বাংলাদেশের ‘৯৯’ মাহমুদুল

জীবন কত দ্রুতই না বদলে যায়! মাস দেড়েক আগেও যদি বলা হতো, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে টেস্ট খেলবেন মাহমুদুল হাসান জয়, তিনি নিজেও হয়তো হেসে খুন হতেন। সেই মাহমুদুল হাসছেন এখনও। সেটি স্বপ্ন পূরণ হওয়ার হাসি। টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার উচ্ছ্বাস। এই শরৎ থেকে হেমন্ত পর্যন্ত প্রকৃতির যে বদল, তার চেয়েও বেশি বদলে গেল তার জগৎ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2021, 05:02 AM
Updated : 4 Dec 2021, 05:02 AM

তার অভিষেকের গুঞ্জন ছিল চট্টগ্রাম টেস্টেই। সেবার না হলেও হয়ে গেল এবার। মিরপুর টেস্টে মাহমুদুলের মাথায় বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান। চাঁদপুরের সন্তান এখন দেশের ৯৯তম টেস্ট ক্রিকেটার।

এবারের জাতীয় লিগের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাহমুদুলের অভিজ্ঞতা ছিল ৩ ম্যাচের। তাতে ফিফটি ছিল একটি, ৩০-৪০ ছিল গোটা তিনেক। প্রতিভার ছাপ কিছুটা রেখেছিলেন ওই ম্যাচগুলোয়। তবে তা টেস্ট খেলার জন্য পর্যাপ্ত ছিল না নিশ্চিতভাবেই।

এবারের জাতীয় লিগ শুরু হলো গত অক্টোবরের শেষ দিকে। প্রথম ম্যাচেই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বরিশালের বিপক্ষে করলেন দুই ইনিংসে শূন্য। তখন কী আর ভাবা যায়, কদিন পরই তিনি টেস্ট খেলবেন!

চিত্র বদলের শুরু পরের ম্যাচ থেকেই। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে। পরের ম্যাচেই সেঞ্চুরি সংখ্যা হয়ে গেল দুটি, এবার শতক বরিশালের বিপক্ষে। এরপর রাজশাহীর বিপক্ষে ভালো না করলেও চতুর্থ ম্যাচে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে খেললেন ৮৩ রানের ইনিংস। ওই ম্যাচের মাঝপথেই পেলেন টেস্ট দলের ডাক পাওয়ার খবর।

জাতীয় লিগের তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আদর্শ নয় কখনোই। তবে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের দীনতা, পাইপ লাইনের দুর্দশা আর পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে তার ঠাঁই হয়ে যায় টেস্ট দলে।

অবশ্য শুধু এবারের জাতীয় লিগ দেখেই তাকে নেওয়া হয়নি। গত বছর দেড়েক ধরেই তিনি ছিলেন প্রক্রিয়ার মধ্যে।

গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের জয়ে উপহার দিয়েছিলেন ধ্রুপদি এক সেঞ্চুরি। টুর্নামেন্টে দলের সর্বোচ্চ স্কোরারও ছিলেন তিনিই।

যুব বিশ্বকাপের পর নতুন দিগন্তে ডানা মেলতে থাকেন তিনি। কোভিড বিরতির পর প্রেসিডেন্ট’স কাপে তিন ম্যাচে ফিফটি করেন একটি। তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে এইচপি স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া। সেখানে ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। তাতে আরেকটু পোক্ত হয় তার টেকনিক, বাড়ে শটের রেঞ্জ।

ব্যাটিংয়ে উন্নতির সেই ছাপ রাখেন তিনি এ বছর বাংলাদেশ ইমার্জিং দলের হয়ে আয়ার‌ল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজ ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে। 

আইরিশদের বিপক্ষে গত মার্চে একদিনের ম্যাচের সিরিজে ৭১.২৫ গড়ে ২৮৫ রান করে সিরিজের সবচেয়ে বেশি রান তার। ৫ ইনিংসে ছিল একটি সেঞ্চুরি, দুটি ফিফটি। এরপর প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। ওল্ডডিওএইচএসের হয়ে ৩৯২ রান করেন ৪৩.৫৫ গড় ও ১২১.৩৬ স্ট্রাইক রেটে।

রঙিনে রাঙিয়ে এরপর সাদা পোশাকেও উজ্জ্বল তিনি জাতীয় লিগে। সেই ধারাবাহিকতায় টেস্ট স্কোয়াডে এবং এক টেস্ট ড্রেসিং রুমে থেকে ঢুকে গেলেন একাদশেও।

টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার পরই মাহমুদুল বলেছিলেন তার রোমাঞ্চের কথা। অভিষেকের পর সেই রোমাঞ্চ এখন আকাশ ছোঁয়ার কথা। এবার অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখার পালা।