বাংলাদেশে এসে অন্তত দুই সংস্করণে সিরিজ খেলে সব ম্যাচ জয়ী সবশেষ দল পাকিস্তান। ২০১১ সালে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের সঙ্গে জিতেছিল তারা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। পাশাপাশি জিতেছিল একমাত্র টি-টোয়েন্টিও। এরপর থেকে দেশের মাটিতে কোনো দলের বিপক্ষে অন্তত দুই সংস্করণে সিরিজ খেলে সব ম্যাচে হারেনি বাংলাদেশ।
সেই ধারা ধরে রাখার শেষ সুযোগ মিরপুর টেস্ট । শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হবে সিরিজের শেষ টেস্ট।
বাংলাদেশ দল তো অবশ্যই চাইবে জিততে। তবে জয় কিংবা ড্রয়ের পথও সহজ নয়। ৮ উইকেটে হারা চট্টগ্রাম টেস্টে পরিষ্কারভাব ফুটে উঠেছে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ঘাটতি। প্রশ্ন উঠেছে সামর্থ্য নিয়ে।
পিঠেপিঠি ম্যাচ। এতো কম সময়ে টেকনিকের ত্রুটি শুধরে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। মিরপুরে বাংলাদেশের নেটে অবশ্য ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে এ নিয়ে বেশ কাজ করলেন রাসেল ডমিঙ্গো ও অ্যাশওয়েল প্রিন্স। ম্যাচে এর কতটা প্রভাব পড়বে, বলা কঠিন। নেটে যে বোলাররা ছিলেন তাদের চেয়ে স্কিলে অনেক এগিয়ে থাকা বোলারদেরই মাঠে সামলাতে হবে সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্তদের।
কাজটা যে খুব নিবিড়ভাবে করতে পেরেছেন কোচরা, তাও নয়। ২০ জনের বেশ বড় একটা স্কোয়াড সামলাতে হচ্ছে তাদের। কনকাশন বদলি ও নিউ জিল্যান্ড সফর মাথায় রেখে মিরপুর টেস্টের জন্য বাংলাদেশের এত বড় স্কোয়াড। মিরপুর টেস্ট শেষ হওয়ার পরদিনই নিউ জিল্যান্ড রওনা হবেন মুমিনুলরা। কোভিড প্রটোকলের জন্য বিকল্প ক্রিকেটারদেরও রাখতে হচ্ছে দলের সঙ্গে। একই সঙ্গে করাতে হচ্ছে অনুশীলন। টেস্টের প্রস্তুতির জন্য যা আদর্শ নয় মোটেও।
তবে আগের ম্যাচের চেয়ে এবার মাঠে নামার আগেই কিছু জায়গায় বেশ একটু গোছানো বাংলাদেশ। চোট কাটিয়ে সাকিব আল হাসান ফেরায় দল অনেক ভারসাম্যপূর্ণ করা সম্ভব। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার যোগ দেওয়ার পর থেকে ইতিবাচক একটা আবহ দেখা যাচ্ছে দলের চারপাশে। ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মুমিনুলের কণ্ঠে সেই আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া।
“সাকিব ভাই দলে এলে সব একটু সহজ হয়। এখন পর্যন্ত উনার সবকিছু ঠিকঠাক আছে, ঠিকঠাক দেখেছি। উনি আসায় আমরা চার বোলার ও সাত ব্যাটসম্যান নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি।”
বোলার না ব্যাটসম্যান, সাকিবকে কোন কোটায় রেখেছেন অধিনায়ক, সেই ব্যাখ্যা মেলেনি। তবে সাকিবের খেলা যেমন নিশ্চিত তেমনি নিশ্চিত উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন। টাইফয়েডের জন্য ছিটকে গেছেন সাইফ হাসান। তার জায়গায় কাকে খেলানো হবে, জানাননি মুমিনুল।
“ওপেনিং কম্বিনেশন বাঁহাতি-ডানহাতি হতে পারে। দুইজন বাঁহাতিও হতে পারে। তবে বাঁহাতি-ডানহাতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে আমি-আপনি সবাই জানি, খেলাটা কঠিন হয়। আমার কাছে মনে হয় না, অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো (টেস্টের) উইকেট হবে, উইকেট দেখে যেমনটা মনে হলো।”
অধিনায়কের আভাস ঠিক হলে, অভিষেক হতে পারে তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়ের। সেক্ষেত্রে সাকিবকে জায়গা দিতে গিয়ে বাদ পড়তে পারেন একজন পেসার। টেস্টে এক পেসার নিয়ে খেলা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য খুব বিরল কিছু নয়।
তবে মুমিনুলের নেতৃত্বে জয় বেশ বিরল। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর ২০১৯ সালে হুট করে নেতৃত্ব পাওয়ার পর তিনি ১০ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এর কেবল দুটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। দুটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
“আমার কাছে টেস্ট ম্যাচে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রথম এক ঘণ্টা। আমরা যদি একটা ভালো শুরু করি, তাহলে ভালো। সবাই জানে আমাদের শক্তির জায়গা হলো ব্যাটিং।”
“ব্যাটিং শক্তিতে আমরা যদি ছয় সেশন ব্যাট করতে পারি, তাহলে ম্যাচে ফিরতে পারব। অবশ্যই (জয়ের) আশা করি। কেউ তো ম্যাচ হারার জন্য নামে না। জেতার জন্যই নামে।”
স্বাগতিকদের দুর্ভাবনার সবটা যে ব্যাটিং নিয়ে, তা নয়। বোলিং নিয়েও চিন্তা আছে। চট্টগ্রাম টেস্টে ১৪৬ ও ১৫১ রানের দুটি উদ্বোধনী জুটি গড়ে ম্যাচে বড় প্রভাব রাখেন আবিদ আলি ও আব্দুল্লাহ শফিক। দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের বোলিং মুখ থুবড়ে পড়েছে এই জুটির সামনে।
টেস্টে এই বছর বাংলাদেশের সফলতম পেসার তাসকিন আহমেদ ছিলেন না আগের টেস্টে। চোট কাটিয়ে তিনি অনুশীলনে ফিরলেও মিরপুর টেস্টে তার খেলা নিশ্চিত নয়। সম্ভবত নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট খেলতে পারেন তিনি।
সাকিব ফিরলে নিশ্চিতভাবেই দুই বিভাগেই শক্তি বাড়বে বাংলাদেশের। চ্যালেঞ্জ বাড়বে পাকিস্তানের। তবে সিরিজ জিততে এই চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে আছে পাকিস্তান। টেস্টের আগের দিন দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে শাহিন শাহ আফ্রিদি বললেন, তারা উন্মুখ শেষটা রাঙাতে।
“মোমেন্টাম খুব ভালো আছে, দলের কম্বিনেশন দারুণ। ছেলেরা প্রস্তুত দ্বিতীয় টেস্টের জন্য। অবশ্যই লড়াই করব এবং ভালোভাবে শেষ করব এবং এখান থেকে সিরিজ জিতে ফিরব।”
আফ্রিদির চাওয়া পূরণ হলে ২০১১ সালের পর সব ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ থেকে ফিরবে পাকিস্তান। যারা ২০১৫ সালের সফরে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়ার পর হেরেছিল একমাত্র টি-টোয়েন্টি। ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।
নিশ্চিতভাবেই তা চাইবে না বাংলাদেশ। হার দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্র শুরু করা বাংলাদেশ তাকিয়ে প্রথম পয়েন্টের দিকে। সেই পথে দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করতে পারে সাকিবের উপস্থিতি।