানের শুরুটাও ছিল ভালো। যদিও টস জিতে যখন তারা ব্যাটিংয়ে নামে, ভালো শুরুর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনেও। খেলা শুরুর সময় আকাশ খানিকটা মেঘলা। ম্যাচের প্রথম সকালের আর্দ্রতাও খানিকটা ছিল উইকেটে। পেস বোলারদের সহায়তা যা থাকার, ওই সময়টাতেই থাকার কথা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের দুই পেসার ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ তা কাজে লাগাতে পারেননি একটুও।

আবু জায়েদ চৌধুরির জায়গায় সুযোগ পেয়ে ২১ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা খালেদ প্রভাব রাখতে পারেননি একটুও। আগের টেস্টে ভালো করলেও ইবাদত হোসেন চৌধুরি ধরে রাখতে পারেননি ধারাবাহিকতা। দুজনের আলগা বোলিংয়ে পাকিস্তানি ওপেনাররা থিতু হয়ে যান অনায়াসেই।

ম্যাচের প্রথম ওভারে বাউন্ডারিতে শুরু করেন আবিদ আলি। ৮টি চার ও ১ ছক্কা আসে প্রথম ঘণ্টাতেই! চট্টগ্রামে দুই ইনিংসেই শতরানের জুটি গড়া আবিদ ও আব্দুল্লাহ শফিক এবারও পেরিয়ে যান ফিফটি।

প্রথম ১৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে পাকিস্তান তোলে ৫৪ রান। পরের ১৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে রান আসে কেবল ২৩। সেই ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কৃতিত্ব তাইজুলের।

দারুণ এক ডেলিভারিতে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তাইজুল। লেংথ থেকে বলটি টার্ন না করে উইথ দা আর্ম ভেতরে ঢোকে খানিকটা। শফিকের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। অভিষেকে চট্টগ্রামে জোড়া ফিফটি করা ব্যাটসম্যান এবার ফেরেন ২৫ রানে।

পরে আরেক ওপেনারকেও ফেরান তাইজুল। ইনিংসজুড়ে কাট শট খুব ভালো খেললেও একটিতে টাইমিং করতে পারেননি আবিদ। লেংথ থেকে একটু স্কিড করা ডেলিভারি কাট করে স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি।

আগের টেস্টে ১৩৩ ও ৯১ রানের দুটি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানকে এবার ৩৯ রানে থামাতে পেরে দারুণ স্বস্তিই পাওয়ার কথা বাংলাদেশের।

প্রথম সেশনে উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা আরও কয়েক দফায় জাগায় বাংলাদেশ। সেই পালায় দুটি রিভিউও হারাতে হয়। তবে উইকেট আর পড়েনি।

সেই ধারা চলতে থাকে পরের সেশনেও। খালেদ আর বোলিং পাননি। ইবাদত লাঞ্চের পরও ভালো করতে পারেননি। তাইজুল-সাকিব চেষ্টা করে যান, কিন্তু বাবর-আজহারের জুটিতে ফাটল ধরাতে পারেননি। পরে মেহেদী হাসান মিরাজ আক্রমণে এসেও খুব একটা ভোগাতে পারেননি দুই ব্যাটসম্যানকে।

বলার মতো একটা সুযোগই বাংলাদেশ পেয়েছিল। সাকিবের বলে উড়িয়ে মারেন বাবর, লং অফে অনেকট দৌড়েও কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

বাবর ১৯তম টেস্ট ফিফটি পেরিয়ে অপরাজিত থাকেন। একপ্রান্ত আগলে রেখে আজহার ১১২ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৬১/২ (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৩৮*, বাবর ৬০*; ইবাদত ৯-১-২৮-০, খালেদ ৪-১-১৯-০, সাকিব ১৫-৬-৩৩-০, তাইজুল ১৭-৫-৪৯-২, মিরাজ ১২-২-৩১-০)।